ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিভিন্ন কর্মসূচীর নামে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির পাঁয়তারা

বিএনপি-জামায়াতকেসরকার উৎখাতেআইএসআইর মদদ

প্রকাশিত: ০৫:০৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

বিএনপি-জামায়াতকেসরকার উৎখাতেআইএসআইর মদদ

শংকর কুমার দে ॥ বিএনপি-জামায়াত আবার জঙ্গীদের নিয়ে মাঠে নেমেছে। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বিভিন্ন কর্মসূচীর নামে নাশকতা ও ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করাই বিএনপি-জামায়াতের উদ্দেশ্য। এর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে সহায়তা করবে পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার সময়ে গ্রেফতার হওয়া জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮ জনকে পৃথক দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই বিষয়ে নিশ্চিত হয়েছে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা। পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, পূর্ব পরিকল্পিত নীলনক্সা অনুযায়ী গত দুই দিন ধরে জামায়াত-শিবিরের ডাকা বিক্ষোভ-হরতাল ও বিএনপির বিক্ষোভ কর্মসূচীর মাধ্যমে দেশের ভেতরে নাশকতা, জ্বালাও-পোড়াও, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- চালানোর পাঁয়তারা চালানো হয়। সরকারের পতন ঘটাতে দেশের ভেতরে বিশৃঙ্খলা ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য মূলত বিশ দলীয় জোটের দুই দল বিএনপি ও জামায়াত একদিন অন্তর বিক্ষোভ ও হরতালের কর্মসূচী দেয়। কিন্তু জনগণের সাড়া না পেয়ে তাদের পূর্ব পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮ জনকে পৃথক দুই মামলায় ৫ দিন করে ১০ দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের তথ্য পেয়েছে পুলিশ। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সঙ্গে বিএনপি-জামায়াতের কানেকশন পেয়েছে গোয়েন্দারা। বিএনপি-জামায়াতের সাহায্যে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তার করানোর চেষ্টা করে আইএসআই। কিন্তু বর্তমান সরকার তা কঠোর হস্তে দমন করতে সক্ষম হয়। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার জন্য বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময়ে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফাকে মদদ দেয় পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকার বাংলাদেশের মাটি থেকে ভারতের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার শিকড় উপড়ে ফেলার পর আইএসআইয়ের ষড়যন্ত্র ভেস্তে যায়। এখন আবার মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের জঙ্গী সংগঠনে ভেড়ানোর জন্য বিএনপি-জামায়াতকে মদদ দিচ্ছে আইএসআই। আইএসআইর একটাই উদ্দেশ্য, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগের সরকারকে যে কোন মূল্যে উৎখাত করতে হবে। আর এর জন্য বিএনপি-জামায়াতের মাধ্যমে দেশে নৈরাজ্যকর ও বিশৃঙ্খলার মাধ্যমে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি করার পাঁয়তারা চালানো হচ্ছে। জামায়াত-শিবিরের গ্রেফতার হওয়া ৮ জন ছাড়াও বিভিন্ন সময়ে গ্রেফতার হওয়া নেতাকর্মী, ক্যাডারদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ধরনের তথ্য পাওয়ার পর অভিযান পরিচালনা শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। গোয়েন্দা সংস্থার এক কর্মকর্তা বলেন, নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের (জেএমবি) সঙ্গে পাকিস্তানের কূটনীতিক এবং সে দেশের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর যোগসাজশের বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া গেছে। ভারতীয় জাল মুদ্রা পাচারের সঙ্গে আইএসআইর সরাসরি সম্পৃক্ততার বিষয়েও তথ্য পেয়েছে বাংলাদেশ ও ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গী ও সন্ত্রাসী সংগঠনের অর্থায়নে বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনের মাধ্যমে বাংলাদেশকে ব্যবহার করে জাল রুপী ভারতে পাচার করছে আইএসআই। এমনকি আন্তঃদেশীয় অপরাধী চক্রের সঙ্গে তাদের যোগসাজশের তথ্যও পেয়েছেন গোয়েন্দারা। শুধু জঙ্গী অর্থায়ন নয়, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সরবরাহে তাদের যোগসূত্র রয়েছে কি-না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার অনুসন্ধানে বের হয়ে এসেছে, ২০১৪ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর শিবিরের অনেক দুর্ধর্ষ ক্যাডার জঙ্গী সংগঠন নব্য জেএমবিতে যোগ দিয়েছে। তাদের অনেকেই নব্য জেএমবিতে সামরিক কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছে। একাধিক ক্যাডার পুলিশের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহতও হয়েছে। সর্বশেষ চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত রফিকুল ইসলাম আবুর পরিবার এবং তার শ্বশুরবাড়ির লোকজন জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। বিয়ের পর তার স্ত্রী সুমাইয়া খাতুনের মাধ্যমে সে জঙ্গীবাদে জড়ায়। সে নিজেও জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এ ছাড়াও জেএমবির কোন কোন সদস্য জাল মুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত। এ জাল মুদ্রা আবার একটি পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহায়তায় সে দেশ থেকে তৈরি হয়ে আসে। এগুলো ভারতীয় জাল মুদ্রা। সে ক্ষেত্রে অনেক সময় বিশেষ দেশের গোয়েন্দা সংস্থার সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। ইতোমধ্যেই ওই পাকিস্তানের দূতাবাসের একাধিক কর্মকর্তাকে জঙ্গীবাদে জড়িত থাকার অভিযোগে বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহারও করে নেয়া হয়েছে বা ফেরত পাঠানো হয়েছে। জঙ্গীবাদে কোন কোন রাজনৈতিক দলের কারও কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে, যাদের অনেকেই জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জঙ্গী সংগঠন জেএমবির সঙ্গে আইএসআইর সম্পৃক্ততার বিষয়টি নিশ্চিত। ২০১৫ সালের নবেম্বরে ইদ্রিস শেখসহ চার জেএমবি সদস্য গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হয়েছিল। সে আইএসআইর চর হিসেবে কাজ করছিল। তার কাছ থেকে একটি স্পাই মোবাইল সেট উদ্ধার করা হয়। ওই মোবাইল সেটটি পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই সরবরাহ করেছিল। এ ঘটনায় ইদ্রিস আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেয়। তার জবানবন্দীতে উঠে আসে বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তারে ঢাকায় পাকিস্তানী হাইকমিশনের সেকেন্ড সেক্রেটারি ফারিনা আরশাদ কাজ করছেন। ইদ্রিসের সঙ্গে ফারিনার সরাসরি যোগাযোগ ছিল। ওই ঘটনায় তখন পাকিস্তন সরকার তাকে প্রত্যাহার করে নেয়। এছাড়া ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে জঙ্গী অর্থায়নে জড়িত থাকার অভিযোগে পাকিস্তান হাইকমিশনের কর্মকর্তা মাজহার খানকে বাংলাদেশ সরকার বহিষ্কার করে। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা বা কূটনীতিক নন, পাকিস্তানভিত্তিক বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলোর আদর্শভিত্তিক তৎপরতা বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ বিস্তারের চেষ্টা করছে। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা করছে আইএসআই। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গী সংগঠন লস্কর-ই-তৈয়বা, তেহরিক-ই-তালিবান ও জইশ-ই-মুহাম্মদের অনেক সদস্য দেশের গোয়েন্দাদের হাতে বিভিন্ন সময় ধরা পড়েছে। তারা এখন কোথায় আছে এ বিষয়ে বিস্তারিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সহায়তায় ভারতীয় জাল রুপীর ব্যবসার প্রসার ঘটানো হয়, যাতে অর্থনৈতিকভাবে সে দেশ পর্যুদস্ত হয়ে পড়ে। পাকিস্তানের মাটিতে ভারতের জাল নোট তৈরি করে তা পাচার করার ঘটনায় ভারত সরকার তাদের রুপী বাতিল করে নতুন করে তৈরি করে বাজারে ছাড়তে বাধ্য হয়েছে। আর এই জাল নোটের রুট হিসেবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করার জন্য জঙ্গী গোষ্ঠীগুলোকে ব্যবহার করা হয়। ভারতীয় জাল রুপীসহ কলকাতায় গ্রেফতার হয় পাকিস্তানী নাগরিক সরফরাজ। সে ঢাকার কর্ণফুলী গার্ডেন সিটির একটি ফ্ল্যাটে থাকত। পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে জাল রুপী এনে সে বাংলাদেশের রুট ব্যবহার করে ভারতে পাচার করত। তার সঙ্গে দেশীয় জঙ্গীদের যোগসাজশ ছিল। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা এবং সে দেশের জঙ্গী সংগঠন স্বর্ণ চোরাচালান, জাল মুদ্রা পাচারের মাধ্যমে বাংলাদেশী জঙ্গীদের অর্থায়ন করছে। আর এর পেছনে রয়েছে জামায়াত-শিবির। ২০১৫ সালের শেষদিকে রাজশাহীর বাগমারায় আহমদিয়া সম্প্রদায়ের মসজিদে আত্মঘাতী হামলাকারী তারেক আজিজ এবং তার সহযোগী জামালউদ্দিন শিবিরের রাজনীতি করত। হামলার সময় তারেক এবং পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে জামালউদ্দিন মারা যায়। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, ভয়ঙ্কর ও দুর্ধষ জঙ্গীদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বিভিন্ন জঙ্গী হামলার পরিকল্পনা ও প্রশিক্ষণের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের কানেকশন রয়েছে। জঙ্গী অর্থায়নের সঙ্গেও জামায়াত-শিবিরের কানেকশন পাওয়া যাচ্ছে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই মদদ দিচ্ছে জামায়াত-শিবিরকে। একাত্তরের মানবতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধের বিচারের রায়ে জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতাদের সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে ফাঁসি দেয়ার পর পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই ও পাকিস্তানের একশ্রেণীর রাজনীতি প্রকাশ্যেই বিরোধিতা করে প্রতিবাদ জানিয়েছে। এখন আবার পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর মদদে আগামীতে অনুষ্ঠিতব্য জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিশ দলীয় জোটের বিএনপি-জামায়াতকে বিভিন্ন ইস্যু তৈরি করে মাঠে নামিয়ে অস্থিতিশীলতা তৈরির পাঁয়তারা করছে। জামায়াতে ইসলামীর আমির মকবুল আহমাদসহ ৮ জনকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার পর তারা বলেছেন, বিএনপি ও জামায়াতের হরতাল ও বিক্ষোভের নামে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধনসহ দেশে অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি, অন্তর্ঘাতমূলক কার্য সম্পাদন ও জ্বালাও-পোড়াও পরিস্থিতি সৃষ্টির নীলনক্সা বাস্তবায়ন করার জন্যই তাদের গোপন বৈঠকে মিলিত হওয়ার উদ্দেশ্য।
×