ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রাখাইন

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১২ অক্টোবর ২০১৭

রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে পড়ার আশঙ্কা রাখাইন

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত রাখাইনে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযান চালাতে পারে। সে সময় পর্যন্ত অভিযান চালালে রাখাইন এলাকা রোহিঙ্গাশূন্য হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অন্যদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, গত ২ অক্টোবর মিয়ানমারের মন্ত্রী তিন্ত সোয়ে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের প্রতিশ্রুতি দিলেও এখন পর্যন্ত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠনে বাংলাদেশের প্রস্তাবের বিষয়ে কোন উত্তর দেয়নি। একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। সূত্র জানায়, রাখাইনে বিপুল বিনিয়োগ ঝুঁকিমুক্ত করতেই চীন মিয়ানমারকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানকে মদদ দিয়ে চলেছে। মিয়ানমারের মন্ত্রী ঢাকা সফরকালে রাখাইনে সংঘাতময় পরিস্থিতি শান্ত হয়ে আসছে জানালেও প্রকৃতপক্ষে সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান আগের মতোই চলছে। বরং নতুন তথ্যে দেখা যাচ্ছে, চলতি সপ্তাহে উত্তর রাখাইনের আরও নতুন এলাকায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী অভিযান পরিচালনা করেছে। বর্তমানে জাতিসংঘ মহাসচিবের বিশেষ নির্দেশনায় রাখাইন পরিস্থিতির ওপর সার্বক্ষণিক নজর রাখা হচ্ছে। এ সঙ্কট ঘিরে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে জাতিসংঘ সদর দফতরে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন এসেছে। এসব প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর মিয়ানমারের সীমান্ত পুলিশ চৌকির ওপর সন্ত্রাসী হামলার পর থেকে ২০১৭ সালের আগস্ট মাস পর্যন্ত মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে চীন সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ের নীতিনির্ধারকদের নিয়মিত বৈঠক হয়েছে। বিশেষ করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা দফায় দফায় বেজিং সফরে গেছেন। গত ২৩ আগস্ট কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট প্রকাশের আগের দিনেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ দুই কর্মকর্তা বেইজিং সফর করেন এবং চীন সরকারের উর্ধতনদের সঙ্গে তাদের বৈঠক হয়। তারা ২৪ আগস্ট ফিরে আসার পর থেকেই রাখাইনে সীমান্ত চৌকিতে সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটে এবং সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা নিধনে গণহত্যা শুরু করে। এসব ঘটনাক্রম থেকে স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয়, রাখাইনে জাতিগত নিধনযজ্ঞ চালাতে চীন-মিয়ানমার আঁতাত আগে থেকেই হয়েছিল। পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনের চিত্র থেকে দেখা যায়, গত বছর ৯ অক্টোবরের হামলার ঘটনার পর মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ চীনকে বোঝাতে সমর্থ হয় যে রোহিঙ্গারা রাখাইনে অবস্থান করলে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গঠন এবং প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানের কাজে নিরাপত্তা ঝুঁকি থেকে যাবে। এ কারণে যে কোন উপায়ে রাখাইন রোহিঙ্গামুক্ত করতে মিয়ানমার চীনের সক্রিয় সমর্থন আদায়ে সফল হয়। কোফি আনান কমিশনের রিপোর্ট রোহিঙ্গাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সে কারণে এক মুহূর্ত দেরি করেনি মিয়ানমার সেনাবাহিনী। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী সেখানে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর অভিযান শুরু হয়। সূত্র জানায়, পর্যবেক্ষণগুলো থেকে এটাও প্রতীয়মান হচ্ছে ২০১৬ সালের ৯ অক্টোবর এবং চলতি বছরের ২৪ আগস্ট রাখাইনে মিয়ানমার সীমান্ত পুলিশ সীমান্ত চৌকিতে যেসব সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে তার পেছনেও মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাত থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে নিশ্চিত হতে নিবিড় তদন্ত প্রয়োজন। কিন্তু মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের বাধার মুখে সেই তদন্ত সম্ভব হচ্ছে না।
×