ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

দীর্ঘকায় জিন্নাত গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান, পরিবার চায় চিকিৎসা

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

দীর্ঘকায় জিন্নাত গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান, পরিবার চায় চিকিৎসা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ ইতোপূর্বে সন্ধান পাওয়া বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষটি তুরস্কের সুলতান কসেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। তার চাইতে আরও ৩ ইঞ্চি বেশি লম্ব‍া মানুষটির সন্ধান মিলল কক্সবাজারের প্রত্যন্ত অঞ্চলে। বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারের রামু জিন্নাত গিনেস বুকে নাম লেখাতে চান। গিনেস বুকের তথ্যানুসারে বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা জীবিত মানুষ তুরস্কের সুলতান কসেন। তার উচ্চতা ৮ ফুট ৩ ইঞ্চি। জন্ম ১৯৮২ সালে। ২০০৯ সালের সেপ্টেম্বরে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাকে পৃথিবীর সবচেয়ে দীর্ঘকায় ব্যক্তির স্বীকৃতি দিলে রাতারাতি তারকা বনে যান কসেন ওরফে কোসেন। পিটুইটারি গ্রন্থিতে একটি টিউমারের কারণেই সুলতানের এই অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বলে ধারণা করা হয়েছে। আর এ কোসেনের মতো বা তার চাইতে ৩ ইঞ্চি বেশি লম্বা মানুষের বাস কক্সবাজারের রামুতে। অজপাড়া গাঁয়ের এ লম্বা মানুষটি রামুর গর্জনিয়া বড়বিল গ্রামের বাসিন্দা কৃষক আমির হামজার ছেলে। ১৯ বছর বয়সে জিন্নাতের উচ্চতা ৮ ফুট ৬ ইঞ্চি। পারিবারিক সূত্র জানায়, জিন্নাত আলীর বয়স যতই বাড়ছে সঙ্গে সঙ্গে তার উচ্চতাও বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে তিনি এখন অসুস্থ। গরিব পিতার ঘরে জন্ম নেয়া এত দীর্ঘকায় জিন্নাত সুখে নেই। আশা ছিল লম্বা শরীর নিয়ে একটা কিছু করে বিশ্বের দরবারে দেশের সুনাম বেশি করে ছড়িয়ে দেবেন। কিন্তু এটা সম্ভব নাও হতে পারে। কেননা তার জীবন বাঁচাতে হলে তাকে উন্নত চিকিৎসাসেবা দেয়া প্রয়োজন। ইতোপূর্বে ঢাকায় নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়েছিলেন স্থানীয় চিকিৎসকরা। জিন্নাত আলীর পিতা কৃষক আমির হামজা বলেন, আমার এ বৃদ্ধ বয়সে ঢাকা শহরে গেছি মাত্র একবার। তাও পুত্র জিন্নাতকে ডাক্তার দেখানোর জন্য। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজে নেয়ার পর ব্যয়বহুল চিকিৎসার কথা শুনে আমি দিশেহারা হয়ে যাই। আর আমার ওই অসুস্থ পুত্রের চেহারা মলিন হয়ে ওঠে। তার ধারণা জন্মে আমিতো গরিব, এত টাকা বাবা পাবেন কোথায়? টাকার অভাবে চিকিৎসা নিতে না পেরে পুত্রকে নিয়ে ফেরত আসি বাড়িতে। তখন থেকে তার অসুখটা যেন পিছু ছাড়ছেইনা। টাকার অভাবে সম্ভব হচ্ছে না জিন্নাতের চিকিৎসা করাটা। আমার ভিটেমাটি ছাড়া আর কোন অর্থ সম্পদও নেই। তারপরও যেটুকু যোগাড় করতে পারি-তা দিয়ে গ্রাম্য চিকিৎসকের পরামর্শে ছেলের জন্য ওষুধ এনে থাকি। সন্ধ্যায় ঘরে ফিরলে নাস্তাপানির চেয়ে হাতে ওষুধ দেখলে খুব খুশি হয় ছেলেটি। এতে বোঝা গেল তার (জিন্নাত) বাঁচার আগ্রহ আছে। কিন্তু তাকে সুস্থ করে তোলার জন্য আমার কোন উপায় নেই। বাস্তবতা যেটি আল্লাহ্ আমাকে বিশ্বের রেকর্ড সৃষ্টি সন্তান দিয়েছেন, সে তুলনায় অর্থকড়ি নেই। তার শারীরিক অবস্থা দিন দিন অবনতির দিকে যাচ্ছে। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার দৈনিক জনকণ্ঠে ‘কক্সবাজারে বিশ্বের সবচেয়ে লম্বা মানুষটি অসুস্থ’ শীর্ষক সংবাদ প্রকাশিত হলে দানবীর ব্যক্তিরা জিন্নাত আলীকে দেখতে যান। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন অনেকে। তবে গর্ভধারিণী মা শাহপুরি বেগম জানান, আল্লাহ্র হুকুমেই ছেলেটি এত লম্বা। বিভিন্ন রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছে বর্তমানে তেমন একটা নড়াচড়া করতে পারেনা। এমনকি কোন কাজও করতে পারছে না। এক পা আরেক পায়ের চেয়ে দুই ইঞ্চি খাটো হয়ে যাচ্ছে। তিনি উপস্থিত দানশীল ব্যক্তিবর্গকে বলেন, টাকা নিয়ে কি করব-ছেলেটির চিকিৎসার ব্যবস্থা করুন। স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল ইসলাম বলেন, ছেলেটির বয়স কম হলেও সে অনেক লম্বা হয়ে গেছে। পরিবারের পক্ষে তার শরীরের দুরবস্থা নিয়ে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব হচ্ছে না। তার ভরণ-পোষণ ও চিকিৎসাসেবা সরকারীভাবে ব্যবস্থা করা দরকার। এলাকাবাসীও মানুষটিকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য চিকিৎসার ব্যবস্থা নিতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
×