ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপ

তফসিল ঘোষণার আগেইসংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তাব সিপিবির

প্রকাশিত: ০৫:০২, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

তফসিল ঘোষণার আগেইসংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তাব সিপিবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর মধ্যে সমতা আনতে তফসিল ঘোষণার আগেই সংসদ ভেঙ্গে দেয়ার প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি)। এছাড়াও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কর্মকান্ড ইসির অধীনে পরিচালিত করতে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন আনার কথাও বলছে তারা। নির্বাচনকালীন সরকারের কর্তৃত্বকে সাংবিধানিকভাবে সঙ্কুচিত করে তার অন্তর্বর্তীকালীন কাজ তত্ত্বাবধানমূলক ও অত্যাবশ্যক রুটিন কিছু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে দলটির পক্ষ থেকে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়ে সিপিবির পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রয়োজনে যে কোন রাষ্ট্রীয় বাহিনী নিয়োগের ক্ষেত্রে পূর্ণ স্বাধীনতা, সংরক্ষিত নারী আসন ১শ’তে উন্নীত করাসহ ১৭ প্রস্তাবনা তুলে ধরা হয়েছে। বেলা ১১টায় সিপিবির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসির সংলাপে অংশ নেয়। প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা আগারগাঁও নির্বাচন ভবনের সম্মেলনে কক্ষে অনুষ্ঠিত সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। সংলাপ শেষে দলের সভাপতি মুজাহিদল ইসলাম সেলিম সাংবাদিকদের বলেন, নির্বাচন এখন প্রহসনে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে বেরিয়ে আসতে নির্বাচনী ব্যবস্থার আমূল সংস্কার করতে হবে। সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরিতে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। তত্ত্বাবধায়ক বা সহায়ক বা কোন সরকারের অধীনে নয়, নির্বাচন কমিশনের অধীনেই নির্বাচন করতে হবে। তিনি বলেন, নির্বাচন ব্যবস্থার ওপর জনগণ আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। ঘটনা আজ এমন অবস্থায় এসে উপনীত হয়েছে যে, চলতি নির্বাচনী ব্যবস্থাকে মৌলিকভাবে ঢেলে সাজানো ছাড়া তার ওপর মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে না। নির্বাচনকে অবাধ, নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু করার জন্য ইসির কাছে বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টি বিভিন্ন সুপারিশ তুলে ধরেছে। ইসির সঙ্গে সংলাপে সিপিবির পক্ষ থেকে নির্বাচন নিয়ে যেসব প্রস্তাব দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে তফসিল ঘোষণার ঠিক আগে বিদ্যমান জাতীয় সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যে সমতা বিধান করতে হবে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সব কর্মকা- পরিচালিত হবে ইসির অধীনে, কোন সরকারের অধীনে নয়। এ উদ্দেশে সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংশোধন করতে হবে। নির্বাচনের সময় সরকারের কর্তৃত্বকে সাংবিধানিকভাবে সঙ্কুচিত করে তত্ত্বাবধানমূলক ও অত্যাবশ্যক রুটিন কিছু কাজের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে। যতদিন সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু না হচ্ছে ততদিন আরও তিনটি ব্যবস্থা রাখার সুপারিশ করে দলটি। সংরক্ষিত নারী আসনের সংখ্যা ১০০ তে উন্নীত ও সরাসরি ভোট করতে হবে। নির্বাচিত প্রতিনিধি দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ প্রতিনিধিকে প্রত্যাহারের বিধান করতে হবে, না ভোটের বিধান যুক্ত করতে হবে। এছাড়া অনলাইনে মনোনয়ন জমা দেয়ার ব্যবস্থা করা, স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ১ শতাংশ ভোটারের স্বাক্ষর তালিকা জমার বিধান বাতিল করা, জাতীয়ভিত্তিক সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা চালু করা, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজনৈতিক দলের মনোনীত প্রার্থী হতে হলে কোন ব্যক্তিকে কমপক্ষে ৫ বছর রাজনৈতিক দলের সক্রিয় সদস্য থাকা, নির্বাচনে টাকার খেলা বন্ধ করা, সন্ত্রাস, পেশীশক্তির প্রভাব ও দুর্বৃত্তমুক্ত করা, নির্বাচনে ধর্ম, সাম্প্রদায়িকতা ও আঞ্চলিকতার অপব্যবহার রোধ করা, সকলের সমসুযোগ নিশ্চিত করা, নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণে ও নির্বাচন পরিচালনায় স্বচ্ছতা বিধান করা, নির্বাচন কমিশন, নির্বাচনী আইন ও বিধির সংস্কার করা, নির্বাচনী বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য স্বতন্ত্র আদালত গঠন এবং ‘না’ ভোটের বিধান চালু করার প্রস্তবার দিয়েছে সিপিবি। সংলাপে দলটির অন্যান্যের মধ্যে সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম, সহকারী সাধারণ সম্পাদক কাজী সাজ্জাদ জহির চন্দন, সভাপতিম-লীর সদস্য লক্ষ্মী চক্রবর্তী, রফিকুজ্জামান, মিহির ঘোষ, আব্দুল্লাহ ক্বাফী রতন, অনিরুদ্ধ দাশ, কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক আহসান হাবিব, রুহিন হোসেন প্রিন্স ও জলি তালুকদার উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ইসির ধারাবাহিক সংলাপে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ৩৩ দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছেন। আগামী রবিবার বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপি এবং ১৮ অক্টোবর বুধবার ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। এখন পর্যন্ত ৩৩ দলের সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন হলেও বড় দুটি রাজনৈতিক দলের দিকে দেশের জনগণের নজর রয়েছে। জানা গেছে, বিএনপির পক্ষ থেকে সহায়ক সরকারের ওপরই বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। এ বিষয়ে ইসির এখতিয়ার না থাকলেও জনরগণের দৃষ্টি কাড়তেই তারা ইসির সংলাপে সহায়ক সরকারের ওপর জোর দেবে বলে জানা গেছে।
×