ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মেসির হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১২ অক্টোবর ২০১৭

মেসির হ্যাটট্রিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

ঁজাহিদুল আলম জয় ॥ ফুটবল ঈশ্বর বোধহয় চিত্রনাট্য এভাবেই সাজিয়েছিলেন। তিনি হয়তো সবাইকে চমক দেয়ার জন্যই শেষ পর্যন্ত রোমাঞ্চটা রেখেছিলেন। বিশ্বকাপ ফুটবল হবে আর সেখানে আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর থাকবেন না তা কিভাবে হয়!! শেষক্ষণের রোমাঞ্চ আর নাটকীয়তায় তাই সব শঙ্কা আর অনিশ্চয়তা দূর করে ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ খেলা নিশ্চিত করেছে লিওনেল মেসির আর্জেন্টিনা। তৃপ্ত ফুটবল ঈশ্বর, তৃপ্ত আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর, আর্জেন্টিনার আপামর জনসাধারণ, গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্তসমর্থক। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে পরের বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়াও। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এই দু’টির একটি যদি বিশ্বকাপে না থাকে সেটিকে কি বিশ্বকাপ বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা বেজায় খুশি মেসির আর্জেন্টিনা রঙিন মঞ্চে যাওয়ায়। কেননা বিশ্বকাপের আসল স্বাদটাই যে এতে জিইয়ে থাকলো। আর এই অসাধ্য সাধন হয়েছে ক্ষুদে জাদুকর মেসির সৌজন্যে। জাতীয় দলের জার্সিতে তিনি ব্যর্থ, এই অপবাদ ঘুচিয়েছেন দুর্দান্ত দাপটের সঙ্গে। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া অবস্থায় অসাধারণ রেকর্ডগড়া হ্যাটট্রিক করে দেশকে পৌঁছে দিলেন বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের শেষ রাউন্ডের ম্যাচে ইকুয়েডরের উচ্চতা জয় করে তাদের ৩-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। ৩৮ সেকেন্ডে গোল হজম করেও রূপকথার এই জয়ের রূপকার কিংবদন্তি মেসি। গত বিশ্বকাপের ফাইনালে হারের বেদনা হয়তো তিনি ভুলতে পারবেন না। কিন্তু যে প্রেক্ষাপটে দেশকে বিশ্বকাপের টিকেট পাইয়ে দিলেন তা এককথায় অনন্য, অসাধারণ, অতুলনীয়। এই ম্যাচটিই নিঃসন্দেহে জাতীয় দলের ক্যারিয়ারে মেসির সেরা। এটা ঠিক মেসির রূপকথার পারফর্মেন্সে সব শঙ্কা কাটিয়ে রাশিয়ার টিকেট পেয়েছে আর্জেন্টিনা। কিন্তু এটাই মানতে হবে, ভাগ্যদেবীও সঙ্গে ছিল আকাশী-নীলদের সঙ্গে। তাই যদি না হবে তাহলে যদি-কিন্তু’র সব হিসেব কিভাবে মেসি, মারিয়াদের পক্ষে যাবে। আর্জেন্টিনার সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য প্রধান দু’টি শর্ত ছিল, ব্রাজিলের কাছে হারতে হবে চিলির, পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচ ড্র হতে হবে। অবাক করা বিষয়, দু’টি ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। নেইমারের ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বাদ গেছে দুইবারের কোপাজয়ী চিলি। পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচটি ড্র হয়েছে ১-১ গোলে। ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-০ গোলে ভেনিজুয়েলার কাছে হারের কারণেই পেরু-কলম্বিয়া ড্র করেও হাসতে পেরেছে। এতে কলম্বিয়া সরাসরি রাশিয়ার টিকেট কেটেছে। আর পেরু পঞ্চম হয়ে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করেছে। উরুগুয়ে ৪-২ গোলে বলিভিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় হয়ে পৌঁছে গেছে মূল আসরে। মজার বিষয়, ম্যাচের মোট ছয়টি গোলই করেছেন উরুগুয়ের ফুটবলাররা। চারটি প্রতিপক্ষের জালে, আর দু’টি নিজেদের জালে। মানে আত্মঘাতী। অপ্রতিরোধ্য পারফর্মেন্সের দিনে দারুণ এক রেকর্ডও গড়েছেন কিং মেসি। প্রথম মিনিটে আর্জেন্টিনা পিছিয়ে পড়ার পর ১৮ মিনিটের মধ্যেই জোড়া গোল করে দলকে এগিয়ে নেন মেসি। এর মধ্য দিয়ে দক্ষিণ আমেরিকান অঞ্চলের বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে ২০ গোল করার কীর্তি গড়েন এই আর্জেন্টাইন সুপারস্টার। পরে ৬২ মিনিটে গোল করে হ্যাটট্রিক পূর্ণ করে সংখ্যাটিকে ২১-এ উন্নীত করেন। কিক অফের পর ৩৮ সেকেন্ডেই রোমারিও ইবারার গোলে পিছিয়ে পড়ে আর্জেন্টিনা। আকাশী-নীল শিবিরে বিশ্বকাপ তখন থেকে ছিটকে পড়ার শঙ্কা। এমন ‘দুর্যোগপূর্ণ’ পরিস্থিতিতে ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হন আর্জেন্টিনার প্রাণভোমরা। ১১ মিনিটে আর্জেন্টিনা শিবিরে স্বস্তি ফেরান মেসি। এ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার পাসে ডি বক্সের ভেতর থেকে দারুণ ফিনিশিংয়ে গোল করে দলকে সমতায় ফেরান এলএম টেন। ১৮ মিনিটে আর্জেন্টিনাকে এগিয়েও নেন মেসি। ডি বক্সের কিছুটা বাইরে ইকুয়েডরের এক ডিফেন্ডারের কাছ থেকে বল কেড়ে বাঁ পায়ের জোরালো শটে লক্ষ্যভেদ করেন। বিরতির পর নিজের হ্যাটট্রিক পূর্ণ করার পাশাপাশি আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেন মেসি। মাঝমাঠের অনেকটা ওপরে এঞ্জো পেরেজের পাস থেকে বল পেতেই মেসিকে ঘিরে ধরেন ইকুয়েডরের তিন খেলোয়াড়। নিজের ট্রেডমার্ক দৌড়ে তিনজনকে বোকা বানিয়ে বক্সের সামান্য বাইরে থেকে আলতো টোকায় গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে বল জালে পাঠান মেসি। চিলিকে গুঁড়িয়ে দেয়ার ম্যাচে ব্রাজিলের হয়ে জোড়া গোল করেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস। অপর গোলটি করেন পাউলিনহো। বাছাইপর্বে দুর্দান্ত পারফর্মেন্সের পর এখন থেকেই বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন বুনতে শুরু করেছেন সেলেসাও কোচ তিতে।
×