ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা ও হুমকিতে ছাত্রীর আত্মহত্যা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা ও হুমকিতে ছাত্রীর আত্মহত্যা

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ তেঁতুলিয়ায় ধর্ষণের অপমান সহ্য করতে না পেরে রহিমা আক্তার সোনিয়া নামে নবম শ্রেণীর এক মেধাবী শিক্ষার্থী গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে মর্মে অভিযোগ উঠেছে। ধর্ষণের ধারণকৃত ভিডিও সামাজিক প্রচার মাধ্যম ফেসবুকসহ অনলাইনে ছেড়ে দেয়ারও ভয় দেখানো হয়। ধর্ষিত স্কুলছাত্রী সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা ও অপমানে আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। ঘটনাটি মঙ্গলবার তেঁতুলিয়া উপজেলা সদরের কালারাম জোত গ্রামে ঘটেছে। পুলিশ ধর্ষিত স্কুলছাত্রীর লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্ত শেষে বুধবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় তেঁতুলিয়া থানায় ইউডি মামলা হয়েছে। তবে, স্কুলছাত্রীর পরিবারের পক্ষ থেকে দুই ধর্ষকের নামে লিখিত অভিযোগ করা হলেও বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টায় পর্যন্ত মামলা হিসেবে রেকর্ড করা হয়নি। জানা যায়, তেঁতুলিয়া কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা স্কুল এ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণীর মেধাবী শিক্ষার্থী ও একই উপজেলার কালারাম জোত গ্রামের পাথর শ্রমিক জাহেরুল ইসলামের কন্যা রহিমা আক্তার সোনিয়া।প্রায় তিন মাস আগে অসুস্থ মায়ের ওষুধ নিয়ে যাওয়ার কথা বলে তেঁতুলিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গেলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ইমার্জেন্সি এটেন্ডেন্ট ও তেঁতুলিয়া বাজারের রাজন ফার্মেসির মালিক মনসুর আলী রাজন স্কুল ছাত্রী সোনিয়াকে তার দোকানে নিয়ে যায়। সেখান থেকে বাসায় ওষুধ আছে বলে সোনিয়াকে মোটরসাইকেলে উপজেলা শহরে আতিক নামের এক বন্ধুর বাসায় নিয়ে যায়। বন্ধুর স্ত্রী না থাকায় রাজন সোনিয়াকে ঘরের ভেতরে ধর্ষণ করে এবং সেই ধর্ষণের ভিডিও চিত্র রাজনের বন্ধু মোবাইল ফোনে ধারণ করে। এভাবে পালাক্রমে দুই বন্ধু সোনিয়াকে ধর্ষণ করে। ঘটনাটি কাউকে জানালে বা আইনের আশ্রয় নিলে ফেসবুক ও ইন্টারনেটে ভিডিও ফুটেজটি ছেড়ে দেয়া হবে মর্মে ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ক্রমাগত সোনিয়াকে ধর্ষণ করতে থাকে। সম্ভ্রম হারানোর অপমান সহ্য করতে না পেরে গত ৯ অক্টোবর সোনিয়া ঘটনাটি তার মা ও মামাকে জানায়। সোনিয়ার মা সেলিনা বেগম ও মামা ফারুক ধর্ষকদের সঙ্গে কথা বলে। বিষয়টি ফাঁস করে দেয়ায় রাজন ও আতিক মোবাইল ফোনে সোনিয়াকে ফেসবুকসহ ইন্টারনেটে ধর্ষণের ভিডিও ফুটেজটি প্রচারের ভয় দেখায়। অবশেষে পরদিন মঙ্গলবার বাড়ি থেকে কোচিংয়ে যাওয়ার কথা বলে সোনিয়া বের হয়ে অর্ধেক রাস্তা থেকে আবার বাড়ি ফিরে এসে আত্মহত্যা করে। ঘটনার পর পরই দুই ধর্ষক গা ঢাকা দেয়। মৃত সোনিয়ার মামা ফারুক হোসেন বলেন, সোনিয়া আত্মহত্যা করার আগের দিন সোমবার আমার বাসায় এসে ঘটনাটি বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। আমি তাকে সান্ত¦না দেই তার পরও সে সম্ভ্রম হারানোর লজ্জা, অপমান ও ক্রমাগত হুমকিতে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। আমি এই খুনী-ধর্ষক রাজন এবং আতিকের বিচার চাই।
×