ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মেসি ম্যাজিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১২ অক্টোবর ২০১৭

মেসি ম্যাজিকে বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা

জাহিদুল আলম জয় ॥ রেকর্ডের সঙ্গে যার নিত্য বসবাস, তার রেকর্ড নিয়ে মাতামাতির কি আছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে রেকর্ড আর নিজের নামটি যেন সমার্থকে পরিণত করেছেন; খেলছেন রেকর্ড ভাঙ্গা-গড়ার খেলা। মূলত গোলের গৌরবময় রেকর্ডই ঝুলিতে ভরছেন। কার প্রসঙ্গে অবতারণা করা হচ্ছে তা বোধকরি না বললেও চলে। তবুও বলার খাতিরে বলা। নামটি তার লিওলেন মেসি। বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। বার্সিলোনা ডায়মন্ড। রেকর্ড পাঁচবারের ফিফা বর্ষসেরা এই ফুটবলারের অপবাদ ছিল জাতীয় দলের জার্সি গায়ে তেমন কিছুই করতে পারেন না। কে বলেছে পারেন না? নিন্দুকদের মুখে চুনকালি দিয়ে কি দুর্দান্ত ভঙ্গিতেই না নিজ দেশ আর্জেন্টিনাকে পৌঁছে দিলেন ২০১৮ সালের রাশিয়া বিশ্বকাপে। বাংলাদেশ সময় বুধবার সকালে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলের বাছাইপর্বের শেষ ম্যাচে ইকুয়েডরকে তাদেরই মাঠে ৩-১ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনা। তাতেই সব অনিশ্চয়তা আর শঙ্কা দূরে ঠেলে সরাসরি বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। কঠিন এই মিশনে দলকে একাই টেনে তুলেছেন জাদুকর মেসি। চোখ ধাঁধানো তিনটি গোলই করেছেন তিনি। অথচ ম্যাচটির আগে ক-ত-তো সমীকরণ ছিল। তাতে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার আশাটা ছিল ক্ষীণ। কিন্তু মেসির রূপকথার পারফর্মেন্সে সব শঙ্কা কাটিয়ে রাশিয়ার টিকেট পেয়েছে আর্জেন্টিনা। তবে এটাই মানতে হবে, ভাগ্যদেবীও সঙ্গে ছিল আকাশী-নীলদের। তাই যদি না হবে তাহলে যদি-কিন্তু’র সব হিসেব কিভাবে মেসি, মারিয়াদের পক্ষে যাবে। আর্জেন্টিনার সরাসরি বিশ্বকাপে যাওয়ার জন্য প্রধান দু’টি শর্ত ছিল, ব্রাজিলের কাছে হারতে হবে চিলির আর পেরু-কলম্বিযা ম্যাচ ড্র হতে হবে। অবাক করা বিষয়, দু’টি ক্ষেত্রেই এমন হয়েছে। নেইমারের ব্রাজিলের কাছে ৩-০ গোলে বিধ্বস্ত হয়ে বিশ্বকাপ থেকেই বাদ গেছে দুইবারের কোপাজয়ী চিলি। পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচটি ড্র হয়েছে ১-১ গোলে। ঘরের মাঠে প্যারাগুয়ে অপ্রত্যাশিতভাবে ১-০ গোলে ভেনিজুয়েলার কাছে হারের কারণেই পেরু-কলম্বিয়া ড্র করেও হাসতে পেরেছে। এতে কলম্বিয়া সরাসরি রাশিয়ার টিকেট কেটেছে। আর পেরু পঞ্চম হয়ে প্লে-অফ খেলা নিশ্চিত করেছে। উরুগুয়ে ৪-২ গোলে বলিভিয়াকে হারিয়ে দ্বিতীয় হয়ে পৌঁছে গেছে মূল আসরে। ম্যাচ শুরুর ৩৮ সেকেন্ডে গোল হজম করেও শুধু মেসির কল্যাণে বিশ্বকাপে নাম লিখিয়েছে আর্জেন্টিনা। রূপকথার এই জয়ের রূপকার কিংবদন্তি মেসি। আর এতে তৃপ্ত ফুটবল ঈশ্বর, তৃপ্ত আর্জেন্টাইন ফুটবল ঈশ্বর, আর্জেন্টিনার আপামর জনসাধারণ, গোটা বিশ্বের কোটি কোটি ভক্ত-সমর্থক। হাফ ছেড়ে বেঁচেছে পরের বিশ্বকাপের আয়োজক রাশিয়াও। আর্জেন্টিনা-ব্রাজিল এই দু’টির একটি যদি বিশ্বকাপে না থাকে সেটিকে কি বিশ্বকাপ বলা যায়। সবচেয়ে বড় কথা, প্রকৃত ফুটবলপ্রেমীরা বেজায় খুশি মেসির আর্জেন্টিনা বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে যাওয়ায়। কেননা বিশ্বকাপের আসল স্বাদটাই যে এতে জিইয়ে থাকলো। মেসির শ্রেষ্ঠত্ব নিয়ে দ্বিমত নেই কারও। বার্সিলোনার হয়ে সময়ের অন্যতম সেরা এই তারকা ক্যারিয়ারের প্রায় সব অর্জনই ঝুলিতে ভরেছেন। এর মাঝেও অতৃপ্তি আছে। সেটা হচ্ছে বিশ্বকাপ ফুটবলের ট্রফি জিততে না পারা। ব্রাজিল বিশ্বকাপে এর কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন। ২০১৪ সালের ১৩ জুলাই বিখ্যাত মারাকানা স্টেডিয়ামে বিশ্বকাপ ট্রফি উঁচিয়ে ধরতে পারলেই অনন্য রেকর্ড আর ইতিহাসের সাক্ষী হতেন। নাম উচ্চারিত হতো দুই জীবন্ত কিংবদন্তি পেলে ও দিয়াগো ম্যারাডোনা সঙ্গে। সেই সুবর্ণ সুযোগ হাতছাড়া হয় ফাইনালে জার্মানির কাছে ১-০ গোলে হেরে। সেই দলটিই কিনা এবার ছিটকে পড়ছিল। এজন্য মেসিদের কম সমালোচনা শুনতে হয়নি। দলের প্রতি খেলোয়াড়দের নিষ্ঠা নিয়েও উঠেছিল প্রশ্ন। অবশেষে দেশকে বিশ্বকাপে পৌঁছে দিয়ে মুখ খুলেছেন। মেসি বলেন, ‘আর্জেন্টিনাকে ছাড়া বিশ্বকাপ হতো অস্বাভাবিক। এই দলটার বিশ্বকাপে না খেলাটা ঠিক হতো না। দলটা বদলাবে, আরও বেড়ে উঠবে এবং আরও শক্তিশালী হয়ে উঠবে।’ প্রিয় শিষ্যের প্রশংসা করে আর্জেন্টিনা কোচ জর্জ সাম্পাওলি বলেন, বিশ্বকাপ জেতাতেই হবে, আর্জেন্টিনার কাছে মেসির এমন কোন দায় নেই। বরং ফুটবলের কাছে মেসির একটি বিশ্বকাপ পাওনা। সে ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়।’ অনেক কষ্টে বিশ্বকাপে যাওয়া মেসি কি এবার পারবেন অধরা ট্রফি জিততে? জবাবটা জানা যাবে আগামী বছরের জুলাইয়ে।
×