ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাণিজ্য সহজীকরণ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ১৩ অক্টোবর ২০১৭

বাণিজ্য সহজীকরণ

বাণিজ্য ব্যবস্থায় যদি থাকে জটিলতা তবে তার বিস্তার সহজতর হয় না। বাড়ে সীমাবদ্ধতা। বিশ্ব বাণিজ্যের দরজা খোলা হয়ে পড়ে দুষ্কর। বাণিজ্যের প্রসার সঙ্কুচিত হয়ে পড়ে, যখন এ দফতর ওই দফতর দৌড়াতেই ব্যয় হয় শ্রম, সময় ও অর্থ। তাই বাণিজ্য ক্ষেত্রকে জটিলতামুক্ত করা অতীব জরুরী। বাংলাদেশ এই অবস্থান থেকে সরে এসেছে। যার ফলে বাণিজ্য সহজীকরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। অনেক দেশের চেয়ে শীর্ষে অবস্থান নিচ্ছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা ‘ট্রেড ফ্যাসিলিটেশন এ্যাগ্রিমেন্ট’ বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তি কার্যকরে নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এই চুক্তির মূল লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ব বাণিজ্যের প্রক্রিয়াগুলো সহজ করে সময় কমানো ও ব্যয় সাশ্রয়ী করা। গত ফেব্রুয়ারি বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা বা ডব্লিউটিওর সদস্য দেশগুলো যার যার সীমান্তে আমদানি ও রফতানির পণ্যসমূহ দ্রুত ছাড় করার জন্য অভিন্ন কিছু পদক্ষেপ নিতে সম্মত হয়েছে এই চুক্তির মাধ্যমে। এই চুক্তিতে নির্ধারিত আটত্রিশটি পদক্ষেপের অনেকগুলোই ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সম্পন্ন করেছে। যার অংশ হিসেবে দেশে ইতোমধ্যে ট্রেড পোর্টাল চালু হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের বাণিজ্য বিষয়ক যাবতীয় তথ্য, বিধিবিধান ও প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা সম্ভব। বাণিজ্য সহজীকরণের মূল সূত্র হচ্ছে অনলাইনভিত্তিক ইলেক্ট্রনিক কার্যক্রম। তবে তা যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য যে কারিগরি দক্ষতা ও কুশলতা প্রয়োজন বাংলাদেশ এ ক্ষেত্রে অনেক দেশের চেয়েই এগিয়ে আছে। যেহেতু তথ্যপ্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন মানবসম্পদ দেশে দ্রুত গড়ে উঠছে, যা এই খাতকে এগিয়ে নিতে সহায়ক বলা যায়। ১৬৪টি সদস্য দেশের মধ্যে সম্পাদিত চুক্তির রূপায়ণে সব দেশ সমানতালে এগিয়ে যেতে পারছে না নানাবিধ প্রতিবন্ধকতার কারণে। বাংলাদেশ সব প্রতিবন্ধকতা ভেঙ্গে এগিয়ে যাওয়ার কাজটি করছে নিরলসভাবেই। পণ্য আমদানি-রফতানি ও স্থানান্তরের যাবতীয় দলিলপত্র ইলেক্ট্রনিকভাবে প্রস্তুত এবং যাচাই করার ব্যবস্থা রয়েছে। সীমান্তে পণ্য খালাসকালে কম্পিউটারের পর্দায় যাবতীয় তথ্য দলিল তাৎক্ষণিকভাবে দেখা ও যাচাই করা যাবে। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ পরস্পরের সঙ্গে অনলাইনে যোগাযোগ রক্ষা ও দলিলপত্র তাৎক্ষণিকভাবে বিনিময় করতে পারবে। ফলে ব্যবসায়ীদের সময় ও খরচ বাঁচবে। বন্ধ হবে অবৈধ আর্থিক লেনদেন। আবার বাণিজ্য বিষয়ক যে কোন তথ্য-উপাত্ত সহজেই মিলবে অনলাইনে। ১৯৯৫ সালে কার্যক্রম শুরুর পর বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার একুশ বছরের অগ্রপথে বাণিজ্য সহজীকরণ চুক্তিটিই হচ্ছে প্রথম বৈশ্বিক চুক্তি। ২০১৪ সালে সদস্য দেশগুলো এই চুক্তিতে সিলমোহর দেয়। শুরুতে বেশিরভাগ দেশেই ইলেক্ট্রনিক লেনদেন বিষয়টি না থাকায় কার্যক্রমটি এগুতে পারেনি। পর্যায়ক্রমে সে অবস্থা তৈরি হয় এবং ২০১৩ সালে এই চুক্তি অনুমোদিত হয়। বাংলাদেশ গোড়ার দিকে এই চুক্তি অনুসমর্থন না করে অপেক্ষার নীতি অবলম্বন করেছিল। ২০১৫ সালে এসে অনুসমর্থনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে আর ২০১৬ সালে ৯৪তম সদস্য ও ১২তম উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে চুক্তি অনুসমর্থন করে। তারপর থেকেই দ্রুত বাণিজ্য সহজীকরণ প্রক্রিয়াগুলো সচল করে আসছে। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশ এখন কাগজবিহীন বাণিজ্যে অবদান রাখার ক্ষেত্রে সম্পূর্ণ তৈরি রয়েছে। বাংলাদেশ তাই প্রথম দেশ হিসেবে মাসখানেক আগে ইউএন এসকাপের অধীন ‘ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন ফ্যাসিলিটেশন অব ক্রস বর্ডার পেপারলেস ট্রেড ইন এশিয়া এ্যান্ড দি প্যাসিফিক’ চুক্তি সই করেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে প্রায় ৮০ ভাগ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য ক্ষেত্রে ২০ ভাগ তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার হচ্ছে। অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে অনলাইনে। সরকারী দফতরগুলো ই-গবর্নেন্সের আওতায় কাগজবিহীন করা হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথ যত প্রশস্ত হচ্ছে, বাণিজ্য সহজীকরণ প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ তত এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রা অব্যাহত থাকবে এবং মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার প্রক্রিয়ায়ও হবে অগ্রগতি।
×