ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টিভঙ্গি

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও নিরাপত্তা পরিষদের দৃষ্টিভঙ্গি

জাতিসংঘ সনদ (টঘ ঈযধৎঃবৎ), মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণা (টউঐজ), ম্যাগনাকার্টা, বিল অব রাইটস, পিটিশন অব রাইটস, আমেরিকার স্বাধীনতার ঘোষণা, আফ্রিকান চার্টার ইত্যাদির মতো যত মানব-সৃষ্ট দলিল তৈরি হয়েছে সেগুলোর মাধ্যমে মানব জাতির শান্তি ও নিরাপত্তাকে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে। ধর্মযুদ্ধ, বিশ্বয্দ্ধু, গৃহযুদ্ধ প্রভৃতি যত যুদ্ধ হয়েছে সবগুলোই গণহত্যা, জীবন্ত পুড়িয়ে হত্যা, জীবন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলে হত্যা, ধর্ষণ ও হত্যা, বর্বরোচিত নিপীড়ন, নির্যাতন, জ্বালান-পোড়ান, দেশ থেকে বিতাড়নের মতো মানবতাবিরোধী, মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী ও আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্ম দিয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী ঐতিহাসিকভাবে আরাকানিজ। জানা যায়, এই জনগোষ্ঠী ৮ম শতাব্দী থেকে চিহ্নিত হলেও এবং মিয়ানমারের ৮ম ‘ন্যাশনাল রেস’ হওয়া সত্ত্বেও মিয়ানমার সরকার আইন দ্বারা তাদেরকে স্বীকৃতি দেয়নি। এমনকি ১৯৮২ সালে একটি ব্ল্যাক ল’ এর মাধ্যমে তাদের নাগরিকত্ব হরণ করে নেয়। আরাকানের এসব রোহিঙ্গার চলাফেরার স্বাধীনতা, রাষ্ট্রীয় শিক্ষা ও সিভিল সার্ভিস থেকে বঞ্চিত করে রেখেছে সে দেশের সরকার। আরাকান রাজ্যের প্রাচীন এ জনগোষ্ঠীর প্রতি এ ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ মিয়ানমার সরকার ও সে দেশের সংখ্যাগুরু উগ্র সদস্যদের জাতিগত, গোষ্ঠীগত, ধর্মগত সংখ্যাতাত্ত্বিক বিদ্বেষ মানবতাবিদ্বেষ ছাড়া কিছু নয়। আউং সান সুচিও ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে বিশ্বব্যাপী সমালোচনার তোপে পড়েছেন। বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে জানা যায় ১৯৭৭, ১৯৯১-১৯৯২ এবং ২০১৬-২০১৭ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে প্রায় ১০ লাখ। তবে মিয়ানমার থেকে পারসিকিউটেড হয়ে শুধু বাংলাদেশেই নয় অন্যান্য দেশে যেমন সৌদি আরব, ভারত, শ্রীলঙ্কা, পাপুয়া নিউগিনিসহ অন্য অনেক দেশেই প্রাণ বাঁচাতে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ ২০১৩ সালে বলেন, জড়যরহমুধং ধৎব ঃযব সড়ংঃ ঢ়বৎংবপঁঃবফ ঢ়বড়ঢ়ষব ড়ভ ঃযব ড়িৎষফ. গত এক মাসে মিয়ানমার থেকে ১৩০০-এর উপরে শিশু পিতা-মাতা ছাড়া অন্য মানুষের সঙ্গে বাংলাদেশে এসেছে। ৬০ হাজারের বেশি নারী ধর্ষণের শিকার হয়ে এসেছে। তারা জঘন্য বর্বরোচিত, পৈশাচিক ও নৃশংসতার শিকার হয়েছে। এসব নির্যাতনের ঘটনা গত এক মাসের হঠাৎ কোন বিদ্বেষের ফল নয়, হাজার বছরের পুরনো বিদ্বেষ। আনান কমিশনের রিপোর্ট দাখিলের পরই রোহিঙ্গা ‘আরসা’ বাহিনী কর্তৃক মিয়ানমারের ৩০টি পুলিশ ফাঁড়ি ও ১টি সেনা ছাউনিতে একযোগে সন্ত্রাসী হামলার ও ১৭ জনের হত্যার জের হিসেবে আরাকানিদের বীভৎস, নোংরা, অবর্ণনীয় হত্যা ও নির্যাতন করে দেশ থেকে বের করে দেয়ার মতো হিংসাত্মক ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে মিয়ানমার সরকার। একজনের অপরাধে নিরপরাধ অন্যজন শাস্তি পাবে এটা কোন নীতি নয়। যে গোষ্ঠী অপরাধী তার বিচার ও শাস্তি পৃথিবীর সমস্ত লিগ্যাল সিস্টেমই স্বীকার করে। আন্তর্জাতিক আইনবিদ জে জি স্ট্রার্ক বলেছেন, ‘সভ্য জাতির প্রত্যাশা হচ্ছে কোন অপরাধীকে শাস্তিবিহীন যেতে দেয়া উচিত নয়।’ তাহলে অপরাধীদের শাস্তি না দিয়ে বরং তাদের রক্ষার জন্য দেশী-বিদেশী রাজনীতি ও চক্রান্ত যখন সৃষ্টি হয় তখন কম বেশি কোন জাতিই সভ্য বলে দাবি করতে পারে না। আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, মানব জাতির আধুনিক যুগে এসেও নিরীহ নিরপরাধ সাধারণ বেসামরিক মানবগোষ্ঠী কিংবা জাতি গোষ্ঠীকে হাজার বছরের পুরনো বাপ-দাদার ভিটা-মাটিতে নিরাপদে নাগরিক অধিকারটুকু নিয়ে বেঁচে থাকার পরিবেশটুকু নিশ্চিত করতে পারছে না বিশ্বসংঘ নিজেও। বিশ্বসংঘের নিরাপত্তা পরিষদও মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে জীবনের অধিকার, চলাফেরার অধিকার, জীবিকার অধিকার, নাগরিক অধিকার, শিক্ষা, চিকিৎসা, খাদ্য-বস্ত্র, বাসস্থানের অধিকার, আইনের সমান আশ্রয় লাভের মানবাধিকার ও মানবিক অস্তিত্ব ও মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় অনিচ্ছুক ও নীরব। তাহলে কোথায় আশ্রয় খুঁজে পাবে বর্তমান মানব জাতির বিপন্ন, দুর্দশাগ্রস্ত অসহায় গোষ্ঠী? নাকি বাংলাদেশে রাখাইন রাজ্যের জনগোষ্ঠী এসে বাংলাদেশের মানুষের জীবন-জীবিকা, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনকে হুমকির মুখে ফেলবে এবং বাংলাদেশের সার্বিক ক্রমবর্ধমান উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে এটিও চিন্তার বিষয়। বিশ্ব সম্প্রদায় মিয়ানমারের স্বার্থ গোপনে লোকচক্ষুর অন্তরালে রক্ষা করে বাংলাদেশকে পেছনের দিকে টেনে ধরার কূটনৈতিক চাল চালছেন কি-না তাও দেখার বিষয়। রোহিঙ্গাদের প্রতি নির্যাতন বন্ধ না করার কার্যকরী কোন পদক্ষেপ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ গ্রহণ না করার অর্থ কি তাহলে মিয়ানমারে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন সংঘটিত হয়নি? রোহিঙ্গারা কি স্টেটলেস পারসন ও রেফুজি নন? বাংলাদেশের মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় ল্যান্ড মাইন পূঁতে রেখে মিয়ানমার কি স্টেট রেসপনসিবিলিটি দেখাতে পারছে? বাংলাদেশ কি রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিতে আন্তর্জাতিক আইনে দায়বদ্ধ? এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই সামনে চলে আসে। তাহলে জাতিসংঘের উদ্দেশ্য কি? নিরাপত্তা পরিষদের কাজ কি? সর্বোপরি রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশ সরকারের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি যৌক্তিক কি না বা কতটুকু পর্যন্ত যৌক্তিক তাও ভেবে দেখার বিষয়। শেষ পর্যন্ত রোহিঙ্গারা কি পৃথিবীর ভাসমান জাতিগোষ্ঠী, জনগোষ্ঠী হয়েই থাকবে? এর সমাধান কে করবে? দ্য ইউনাইটেড নেশনস জেনোসাইড কনভেনশন, ১৯৪৮ গণহত্যার সংজ্ঞা দিয়েছেন এভাবে : ধপঃং পড়সসরঃঃবফ রিঃয রহঃবহঃ ঃড় ফবংঃৎড়ু, রহ যিড়ষব ড়ৎ রহ ঢ়ধৎঃ, ধ হধঃরড়হধষ, বঃযহরপ, ৎধপরধষ ড়ৎ ৎবষরমরড়ঁং মৎড়ঁঢ়.” এ সংজ্ঞার আলোকে অবশ্যই আমাদের বুঝতে দেরি হবে না যে মিয়ানমারের আরাকানে গণহত্যা চলছে। মানুষের সহজাত ও অহস্তান্তরযোগ্য অধিকারগুলোই মানবাধিকার। বিশ্ব সম্প্রদায় নিশ্চয় দেখতে পাচ্ছেন যে, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জীবনের অধিকার, নিরাপত্তা, চলাফেরার, জীবিকা অন্বেষণের অধিকার অর্থাৎ মানবাধিকারগুলো আরাকানে মিয়ানমার সরকার লঙ্ঘন করেই চলেছেন। আরাকানিজ রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত অত্যাচার, নারী ধর্ষণ, নিপীড়নে বিশ্ব মানব সম্প্রদায়ের কমন স্বার্থ বা মানবতার স্বার্থে বা মৌল স্বার্থে আঘাত এসেছে যা আন্তর্জাতিক অপরাধের জন্ম দিয়েছে। শান্তি ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ ‘আন্তর্জাতিক অপরাধ’ বলে আন্তর্জাতিক আইনে স্বীকৃত। আন্তর্জাতিক শান্তি ভঙ্গের অপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ সবচেয়ে বড় অপরাধ। আন্তর্জাতিক অপরাধের বৈশিষ্ট্য হলো পৃথিবীর যে কোন দেশই তার বিচার করতে পারে। ঞযব ঈড়হাবহঃরড়হ জবষধঃরহম ঃড় ঃযব ঝঃধঃঁং ড়ভ ঝঃধঃবষবংং চবৎংড়হ, ১৯৫৪ (যা কার্যকর হয়েছে ১৯৬০ সালে)-এ ‘স্টেটলেস পারসন’-কে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ধ ঢ়বৎংড়হ যিড় রং হড়ঃ পড়হংরফবৎবফ ধ হধঃরড়হধষ নু ধহু ংঃধঃব ঁহফবৎ ঃযব ড়ঢ়বৎধঃরড়হ ড়ভ রঃং ষধি হিসেবে। অর্থাৎ যে ব্যক্তি কোন রাষ্ট্রের আইনের দ্বারা নাগরিক হিসেবে স্বীকৃত নয় সে ব্যক্তি স্টেটলেস পারসন। এ সংজ্ঞা থেকে স্পষ্ট যে, যেহেতু মিয়ানমারে আরাকানিজ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর নাগরিকত্ব ১৯৮২ সালে সে দেশের সামরিক সরকার হরণ করে নিয়েছে এবং এখন পর্যন্ত স্বীকৃতি দেয়নি সেহেতু তারা (রোহিঙ্গা) স্টেটলেস পারসন বা রাষ্ট্রহীন ব্যক্তি। আবার ১৯৫১ সালের শরণার্থীর সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, শরণার্থী হচ্ছে এমন কোন ব্যক্তি যে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা বা বিশেষ কোন গোষ্ঠীর সদস্য হবার কারণে বা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে নিপীড়িত হওয়ার ভয়ে নিজ রাষ্ট্রের বাইরে অবস্থান করছেন এবং নিজ রাষ্ট্রের সহায়তা গ্রহণ করতে পারছেন না বা নিপীড়নের ভয়ে নিজ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা গ্রহণে ইচ্ছুক নন; অথবা যে জাতীয়তাবিহীন ব্যক্তি তার পূর্বের আবাস-রাষ্ট্রে ফিরে যেতে ইচ্ছুক নন। এ থেকেও বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, মিয়ানমারের রোহিঙ্গারা শরণার্থী। এ কনভেনশনের ৩৩ ধারায় বলা হয়েছে, কোন পক্ষ রাষ্ট্র কোন শরণার্থীকে এমনভাবে বহিষ্কার বা অন্য রাষ্ট্রের সীমানায় ফেরত পাঠাবে না যেখানে বর্ণ, ধর্ম, জাতীয়তা, কোন নির্দিষ্ট সামাজিক গোষ্ঠীর সদস্যতা বা রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তার জীবন বা স্বাধীনতা হুমকির সম্মুখীন হতে পারে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এ ১৯৫১ সালের সংশ্লিষ্ট কনভেনশনের পক্ষ রাষ্ট্র নয়। অর্থাৎ বাংলাদেশ উক্ত চুক্তি দ্বারা বাধ্য নয়। অর্থাৎ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আইনে বাধ্য নয় এবং দেশের সীমান্ত থেকে মিয়ানমারে ফেরত পাঠালেও রাষ্ট্রীয় দায়ের সৃষ্টি হয় না। ১৯৬৬ সালের অংরধহ অভৎরপধহ খবমধষ ঈড়হংঁষঃধঃরাব ঈড়সসরঃঃবব, (যাতে বাংলাদেশ একটি সদস্য রাষ্ট্র) হড়হ-ৎবভড়ঁষসবহঃ ঢ়ৎরহপরঢ়ষব অর্থাৎ ফেরত না পাঠানো নীতি (এটি ব্যাঙ্কক নীতি নামে পরিচিত)-কে প্রতিষ্ঠা দিয়েছে। তবে এ নীতির দুটি ব্যতিক্রম দিক রয়েছে যার অধীনে শরণার্থীদের ফেরত পাঠানো স্বীকৃত হয়েছে। এক. আশ্রয় দানকারী রাষ্ট্রের নিকট শরণার্থীদের আগমন ‘ংবৎরড়ঁং ঃযৎবধঃ’ বলে যেক্ষেত্রে গণ্য হয়। দুই. যেক্ষেত্রে শরণার্থীদের দ্বারা চলমান প্রমাণিত মারাত্মক ফৌজদারি অপরাধ সংঘটনের রেকর্ড রয়েছে। উল্লেখ্য, ঞযব ঈড়হাবহঃরড়হ ড়হ ঃযব চৎবাবহঃরড়হ ধহফ চঁহরংযসবহঃ ড়ভ ঃযব ঈৎরসব ড়ভ এবহড়পরফব বাংলাদেশ রেকটিফাই করেছে ১৯৯৮ সালের ৫ অক্টোবর। তবে প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয় মিয়ানমার এ জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষর করেছে ১৯৪৯ সালে এবং রেটিফিকেশন দিয়েছে ১৯৫৬ সালে। এভাবে দেখা যায়, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও অন্যান্য যেসব রাষ্ট্র এ জেনোসাইড কনভেনশনে স্বাক্ষর ও রোটিফিকেশন দিয়েছে তারা আন্তর্জাতিক আইনে গণহত্যা বন্ধে দায়বদ্ধ। বাংলাদেশের ১৬ কোটি জনসংখ্যার সঙ্গে রোহিঙ্গাদের যোগ হওয়া জনজীবনের জন্য, রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য হুমকি। বাংলাদেশ সরকার মিয়ানমারে সব রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠালেও বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের দায়ে দায়ী হতে হবে না। যে কোন রাষ্ট্রের কর্তব্য রয়েছে সীমান্ত অঞ্চলকে সেইফ এবং সিকিউরড রাখা। যেহেতু মিয়ানমার সীমান্তের শূন্য রেখায় ল্যান্ড মাইন পুঁতে রেখেছে সেহেতু আন্তর্জাতিক আইনও লঙ্ঘন করছে। মিয়ানমার স্টেট রেসপনসিবিলিটির দায়েও দায়বদ্ধ। আমরা জানি বিশ্ব শান্তি, নিরাপত্তা রক্ষা এবং এ উদ্দেশে শান্তি ভঙ্গের হুমকি নিবারণ ও দূরীকরণের জন্য এবং আক্রমণ অথবা অন্যান্য শান্তি ভঙ্গের কার্যকলাপ দমনের জন্য কার্যকর যৌথ কর্মপন্থা গ্রহণপূর্বক আন্তর্জাতিক বিরোধ নিষ্পত্তি করা এবং শান্তিভঙ্গের আশাঙ্কাপূর্ণ পরিস্থিতি নিষ্পত্তি বা সমাধান করা আন্তর্জাতিক আইনের উদ্দেশ্য। জাতিসংঘের একমাত্র নিরাপত্তা পরিষদই পারে এমন সিদ্ধান্ত নিতে যা সনদ অনুযায়ী সদস্য রাষ্ট্রগুলো পালনে বাধ্য। কেবল যথার্থ মানবতা, মায়া-মমতা ও অন্তরাত্মা দিয়ে নির্যাতন বন্ধে, নারী-শিশু আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার জীবন ও সম্ভ্রম-মর্যাদা রক্ষার কার্যকরী মানবতাবাদী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি রাজনীতি দেখেননি, তিনি নিজ দেশের ভূখ-ে নিজের জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করেও সবাই খাদ্য ভাগাভাগি করে খাওয়ার কথাও ব্যক্ত করেছেন। রোহিঙ্গাদের মমতায় মায়ের বুকে ঠাঁই দিয়েছেন। এরকম বিপদে এরকম সাহায্য সহযোগিতা ও নিরাপত্তা দিয়ে কক্সবাজার, টেকনাফ, উখিয়া ইত্যাদি জায়গায় উপচেপড়া রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশী জনগণের জনাকীর্ণ পরিস্থিতি ও ভয়াবহ পরিস্থিতির প্রোটোকল দিয়েছেন, রোহিঙ্গাদের জন্য নিরাপত্তা জোন তৈরি করে দিয়েছেন। এটি অত্যন্ত যুক্তিবাদী ও মানবতাবাদী দর্শন ভিন্ন অন্য কিছু নয়। মিয়ানমারের রোহিঙ্গাদের প্রতি জাতিসংঘ ও নিরাপত্তা পরিষদ কার্যকরী মানবতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গি প্রকাশ না করলেও পার্শ্ববর্তী প্রতিবেশী দেশের সরকার প্রধান হয়ে, প্রধানমন্ত্রী হয়ে নিজ দেশের বিভিন্ন প্রতিকূল অবস্থার মধ্য থেকেও যে উদার গণতান্ত্রিক মানবিক মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল। লেখক : অধ্যাপক, আইন বিভাগ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া
×