ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সব্যসাচী দাশ

দেশজুড়ে চলচ্চিত্র উৎসব

প্রকাশিত: ০৬:২৫, ১২ অক্টোবর ২০১৭

দেশজুড়ে চলচ্চিত্র উৎসব

আর না খেয়ে মরতে হবে না, দেশের যে অবস্থা তাতে ও এমনিতেই মারা যাবে। দরজার পাশে দাঁড়িয়ে ভরাট কণ্ঠে অবেগ মিশ্রিত স্বরে যুবক শওকত আকবর রোজি সামাদের কোলের শিশুকে উদ্দেশ করে বলছে। অন্যদিকে রাজপথে স্বাধিকার আন্দোলনের মিছিলে পুলিশের তা-বে রক্তাক্ত থেত মুখ দিয়ে চিৎকার করে বলছে, আপনারা যাবেনা যাবেনা...নায়ক রাজ রাজ্জক। অডিটোরিয়ামে উপস্থিত প্রায় তিনশ দর্শক চোঁখ, কান, মস্তিষ্ক এক করে বুদ হয়ে আছেন জহির রায়হানের কালজয়ী সিনেমা ‘জীবন থেকে নেয়া’র প্রজেকশন পর্দায়। ব্যস্ততম ঢাকা শহরে নিরলস বিকেলে দর্শকদের এক রকম পেয়েই বসেছিলেন এই কালজয়ী চিত্র পরিচালক। বর্তমানে থেকেও দর্শক হারিয়ে যায় সাদাকালোর সেই বিনি সুতার মালায়। বলছিলাম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব ২০১৭’র কথা। উৎসবে যে কয়দিন গিয়েছি সবদিনই দর্শকদের আন্তরিক উপস্থিতি মনকে প্রশান্তি দিয়েছে। ‘সবার জন্য চলচ্চিত্র, সবার জন্য শিল্প-সংস্কৃতি এই স্লোগানে গত ৬ অক্টোবর ২০১৭ থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসব। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত ৬৪ জেলা শিল্পকলা একাডেমির ব্যবস্থাপনায় চলছে এই উৎসব। চলবে, ২১ অক্টোবর ২০১৭ পর্যন্ত। পদর্শিত হবে পাঁচটি বিভাগে ৪৪টি চলচ্চিত্র। ধ্রুপদি চলচ্চিত্র, আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বা পুরস্কারপ্রাপ্ত চলচ্চিত্র, মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র, সমকালীন দেশীয় চলচ্চিত্র (২০১৫-১৬) ও নারী নির্মাতাদের চলচ্চিত্র। উৎসবে আসা বেশিরভাগ চলচ্চিত্র প্রেমীদের এসব বিভাগ নিয়ে তেমন ভাবনা চিন্তার কথা নয় কারণ, তাদের বেশিরভাগই চলচ্চিত্রের বিভাগ বিচারে অপারদর্শী। একালে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র ঘিরে যখন অনেক অনেক নেতিবাচক উপমা উপযুক্ত! তখন দু’বছর অন্তে নিজেদের চলচ্চিত্র দিয়ে এমন বর্ণাঢ্য উৎসব সত্যই স্বস্তির টনিক হিসেবে কাজ করছে অগণিত সিনেমা প্রেমীদের। কেননা চলচ্চিত্র বা সিনেমা সমসাময়িক জীবন বস্তবতা থেকে শুরু করে ঐতিহাসেক পেক্ষাপট সবটারই একরকম বস্তব দর্পন! একে অবহেলা বা উপেক্ষা করা কারোর পক্ষেই শুভ নয়। এই মুহূর্তে ঢাকাসহ দেশের সব জেলায় চলছে চলচ্চিত্র উৎসব। প্রতিদিন তিনটি শো (চৌদ্দ তারিখ থেকে দুইটা) সকলের জন্য উন্মুক্ত। ঢাকার বাইরের শিল্পকলাগুলোতেও এখন সিনেমা প্রেমীদের ভিড়। এমনটাই জানা গিয়েছে। আর হবেই বা না কেন যেখানে, ঋত্বিক ঘটক, জহির রায়হান, খান আতাউর রহমান, সুভাষ দত্ত, আলমগীর কবির, তারেক মাসুদ, মোরশেদুল ইসলাম, মোস্তফা সোরোয়ার ফারুকী, অমিতাভ রেজা থেকে একালের রিয়াজুল রিজুর মতো চিত্র পরিচালকদের আন্তর্জাতিক ও দেশীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমা পদর্শিত হচ্ছে। গত ৬ অক্টোবর সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর উৎসবের উদ্বোধনী বক্তব্য বলেছিলেন, দেশের বেশিরভাগ সিনেমা হলো চলচ্চিত্র প্রদর্শনের উপযুক্ত নয়। সব জেলা শিল্পকলা একাডেমির হলসমূহ প্রতিমাসে এক সপ্তাহের জন্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনের জন্য চিন্তা ভাবনা করছে সরকার। সংস্কৃতিমন্ত্রীর এই বার্তা সত্যই ইতিবাচক। কারণ, সারাদেশে হাতে গোনা কয়েকটা সিনেমা হল ছাড়া, বেশিরভাগ সিনেমা হল এখন পরিত্যক্ত গুদাম ঘর তুল্য। সেই বিবেচনায় সরকারের এমন পদক্ষেপ বাংলাদেশ চলচ্চিত্রের জন্য এক রকম যুগোপযোগী। বাঙালীর সংস্কৃতিতে সপরিবারে সিনেমা দেখার বা বিনোদিত হবার রেওয়াজ বেশ পুরনো। কিন্তু বর্তমানে এই রেয়াজটি এক রকম ভঙ্গুর বলা যায়। এখন আর কেউ সপরিবারে হলমুখো হবার স্বপ্ন দেখেন না। এটা বাস্তবতা! তবে সরকারের নেয়া শিল্পকলা কেন্দ্রিক পদক্ষেপ আমাদের চলচ্চিত্র শিল্প তথা অন্যান্য শিল্পের জন্য মঙ্গলজনক হবে। আজ বৃহস্পতিবার, ‘তিতাস একটি নদীর নাম’, ‘আগুনের পরশমণি’, ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’, তিনটা পাঁচটা এবং ৭টায় পদর্শিত হবে এবং সামনের দিনগুলোতে ‘ছুটির ঘণ্টা’ ‘অন্তর্যাত্রা’ ‘অজ্ঞাতনামা’ ‘জালালের গল্প’ ‘সত্যের মৃত্যু নেই‘ ‘গোলাপী এখন ট্রেনে’ ‘হাজার বছর ধরে’ ‘রংবাজ’সহ আরও দর্শক নন্দিত কালজয়ী সিনেমা। উৎসব শেষে থাকবে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক ও বিশেষ জুরি পুরস্কারের। দীর্ঘ ষোলো দিনব্যাপী এই চলচ্চিত্র প্রদর্শনের সুবাদে সাধারণ মানুষদের সঙ্গে বাংলাদেশী সিনেমার যে দুরত্ব তৈরি হয়েছে তা লাঘবে ভীষণভাবে কাজ করছে। মানুষ সৃজনশীল প্রাণী তার অন্তরে, রক্তে সৃজন কর্মের প্রবাহ সবসময় ধাবমান। শিল্প-সংস্কৃতি এই ধাবমান প্রবাহের গতিবিধি। জয় হোক বাংলাদেশী চলচ্চিত্রের।
×