ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

২ হাজার ২শ’ কোটি ডলারের বিপরীতে ছাড় হয়েছে মাত্র ৩ কোটি

চীনের প্রতিশ্রুত অর্থ পেতে কেবলই অপেক্ষার সময় বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১২ অক্টোবর ২০১৭

চীনের প্রতিশ্রুত অর্থ পেতে কেবলই অপেক্ষার সময় বাড়ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ চীন প্রতিশ্রুত ঋণের অর্থ পেতে অপেক্ষা বাড়ছে। প্রতিশ্রুত ২ হাজার ২০০ কোটি ডলারের বিপরীতে চলতি বছর মাত্র ৩ কোটি ডলার পাবে বাংলাদেশ। তবে এই অর্থ ছাড়ের বিষয়টিও এখনও নিশ্চিত নয়। গত বছরের অক্টোবরে সই হওয়া ২৭ উন্নয়ন প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত নতুন ৬টির চুক্তির বিষয়ে সবুজ সংকেত দিয়েছে চীন। এসব প্রকল্পে ঋণ সহায়তা পাওয়া যাবে মোট ৭০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে তিনটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। চলতি বছরের শেষের দিকে আরও দুটি প্রকল্পের ঋণ চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। ইআরডির একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে জানান, প্রকল্পের চূড়ান্ত ঋণচুক্তি করতে অনেক ধাপ পেরুতে হয়। নতুন প্রকল্প হলে ঋণ পেতে কমপক্ষে এক বছর সময় লাগে। নানা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে এই সময় লাগাটা স্বাভাবিক। এর ধারাবাহিকতায় ইতোমধ্যে তিনটি প্রকল্পের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। নবেম্বরের শেষের দিকে একটি প্রকল্পের বিপরীতে ৩ কোটি ডলার ছাড়ের সম্ভাবনাও রয়েছে। আরও কয়েকটি প্রকল্পের ঋণচুক্তি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আমরা আশা করছি, সবকিছু ঠিকঠাক এগুলো আগামী বছরে এসব প্রকল্পের বিপরীতে অর্থছাড়ের পরিমাণ বাড়বে ও নতুন কয়েকটি প্রকল্পে ঋণচুক্তি করা যাবে। জানা গেছে, গত জুলাইয়ে ছয়টি প্রকল্পে ৭০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তার ব্যাপারে প্রাথমিকভাবে চীনের সম্মতি পাওয়া যায়। এর মধ্যে রয়েছে বিদ্যুতের দুটি প্রকল্প, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প (৩০০ কোটি ডলার), ইনফো ৩ নেটওয়ার্ক প্রকল্প, বিটিসিএলের আধুনিকায়নসংক্রান্ত একটি এবং সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল প্রকল্প। সূত্র জানায়, দীর্ঘ প্রক্রিয়া শেষে গত ১০ সেপ্টেম্বর চীনা অর্থায়নের দুটি প্রকল্পে কারিগরি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। প্রকল্প দুটি হচ্ছে, ডেভেলপমেন্ট অব আইসিটি ইনফ্রা নেটওয়ার্ক ফর বাংলাদেশ গর্ভামেন্ট ফেইজ-৩ (ইনফো-সরকার-৩) এবং বিটিসিএলের মর্ডানাইজেশন অব টেলিকমিউনিকেশন নেটওয়ার্ক ফর ডিজিটাল কানেকটিভিটি (এমওটিএন) প্রকল্প। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের আওতায় ইনফো-সরকার-৩ প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পাওয়া যাবে ১৫ কোটি ৬৫ লাখ ডলার আর ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এমওটিএন প্রকল্পে পাওয়া যাবে ২৩ কোটি ১৫ লাখ মার্কিন ডলার। সমঝোতা অনুযায়ী এ ঋণের ফ্লাট সুদের হার ধরা হয়েছে ২ শতাংশ। ৫ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ২০ বছরে এ ঋণ পরিশোধ করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ইআরডি সচিব কাজী শফিকুল আযম বলেন, ২০১৬ সালে চীনের প্রেসিডেন্টের ঢাকা সফরের সময় সরকারী ২৭টি প্রকল্পে প্রায় ২২ বিলিয়ন ডলার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছিল। তার মধ্যে প্রথমবারের মতো এ দুটি প্রকল্পে কারিগরি চুক্তি হয়েছে। আমরা আশা করছি, এর মধ্য দিয়ে অন্য প্রকল্পগুলোর চুক্তিও দ্রুত হবে। চলতি অর্থবছরে আরও ৭ প্রকল্পের ঋণচুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জানা গেছে, গত বছরের ১৪-১৫ অক্টোবর চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের ঢাকা সফরকালে দুই দেশের মধ্যে মোট ২৭টি চুক্তি এবং এমওইউ স্বাক্ষর হয়। এর মধ্যে বিদ্যুত, আইসিটি, যোগাযোগসহ অবকাঠামো খাতের এসব প্রকল্পে প্রায় ২ হাজার ২০০ কোটি ডলার অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়। চুক্তি অনুযায়ী পাঁচ বছরে এ পরিমাণ অর্থ ছাড় করার কথা থাকলেও ইআরডি সূত্র বলেছে, চীন যে প্রক্রিয়ায় প্রকল্প অনুমোদন করে থাকে, তাতে নতুন করে দেয়া প্রতিশ্রুতির পুরো অর্থ আসতে অন্তত ৮ থেকে ১০ বছর লাগতে পারে। চীন প্রতিশ্রুত বিনিয়োগের অন্যান্য প্রকল্প ॥ চীনের সহযোগিতায় বন্দরনগরী চট্টগ্রামে তিনটি বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল নির্মাণ, আনোয়ারায় চীনা বিনিয়োগকারীদের জন্য অর্থনৈতিক অঞ্চল নির্মাণ এবং জাহাজে আমদানি করা জ্বালানি তেল গভীর সমুদ্র থেকে পাইপের মাধ্যমে সরকারী তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারিতে সরবরাহ করা (সিঙ্গেল পয়েন্ট মুরিং টার্মিনাল প্রকল্প)। চুক্তি অনুযায়ী চীন এসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয়ের ৮৫ শতাংশ অর্থ ঋণ হিসেবে দেবে। বাকি ১৫ শতাংশ অর্থায়ন করবে বাংলাদেশ সরকার। কর্ণফুলী টানেল নির্মাণ প্রকল্পের কাজ ২০২০ সালের জুনের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা। তবে চীনা অর্থছাড়ের দীর্ঘসূত্রতা বিবেচনায় এ প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে। এছাড়া চীনের অর্থায়নে সিলেটে শাহজালাল সার কারখানা আধুনিকায়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। বাস্তবায়নের অপেক্ষায় থাকা অন্য প্রকল্পগুলো হলো- বাংলাদেশ ফোর টিয়ার ন্যাশনাল ডেটা সেন্টার প্রকল্প, পায়রায় ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র প্রকল্প, চট্টগ্রামে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট স্থাপন প্রকল্প। অন্যদিকে দুটি প্রকল্পে প্রায় ৬৬০ কোটি টাকা অনুদান দেবে চীন। অর্থনৈতিক ও কারিগরি সহযোগিতার জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আওতায় প্রকিউরমেন্ট অব ডিজাস্টার ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার এ্যান্ড ইনফরমেশন প্ল্যাটফর্ম এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতায় ফায়ার সার্ভিসকে আগুন নেভানোর কাজে সহায়তার জন্য এক হাজার ফায়ার ফাইটার মোটরসাইকেল প্রদান প্রকল্পে এ অনুদান সহায়তা পাওয়া যাবে। ইতোমধ্যে দুটি প্রকল্পের অনুদান চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। তবে অনুদান প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে মোটরসাইকেল বুঝে পেতেও বাংলাদেশকে আরও অপেক্ষা করতে হবে।
×