ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিদের কাছে ৭-০ গোলে পরাজিত জিমিরা

এশিয়া কাপে শুরুটা ভাল হলো না বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ১২ অক্টোবর ২০১৭

এশিয়া কাপে শুরুটা ভাল হলো না বাংলাদেশের

রুমেল খান ॥ নিজেদের মাঠে কৃত্রিম আলোয় ঐতিহাসিক ‘প্রথম’ আন্তর্জাতিক ম্যাচ। সে ম্যাচ উপভোগ করতে মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে হাজির উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক। কিন্তু তাদের সেই অকুণ্ঠ সমর্থন কোন কাজেই আসেনি। ইতিহাস বদলানোর দৃঢ়প্রত্যয় নিয়ে নীল টার্ফে স্টিক নিয়ে নেমেছিলেন জিমি-চয়ন-আশরাফুল-ক্ষিসারা। কিন্তু সেই স্টিক দিয়ে প্রতিপক্ষ পাকিস্তানের (এ আসরের হ্যাটট্রিক এবং তিনবারের চ্যাম্পিয়ন) গোলপোস্টে একটি বলও পাঠাতে পারেনি স্বাগতিক বাংলাদেশ। পুল ‘এ’র ম্যাচে তারা উল্টো হেরেছে ০-৭ গোলের ব্যবধানে। অথচ ১৯৮৫ সালে ঢাকায় অনুষ্ঠিত এশিয়া কাপে হেরেছিল মাত্র ০-১ গোলে। সেই ফলের উন্নতি ঘটাতে গিয়ে বরং উল্টোটাই হলো এবার। টুর্নামেন্টের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানটি যেমন ছিল একেবারেই সাধারণ-সাদামাটা, লাল-সবুজ বাহিনীর খেলাও ছিল তেমনই। এশিয়া কাপ হকির ২৫ বছরের ইতিহাসে আগের ছয়বারের মোকাবেলায় একটি জয় বা ড্রও ছিল না পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এমনকি ছিল না একটি গোলও। এসব হতাশ জাগানিয়া পরিসংখ্যানকে একটু আশাব্যঞ্জক রূপ দিতে গিয়ে বরং হতাশার পরিমাণটা বাড়িয়েছেই কেবল। অথচ শুরুর দিকে পাকিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই খেলেছে বাংলাদেশ। প্রথম কোয়ার্টারে কোন গোলই খায়নি। একটা সময় মনে হচ্ছিল চতুর্দশ র‌্যাঙ্কিংধারী পাকিস্তানের সঙ্গে জিততে না পারলেও অন্তত লড়াকু-সম্মানজনক ড্র কুড়িয়ে নিতে পারবে ৩৪ নম্বর র‌্যাঙ্কিংধারী বাংলাদেশ। কিন্তু প্রথম গোলটা হজম করার পরই যেন খেলার ধার-মনোবল-স্পৃহা... সবকিছু হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। শুরু হয় অসহায়ভাবে আত্মসমপর্ণ করা। হকি ম্যাচে পেনাল্টি কর্নার ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এটা থেকে গোল করার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। অথচ বুধবারের ম্যাচে এই কাজে বাংলাদেশ দল ছিল সুপারফ্ল্প। পাকিস্তানের সঙ্গে গতি ও কৌশলে বারবার হার মানে তারা। মাঝমাঠে কোন আধিপত্যই বিস্তার করতে পারেনি বাংলাদেশ। মিডফিল্ডার সারোয়ার হোসেনের এই আসরে নিষেধাজ্ঞার জন্য খেলতে না পারায় এই ম্যাচে প্রতি মুহূর্তেই তীব্রভাবে অনুভূত হয়েছে তার অভাব। ১৭ মিনিট গোল করে এগিয়ে যায় পাকিস্তান। দ্বিতীয় পিসি থেকে আবু মাহমুদ গোল করে দলকে লিড এনে দেন (১-০)। সেই মুহূর্তেই ভাসানী স্টেডিয়ামে নতুন যোগ হওয়া ইলেক্ট্রনিক্স স্কোরবোর্ডে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। স্কোর দেখানো হয় ২-০তে এগিয়ে পাকিস্তান। তা সংশোধন করতে বেশ কিছুক্ষণ সময়ও লাগে। ৩২ মিনিটে পেনাল্টি স্ট্রোক থেকে শাকিল ভাট গোল করেন (২-০)। ৩৩ মিনিটে মোহাম্মদ কাদির ব্যবধান ৩-০ করেন। ৪০ মিনিটে সপ্তম পিসি থেকে আবু মাহমুদ গোল করেন (৪-০)। ৪৬ মিনিটে শাকিল ভাট একক স্কিলে কয়েকজনকে কাটিয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন (৫-০)। ৪৯ মিনিটে আবারও গোল করেন রশিদ মেহমুদ (৬-০)। ৫৯ মিনিটে মোহাম্মদ কাদিরের রিভার্সে ডিফেন্ডারদের ফাঁকি দিয়ে গোলে পরিণত হলে স্কোর দাঁড়ায় ৭-০। শেষ পর্যন্ত ওই স্কোরলাইনে খেলা শেষ হলে হতাশার হার নিয়ে টার্ফ ছাড়ে মাহবুব হারুনের শিষ্যরা। খেলা দেখতে আসা অতুল ওয়াহিদ হেমন্ত নামের এক দর্শক সরস মন্তব্য করেন, ‘আরও কিছুক্ষণ খেলা চললে হয়তো বাংলাদেশের ১১ খেলোয়াড় ১১ গোলই হজম করতো।’ বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ আগামীকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায়। যেখানে স্বাগতিকদের প্রতিপক্ষ ভারত। ভারতের শুভসূচনা জাপানকে হারিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ে এক দলের অবস্থান ষষ্ঠ, আরেক দলের সপ্তদশ। প্রথম দলটি এই আসরে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে দু’বার। দ্বিতীয় দলটি অবশ্য কোনবারই শিরোপার স্বাদ না পেলেও চতুর্থ স্থান অধিকার করেছে চারবার। তাহলে দু’দলের দ্বৈরথে কার জেতার কথা? স্বাভাবিকভাবে সবাই নিশ্চয়ই বলবেন প্রথম দলের কথাই। তাদের ধারণাই ঠিক হয়েছে। বুধবার মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়াম এশিয়া কাপ হকির দশম আসরের উদ্বোধনী দিনের প্রথম খেলায় (পুল ‘এ’) শিরোপা প্রত্যাশী ভারত জিতে শুভসূচনা করেছে। তারা বেশ আয়েশীভাবেই হারিয়ে দেয় জাপানকে। ম্যাচের স্কোরলাইন ছিল ৫-১। আন্তর্জাতিক হকি ফেডারেশনের নিয়ম অনুযায়ী চার কোয়ার্টারের প্রথম কোয়ার্টারে ভারত ও জাপানের ম্যাচটি বেশ জমজমাট হয়ে উঠেছিল। এ সময় খেলাটি ১-১ গোলে ড্র ছিল। মাঠে বল গড়ানোর মাত্র ২ মিনিটের মধ্যে পাল্টা আক্রমণে সর্দার সিংয়ের পাস থেকে সুনীল সোমারপেত গোল করেন (১-০)। কিন্তু কাউন্টার এ্যাটাকে পরের মিনিটে তানাকা কেন্তার বাড়ানো বলে কানেক্ট করে সমতা আনেন (১-১)। এরপর ভারত দ্বিতীয় কোয়ার্টার থেকে ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করে ২-১ গোলে এগিয়ে যায়। ৬ মিনিটে ললিতের হিটে জাপানের কিপার পরাভূত হলে লিড নেয় ভারত। এরপর থেকেই ম্যাচের পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ভারত। আর পিছিয়ে পড়তে শুরু করে জাপান। শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে অনেকটা রক্ষণাত্মক হয়ে খেলা শুরু করলেও মাঝে মধ্যে জোরালো আক্রমণ করতে দেখা যায়। কিন্তু ভারতের রক্ষণভাগকে ফাঁকি দিয়ে জাপানিজদের ম্যাচে ফেরা কঠিন হয়ে পড়ে। তৃতীয় কোয়ার্টারের ২ মিনিটে রামানদীপ সিং কোনাকুনি রিভার্স হিটে গোল করেন। নেটের ফাঁক দিয়ে গোল হয়েছে ভেবে জাপান ভিডিও রেফারেল চায়। ভারতের পক্ষে রায় গেলে স্কোরলাইন দাঁড়ায় ৩-১। ৫ মিনিটে পিসি পায় ভারত। সুনীল-মনপ্রীত-হারমান প্রীতের কম্বিনেশনে গোল করেন শেষেরজন (৪-১)। চতুর্থ কোয়ার্টারের ২ মিনিটে আবারও পিসি থেকে গোল করে ভারত। আবারও গোল করেন হারমান প্রীত (৫-১)।
×