ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কন্যা শিশু দিবসে সফলতার গল্প শোনালেন মমতাজ বেগম

প্রকাশিত: ০৬:০৫, ১২ অক্টোবর ২০১৭

কন্যা শিশু দিবসে সফলতার গল্প শোনালেন মমতাজ বেগম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মেয়েদের শিক্ষার অধিকার, পরিপুষ্টি, আইনী সহায়তা ও ন্যায় অধিকার, চিকিৎসা সুবিধা ও বৈষম্য থেকে সুরক্ষা, নারীর বিরুদ্ধে হিংসা ও বলপূর্বক বাল্যবিবাহ বন্ধে কার্যকর ভূমিকা পালনের উদ্দেশ্য নিয়ে বুধবার বিশ্বব্যাপী পালিত হলো ‘আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ২০১৭’। পৃথিবীজুড়ে লিঙ্গ বৈষম্য দূর করতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘের সদস্যরাষ্ট্রসমূহ প্রতিবছর দিবসটি পালন করে থাকে। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস ২০১৭’র প্রতিপাদ্য ‘এমপাওয়ার গার্লস: ইমারজেন্সি রেসপন্স এ্যান্ড রেসিলেন্স প্ল্যানিং’। যার অর্থ ‘মেয়েদের ক্ষমতায়নে জরুরী সহায়তা ও প্রতিরোধ পরিকল্পনা’। বেসরকারী বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে বাংলাদেশেও দিবসটি পালন করা হয়েছে। এ উপলক্ষে ব্র্যাক, এসিড সারভাইভারস ফাউন্ডেশন এবং অস্ট্রেলীয় হাইকমিশনের যৌথ উদ্যোগে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটের থ্রিডি সেমিনার হলে আলোচনা সভা ও পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন মমতাজ বেগম এমপি। অনুষ্ঠানে তিনি তার জীবনের গল্প বলতে গিয়ে বলেন, ‘গ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে জন্ম নিয়ে বাবার কাছ থেকে কোন সম্পত্তি পাইনি। গরিব বাবা সম্পত্তি দিয়ে যাননি, তবে আমাকে সম্পদ বানিয়েছেন। মা ঘরে বসাতে চাইতেন। বাবা আমাকে স্বাধীন করে দিতেন। বাবা জানতেন, আমি গানের জগতেই ভাল থাকব। ভাল আছি, স্বাধীন আছি’ এভাবেই নিজের বেড়ে ওঠার গল্প বলছিলেন বাউল স¤্রাজ্ঞী ও জাতীয় সংসদ সদস্য মমতাজ বেগম। মমতাজ বেগম বলেন, আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে শ্রম এবং সাধনা করলে সফলতা আসবেই। পুরুষশাসিত সমাজে এগিয়ে যাওয়া নারীর জন্য কষ্টকর বটে। তবে সাধনা থাকলে কেউ দমাতে পারে না। আমার এ জীবনে যত পথ হেঁটেছি, তা অনেক পুরুষই হাঁটতে পারেনি। দিনের পর দিন বাবার হাত ধরে গানের আসরে গিয়েছি। বাবার অর্থ ছিল না। আবার অনেক জায়গায় গাড়িও চলত না। কাদা-পানি, ঝড়-বৃষ্টির মধ্যেই মাইলের পর মাইল হাঁটতে হয়েছে। কষ্ট করেছি বলেই ভক্তদের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে পেরেছি। সাধনা করেছি বলেই সম্মান পেয়েছি। আজকের এ সম্মান কারও দয়ায় নয়, করুণায় নয়। এ সম্মান সাধনার মাধ্যমে অর্জন করেছি। বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনীর উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু বলতেন তিনি বাঙালী, মুসলমান এবং মানুষ। নারী-পুরুষ নয় পথ চলা হোক মানুষ পরিচয়ে। ব্র্যাক জেন্ডার জাস্টিস এ্যান্ড ডাইভারসিটির পরিচালকের সভাপতিত্বে সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন অস্ট্রেলিয়ান হাইকমিশনার স্যালি-এ্যান ভিনসেন্ট, মনোবিজ্ঞানী ড. মেহতাব খানম এবং আইন ও সালিশ কেন্দ্রের নির্বাহী পরিচালক শিপা হাফিজ। অনুষ্ঠানে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখার স্বীকৃতি হিসেবে দেশের ছয় কন্যাশিশুকে পুরস্কার দেয়া হয়। অদম্য সাহসিকতায় এগিয়ে যাওয়ার গল্প শুনিয়ে শামীমা আক্তার, আমিনা খাতুন নীলা, লিলিমা খাতুন, শাবানা আক্তার, তুলি দেবনাথ ও মুক্তার আক্তার মৌ পুরস্কার লাভ করেন। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস উপলক্ষে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ ‘গার্লস টেক ওভার’ কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এ কর্মসূচীর মাধ্যমে একজন কিশোরী বা যুব নারীকে নেতৃত্ব প্রদানকারীর ভূমিকা পালন করতে সহায়তা করা হয়। এতে তাদের মধ্যে বড় হওয়ার, ভাল কিছু করার স্বপ্ন তৈরি হয়, আত্মবিশ্বাস বাড়ে। এ বছর গার্লস টেকওভার কর্মসূচীতে কিশোরী ও যুব ১৭ মেয়েকে এ কর্মসূচীতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে দেশের রংপুর বিভাগের দিনাজপুর, নীলফামারী, লালমনিরহাট ও রংপুর জেলায় সরকারী কর্মকর্তা, বিভিন্ন উপজেলার ইউএনও, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও নিজ সংস্থার প্রধানের দায়িত্ব পালনে ১৫ মেয়েকে সহায়তা করা হয়েছে । ২০১৬ সাল থেকে প্ল্যান ইন্টারন্যাশনাল গার্লস টেকওভার কর্মসূচী হাতে নেয়। আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের ‘কারণ আমি একজন মেয়ে’ নামক আন্দোলনের ফসল। এই আন্দোলনের মূল কর্মসূচী হলো বিশ্বজুড়ে কন্যার পরিপুষ্টি সম্পর্কে জনসচেতনতা সৃষ্টি করা। এই সংস্থার কানাডার কর্মচারীরা এই আন্দোলনকে বিশ্ব দরবারে প্রতিষ্ঠিত করতে কানাডা সরকারের সহায়তা নেয়। কানাডাই প্রথম জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালনের প্রস্তাব দেয়। পরে ২০১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় এ প্রস্তাব গৃহীত হয়। এরই ফলশ্রুতিতে ২০১২ সালের ১১ অক্টোবর প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবস পালন করা হয়। প্রথম আন্তর্জাতিক কন্যা শিশু দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘বাল্য বিবাহ বন্ধ করা’।
×