ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সই করেও স্থগিত স্বাধীনতার ঘোষণা

কাতালান সঙ্কটের নতুন মোড়

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১২ অক্টোবর ২০১৭

কাতালান সঙ্কটের নতুন মোড়

কাতালোনিয়া সঙ্কট মঙ্গলবার এক নতুন মোড় নিয়েছে। গণভোটের রায় মেনে স্পেন থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন কাতালোনিয়া রাষ্ট্র গঠনের ঘোষণাপত্রে সই করেছেন কাতালান প্রেসিডেন্ট কার্লেস পুজদামন ও আঞ্চলিক নেতারা। তবে তা এখনই কার্যকর হচ্ছে না। মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনার জন্য স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেয়ার বিষয়টি তারা কয়েক সপ্তাহ পিছিয়ে দিয়েছেন। বিবিসি ও নিউইয়র্ক টাইমস। কাতালান নেতাদের সই করা স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে বলা হয়েছে, কাতালান প্রজাতন্ত্রকে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে আমরা সকল রাষ্ট্র ও সংস্থার প্রতি আহ্বান জানাই। তাদের এই পদক্ষেপকে তাৎক্ষণিকভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে স্পেন সরকার। স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনরত কাতালান নেতা মঙ্গলবার আঞ্চলিক পার্লামেন্টে এমন একটি বক্তৃতা দিয়েছেন যাতে মনে হতে পারে স্বাধীনতা ঘোষণা এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র। আবার তিনি স্পেনের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। স্বাধীনতা প্রশ্নে তিনি একটি ধোঁয়াশা তৈরি করেছেন। কাতালান নেতা কার্লেস পুজদামন পার্লামেন্টে স্বাধীনতার ঘোষণা দিতে পারেন, কয়েক দিন ধরে এমন ধারণা করা হচ্ছিল। কারণ ১ অক্টোবরের গণভোটের ফল থেকে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়েছিল এটি রাজ্যটিকে স্বাধীনতা ঘোষণার সুযোগ এনে দিয়েছে। কিন্তু পুজদামনের মঙ্গলবারের ভাষণ রাজ্যের স্বাধীনতাকামী মানুষকে হতাশ করেছে। কারণ তিনি এ ভাষণে স্পষ্ট করে স্বাধীনতার কথা বলেননি। তিনি বলেছেন, ‘আমি মনে করি গণভোটের মাধ্যমে জনগণ যে ম্যান্ডেট দিয়েছে তাতে কাতালানকে স্বাধীন একটি প্রজাতন্ত্র ঘোষণা করা যায়।’ তবে এর কিছুক্ষণ পরই তিনি বলেন, তিনি পার্লামেন্টে স্বাধীনতা ঘোষণার প্রক্রিয়াটি স্থগিত রাখতে বলবেন যেন মাদ্রিদের সঙ্গে সংলাপ শুরু করা যায়। তার এমন ঘোষণায় বহু কাতালানই বিভ্রান্তিকর অবস্থায় পড়েছেন। স্পেনের সোশ্যালিস্ট পার্টির কাতালান শাখার নেতা মিকুয়েল ইসেটা বলেছেন পুজদামন ইচ্ছা করে স্বাধীনতার ঘোষণা এড়িয়ে গেছেন। ইসেটা বলেন আমি বলতে চাই ‘আপনাকে স্বাধীনতা ঘোষণার ম্যান্ডেট দেয়া হয়েছে। কিন্তু আপনি সেটি স্থগিত করেছেন।’ পুজদামন বক্তৃতা চলাকালে কোন করতালি পাননি। এ সময় কট্টর বামপন্থীদের চুপচাপ বসে থাকতে দেখা গেছে। স্বাধীনতার প্রশ্নে বামপন্থীদের সমর্থন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তারা হতাশ হলেও পুজদামনের কোয়ালিশন ছেড়ে যাওয়ার ষোষণা দেয়নি। পুজদামন বলেন, তার সরকার স্পেন থেকে কাতালোনিয়াকে স্বাধীন ঘোষণা করার অধিকার অর্জন করেছে। কিন্তু তিনি এই মুহূর্তে ও পথে হাঁটতে চান না। স্বাধীনতা প্রশ্নে মাদ্রিদের সঙ্গে আলোচনা করতে চান। এদিকে বিচ্ছিন্নœতাবাদীদের সঙ্গে যে কোন ধরনের আলোচনার প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছেন স্পেনের প্রধানমন্ত্রী মারিয়ানো রাজয়। কেবল তাই নয় বিচ্ছিন্নতাবাদিতার অভিযোগে পুজদামন ও তার সহযোগীরা গ্রেফতার হতে পারেন এবং কাতালোনিয়ার পার্লামেন্ট ভেঙ্গে যাওয়ার ঝুঁকিও রয়েছে। কারণ দেশটির সাংবিধানিক আদালতের নির্দেশ উপেক্ষা করেই গণভোট হয়। এতে ৪৩ শতাংশ ভোটার অংশ নেন এবং ৯০ শতাংশই কাতালোনিয়াকে স্পেন থেকে বিচ্ছিন্ন করার পক্ষে ভোট দেন। প্রধানমন্ত্রী রাজয়ের দলের মুখপাত্র পাবলো কাসাডো সোমবার পুজদামনকে এ বিষয়ে হুঁশিয়ার কওে দেন। ভোট ঠেকাতে সর্বশক্তি নিয়োগ করে মাদ্রিদ। অনেক ভোট কেন্দ্র বন্ধ করে দিয়ে নির্বাচন সামগ্রী জব্দ করা হয়। ভোট দিতে চাওয়া জনগণের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে নয় শতাধিক বেসামরিক মানুষ আহত হয়েছে। ইসেটা বলেন, আদালত গণভোটকে অবৈধ বলেছে, মাত্র ৪৩ শতাংশ লোক ভোট দিয়েছে। তাদের দাবি অনুযায়ী স্বাধীনতার ষোষণা দেয়া আসলে সম্ভব নয়। কারণ সংখ্যালঘুর মত সংখ্যাগুরুর ওপর চাপিয়ে দেয়া যায় না। পুজদামনের জাতীয়তাবাদী দল থেকে নির্বাচিত পার্লামেন্ট সদস্য লুইস করোমিনাস বলেছেন, ‘গণভোটের রায় আমাদের স্বাধীনতা ঘোষণার সুযোগ এনে দিয়েছে। তবে মনে রাখা দরকার গণভোটে রায় এসেছে বলেই কোন শূন্য গহ্বরে আমরা ঝাঁপ দিতে পারিনা। আমাদের বাস্তবতা উপলব্ধি করতে হবে। যে সময় ঘোষণাটি দিলে এটি যথাযথ হবে তখনই তা দেয়া উচিত।’
×