ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

সেনাপ্রধানের দাবি

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরবাসিন্দা নয়, শরণার্থী সংখ্যা অতিরঞ্জিত

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গারা মিয়ানমারেরবাসিন্দা নয়, শরণার্থী সংখ্যা অতিরঞ্জিত

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক বৈঠকে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর প্রধান মিন অং হ্লাইং রোহিঙ্গা মুসলিমরা দেশটির স্থানীয় বাসিন্দা নয় বলে দাবি করেছেন। বুধবার মিয়ানমারের বৃহত্তম শহর ইয়াঙ্গুনে যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত স্কট মারসিয়েলের সঙ্গে সিনিয়র জেনারেল হ্লাইংয়ের বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয়। হ্লাইংয়ের ফেসবুক পেজে বৃহস্পতিবার সকালে পোস্ট করা এক প্রতিবেদন সূত্রে এ বৈঠকের খবর জানা গেছে। বৈঠকে হ্লাইং উত্তর রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর তার বাহিনীর অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগের অভিযোগ সম্পর্কে কিছু বলেননি এবং বাংলাদেশে পালিয়ে যাওয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা বাড়িয়ে বলার ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভূমিকা আছে বলে অভিযোগ করেছেন।-খবর চ্যানেল নিউজ এশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে জেনারেল হ্লাইং রোহিঙ্গা শরণার্থী সঙ্কট সম্পর্কে এ পর্যন্ত সবচেয়ে বিস্তারিতভাবে নিজের মনোভাব তুলে ধরেছেন। এই বৈঠকের খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত হবে এমন কথা মাথায় রেখেই তিনি এমনটি করেছেন বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের তিনি ‘বাঙালী’ বলে উল্লেখ করেন এবং সমস্যাটির জন্য ব্রিটিশ উপনিবেশবাদীদের দায়ী করেন। মারসিয়েলকে তিনি বলেন, বাঙালীদের এই দেশে মিয়ানমার নিয়ে আসেনি, উপনিবেশবাদীরা নিয়ে এসেছিল। তারা এখানকার স্থানীয় নয়, আর রেকর্ডে প্রমাণ আছে ঔপনিবেশিক আমলে তাদের রোহিঙ্গা বলা হতো না, বাঙালী বলা হতো। বৈঠকে রাখাইনে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের যে অভিযোগ উঠেছে, তা নিয়ে মন্তব্য করেননি এই জেনারেল। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ মিয়ানমারের সবচেয়ে ক্ষমতাশালী হচ্ছেন সেনাপ্রধান মিন। রাখাইনে মিয়ানমারের সেনা অভিযান ঘিরে তার অনমনীয় অবস্থানের কারণে আন্তর্জাতিক নিন্দা ও নোবেল জয়ী অং সান সুচির নেতৃত্বে দেশটির গণতান্ত্রিক যাত্রা নিয়ে এখন নানা মহলে প্রশ্ন উঠেছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মিয়ানমারে বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের উত্থান ঘটেছে। রাখাইন অঞ্চলের সামরিক অভিযান এই উদীয়মান বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদীদের কাছে বেশ জনপ্রিয় ইস্যু। এর আগে গত ১৬ সেপ্টেম্বর সেনাপ্রধান মিন অং হাইয়াং বলেছিলেন, রোহিঙ্গারা স্বীকৃতি দাবি করছে অথচ তারা কখনও মিয়ানমারের নৃগোষ্ঠী ছিল না। এটি বাঙালী ইস্যু। মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর নির্যাতনের কারণে দেশটির সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের চিন্তা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র। চলতি সপ্তাহে এ নিয়ে আলোচনা হতে পারে। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জায়েদ রাদ আল হুসেইন উত্তর রাখাইনের বাসিন্দা রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সরকারের দমনাভিযানকে ‘জাতিগত নিধন অভিযানের জ্বলন্ত উদাহরণ’ বর্ণনা করে ‘শক্তি প্রয়োগে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দেয়ার নিষ্ঠুর পরিকল্পনা’ বলে উল্লেখ করেছেন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে বৈঠকে হাইয়াং এ অভিযোগের কোন উল্লেখই করেননি বরং পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, বিদ্রোহীরা সরকারের সঙ্গে সম্পর্ক আছে এমন ৯০ জন হিন্দু ও ৩০ জন রোহিঙ্গাকে হত্যা করেছে। তিনি জানান, বিদ্রোহীরা নাগরিকত্ব যাচাইয়ের একটি কর্মসূচীর বিরোধিতা করছে, যে কর্মসূচীতে তাদের বাঙালী বলা হয়েছে, হামলার পেছনের কারণ এটাই। হামলার জন্য আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (এআরএসএ) বিদ্র্রোহীদের দায়ী করে তিনি বলেন, এআরএসএর নেতৃত্বে স্থানীয় বাঙালীরা এসব হামলা চালিয়েছে। সম্ভবত সে কারণেই নিরাপত্তাহীনবোধ করে তারা পালিয়ে গেছে। বাঙালীদের সত্যিকারের জায়গা বাংলা। সেখানে নিরাপদে থাকতে পারবে এ ধারণা থেকেই সম্ভবত সেখানে পালিয়েছে তারা। অনেক ‘বড় সংখ্যক’ বাংলাদেশে পালিয়ে গেছে এ কথা বলার মধ্যে বাড়াবাড়ি আছে এবং ‘পর্দার আড়াল থেকে গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে এসব প্রচারণা ও উস্কানি’ দেয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন তিনি।
×