১৯৫৩ সালে নিজ বাড়ি থেকে প্লেবয় ম্যাগাজিন প্রকাশ করা থেকে শুরু করে বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রীত পত্রিকার আসন দখল করা, প্লেবয় ম্যাগাজিনের মাধ্যমে নগ্নতাকে পশ্চিমী মূলধারার প্রকাশনায় মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত করা, ম্যাগাজিনের ব্যবসা করে কোটিপতি হয়ে যাওয়া, এই সবকিছুর পেছনে ছিল হিউ হেফনারের জীবনের একটি বড় যাত্রা। তার এই ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে সাধারণ পাঠকদের বেশ আগ্রহ রয়েছে।
হিউ হেফনার ১৯২৬ সালের ৯ এপ্রিল আমেরিকার শিকাগোতে জন্মগ্রহণ করেন। সে সময়ে আমেরিকায় চলছিল প্রহিবিশন ইরা বা নিষিদ্ধ যুগ। তখন ব্যক্তি স্বাধীনতার ওপর খুব বেশি হস্তক্ষেপ করা হতো। বিশেষ করে ১৯২০ থেকে ১৯৩৩। এমনি এক সময়েই হেফনারের হাত দিয়ে প্লেবয় ম্যাগাজিনের যাত্রা শুরু। যার মাধ্যমে প্রকাশ্য নগ্নতা পশ্চিমী মূলধারার প্রকাশনায় স্থান পায়। বিশ্বব্যাপী এই প্রাপ্তবয়স্ক ম্যাগাজিন একমাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রির রেকর্ড গড়ে।
হেফনার ছিলেন বাবা-মার প্রথম সন্তান। তার একটি ছোট ভাইও ছিল। হেফনারের বাবা-মা পেশায় ছিলেন শিক্ষক। মজার ব্যাপার হলো, হেফনারের পূর্বপুরুষরা কেউই আমেরিকান ছিলেন না। মা গ্রেস ক্যারোলিন ছিলেন সুইডিশ বংশোদ্ভূত। পিতা গেন লুসিয়াস ইংরেজ। হেফনার এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন, তার পরিবার ছিল প্রচণ্ড রক্ষণশীল এবং খ্রীস্টান ধর্মে প্রবলভাবে বিশ্বাসী। হেফনার বেড়ে উঠেছিলেন শিকাগোর ইলিনয়ে। এখানে প্রথমে সায়রা ইলিমেন্টরি স্কুল, স্টেইনমেটস কলেজ এবং সবশেষে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে সাইকোলজিতে পড়াশোনা করেন এবং এই বিষয়ের উপরেই ব্যাচেলর অব আর্টস ডিগ্রী অর্জন করেন। ছাত্র অবস্থাতেই তার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে ১৯৪৪ থেকে ১৯৪৬ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্র আর্মিদের পত্রিকা মিলিটারি নিউজপেপারে কাজ করেন।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে তিনি এস্কয়ার ম্যাগাজিনে কপি রাইটার হিসেবে চাকরি শুরু করেন। কিন্তু কিছুদিন যাওয়ার পর বাঁধাধরা নিয়মের চাকরিতে তিনি বিরক্ত হয়ে ১৯৫২ সালের অক্টোবর কিংবা নবেম্বরে এই চাকরি ছেড়ে দেন। ১৯৫৩ সালে তিনি ব্যাংক থেকে ৬০০ ডলার ঋণ নেন এবং বিনিয়োগকারিদের মাধ্যমে এটিকে ৮০০০ ডলারে উন্নীত করেন। এরপর মায়ের কাছ থেকে আরও ১০০০ ডলার নিয়ে নিজ বাড়ি থেকেই প্লেবয় ম্যাগাজিনের সূচনা ঘটান। ১৯৫৩ সালের ডিসেম্বর সংখ্যা দিয়ে যাত্রা শুরু সর্বাধিক বিক্রি হওয়া ম্যাগাজিন প্লেবয়ের।
এই পত্রিকার প্রথম কভার স্টোরি করা হয়েছিল মেরিলিন মনরোকে নিয়ে। যদিও সে ইস্যুর জন্য ম্যাগাজিনের কভারে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছিল তা ছিল ১৯৪৯ সালে একটি ন্যুড ক্যালেন্ডারের জন্য তোলা মনরো একটি ছবি। কিন্তু প্রথম সংখ্যাতেই ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিলেন হেফনার। প্রথম সংখ্যা বিক্রি হয়েছিল ৫০ হাজার অধিক কপি। হেফনারের সবচেয়ে পারদর্শিতা ছিল নতুন আইডিয়া তৈরিতে। তিনি প্লেবয় পত্রিকার মাধ্যমে এমন কিছু ধারণার সূচনা করেন যা আগে কেউ ভাবেননি। এছাড়া পত্রিকার মেকআপ এবং পরিচ্ছন্ন স্টাইলে তার জুড়ি নেই। পরে এই পত্রিকার মাধ্যমেই বহু সাধারণ ব্যক্তিকে তারকায় পরিণত করেছেন হেফনার।
শুধু ম্যাগাজিনই নয় পরবর্তীতে ক্যাসিনো ও নাইটক্লাবের ব্যবসাও করেছিলেন হেফনার। যা তাকে কোটিপতির আসনে বসায়। জীবনের বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রাপ্তবয়স্ক সিনেমায় প্রযোজনার পাশপাশি অভিনয়ও করেছেন। হেফনারের ব্যক্তিজীবন আর ব্যবসায়িক জীবনের মধ্যে খুব বেশি পার্থক্য ছিল না। ১৯৪৯ সালে বিশ্ববিদ্যালয় পর্ব শেষ করে সে সময়ে ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া মিল্ড্রিড উইলিয়ামসকে বিবাহ করেন। তার সঙ্গে বিচ্ছেদ ঘটান ১৯৫৯ সালে। এরপর দ্বিতীয় বিবাহ করেন আমেরিকান মডেল ও অভিনেত্রী কিমবারলি কোনারডকে, ১৯৮৯ সালে। তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে ২০১০ সালে।
ব্যক্তিজীবনে হেফনার চার সন্তানের জনক। হেফনার বেঁচে ছিলেন ৯১ বছর। গত ২৭ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার লস এ্যাঞ্জেলসের হম্বি হিলসের বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: