ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বখাটেদের উৎপাত

বগুড়ার গ্রামে দুদিনে দুই কিশোরীর আত্মহত্যা ॥ জনমনে প্রশ্ন

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১২ অক্টোবর ২০১৭

বগুড়ার গ্রামে দুদিনে দুই কিশোরীর আত্মহত্যা ॥ জনমনে প্রশ্ন

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস ॥ বখাটেদের উৎপাতে পর পর দু’দিন বগুড়ার দুপচাঁচিয়ার গ্রামে দুই কিশোরীর আত্মহত্যার ঘটনা জনমনে কতগুলো প্রশ্নের সৃষ্টি করে অভিভাবক মহলে উদ্বেগ বাড়িয়ে দিয়েছে। পুলিশ উত্ত্যক্তকারী বখাটে ও সন্ত্রাসীদের এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি। একজন বখাটের বাবাকে গ্রেফতার করার পরও পুলিশ তাকে থানা পর্যন্ত আনতে পারেনি। লোকজন তাকে ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের ওয়াকিটকি কেড়ে নিয়েছে। পুলিশ সেই ওয়াকিটকিও উদ্ধার করতে পারেনি। যদিও পুলিশ বলেছে ওয়াকিটকি ছিনিয়ে নেয়া হয়নি। ওটা বাজারের মধ্যে হারিয়ে গেছে। ওয়াকিটকি খোয়া যাওয়ার ঘটনায় ২৬ জনকে গ্রেফতার করেছে। রবিবার রাতে জিয়ানগর উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রোজিফা আক্তার সাথী (১৫) বখাটেদের উত্ত্যক্ত সইতে না পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহনন করেছে। সে জিয়ানগর ম-লপাড়া গ্রামের গোলাম রব্বানীর মেয়ে। পরদিন গোলাম রব্বানী দু’জনকে অভিযুক্ত করে দুপচাঁচিয়া থানায় মামলা দায়ের করেন। তারা হলো হুজাইতুল ইয়ামিন (২২) ও তার বাবা আমিনুর রহমান মীর। এদের বাড়ি হেরেঞ্জা গ্রামে। পুলিশ ওইদিন রাতে হুরুঞ্জ গ্রাম ও বজড়াপুকুর বাজারে অভিযান চালিয়ে বখাটের বাবা আমিনুর রহমান মীরকে গ্রেফতার করে। বাজারের লোকজন পুলিশের কাছ থেকে ওই ব্যক্তিকে ছিনিয়ে নিয়ে ওয়াকিটকি কেড়ে নেয়। পরের দিন সোমবার রাতে মোস্তফাপুর গ্রামে কিশোরী মিলি খাতুন (১২) বখাটেদের উৎপাত সইতে না পেরে গলায় ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহনন করে। সে গ্রামের আবদুর রশিদের একমাত্র মেয়ে। মোস্তফাপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। পরের দিন তার মা বেলি খাতুন বাদী হয়ে দু’জনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেন। তারা হলো মোস্তফাপুর গ্রামের বুলু মিয়া (২৮) ও ছদরুল ফকির (২৫)। এরা দু’জনই বিবাহিত। তাদের ঘরে সন্তানও আছে। মিলির মা বেলি খাতুন জানান, এই দুই বখাটে সন্ত্রাসী বেশ কিছুদিন ধরেই তার মেয়েকে পথে ঘাটে উত্ত্যক্ত করছিল। বিষয়টি এলাকার লোকজন জেনেও নীরব ছিল। উত্ত্যক্তকারীরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির ও তাদের গডফাদার আছে। লোকজন ভয়ে এদের বিরুদ্ধে কোন কথা বলত না। এই দুই সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে এলাকার মাতবরদের কাছে অভিযোগ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে সালিশ বসে। লোক দেখানো সালিশে কোন সাজা হয়নি। উল্টো কথিত সালিশের পর এদের হুমকি ধমকি ও উত্ত্যক্ত আরও বেড়ে যায়। (এরই নাম সালিশ)। এই দুই ঘটনার পর এলাকার লোকজনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন উঠেছে। বখাটেদের উপদ্রব এত বেড়ে যাওয়ার পরও আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন এত নীরব কেন। মামলা দেয়ার পর ৪৮ ঘণ্টা অতিবাহিত হলো। পুলিশ অভিযুক্ত কাউকে গ্রেফতার করতে পারল না। উল্টো গ্রেফতার করার পর অভিযুক্তকে ছিনিয়ে নিয়ে পুলিশের ওয়াকিটকি খোয়া গেল (এরই নাম কি পুলিশ!)। পুলিশের কর্তা ব্যক্তিদের রুটিন উত্তর- অভিযুক্তদের গ্রেফতারের চেষ্টা করা হচ্ছে। দু’জন কিশোরী বখাটে সন্ত্রাসীদের উত্ত্যক্ত সইতে না পেরে আত্মহনন করে পুলিশের ব্যর্থতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। তারপরও পুলিশের জোড়ালো অভিযান নেই। পুলিশ কি তবে...।
×