ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ

প্রকাশিত: ০৪:২০, ১২ অক্টোবর ২০১৭

শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ শিল্প খাতেই কেন্দ্রীভূত ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কার্যক্রম। বিশেষ করে বড় কয়েকটি শিল্প গ্রুপই সব ব্যাংকের প্রধান ঋণগ্রহীতা। আর শিল্প ঋণেই খেলাপী সবচেয়ে বেশি। এক বছরের ব্যবধানে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ বেড়েছে সাড়ে ১৩ শতাংশ। কিন্তু এক বছরে শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ২২ শতাংশ। এছাড়া শিল্প খাতের মোট খেলাপী ঋণের মধ্যে সবচেয়ে বেশি খেলাপী বড় শিল্পপতিরা। ব্যাংকাররা জানান, সব খাতে ঋণ খেলাপী হচ্ছে। তবে শিল্প খাতে একটু বেশি। তাদের মতে, পুনঃতফসিল করা ঋণ আবার খেলাপী হয়ে যাচ্ছে। সে কারণে খেলাপী ঋণ বেড়ে যাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত অর্থবছরের (২০১৬-১৭) জুলাই-জুন সময়ে শিল্প ঋণে খেলাপীর পরিমাণ দাঁড়িয়েছে প্রায় ৩০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকা; এর আগের অর্থবছরের (২০১৫-১৬) একই সময়ে যা ছিল প্রায় ২৫ হাজার ৬৮ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৫ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা বা ২১ দশমিক ৮৯ শতাংশ। যদিও একই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়েছে ১৩ দশমিক ৫১ শতাংশ। অর্থাৎ বিতরণের চেয়ে বেশি বেড়েছে খেলাপী ঋণ। প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-জুন সময়ে শিল্প খাতে ঋণ বিতরণ হয় প্রায় ২ লাখ ৬৪ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। ২০১৬-১৭ অর্থবছরের একই সময়ে ঋণ বিতরণ বেড়ে হয়েছে ৩ লাখ ৬৭২ কোটি টাকা। ব্যাংকাররা জানিয়েছেন, উদ্যোক্তারা নানা অজুহাতে ঋণ পরিশোধ করছেন না। বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন নিয়ে অনেক উদ্যোক্তা নামমাত্র ডাউন পেমেন্ট দিয়ে দীর্ঘ মেয়াদে ঋণ নবায়ন করছেন। কিন্তু ওই ঋণের কিস্তি পরিশোধ না করায় আবার তা ঋণখেলাপীতে পরিণত হচ্ছে। আবার কেউ কেউ ঋণখেলাপী ঠেকাতে উচ্চ আদালতে রিট করছেন। ফলে ব্যাংকের খেলাপী ঋণ দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। এর প্রভাবে ব্যাংকের আয় কমে যাচ্ছে। আয়ের ধারা ঠিক রাখতে অনেকেই প্রকৃত খেলাপী ঋণ আড়াল করে মুনাফা বাড়িয়ে দেখানোর চেষ্টা করছে। এটা ব্যাংকিং খাতের জন্য কোনভাবেই ভাল লক্ষণ নয়। প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিল্প খাতে মোট খেলাপীর মধ্যে মেয়াদী শিল্প ঋণ খাতে খেলাপী ১৫ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন ঋণ খাতে খেলাপী হয়েছে ৯ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। ওই খেলাপীর যথাক্রমে বৃহৎ শিল্প ৫৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ, মাঝারি শিল্প ৩০ দশমিক ৬৪ শতাংশ এবং ক্ষুদ্র শিল্পে খেলাপী ১২ দশমিক ৮৮ শতাংশ। প্রতিবেদনে আরও দেখা যায়, শিল্প ঋণে সবচেয়ে বেশি খেলাপী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের। মোট খেলাপীর ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ হলো সরকারী ছয়টি ব্যাংকের। বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, নন-ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং বিদেশী ব্যাংকগুলোর শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী চলতি বছরের (জানুয়ারি-মার্চ) সময়ে শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। সর্বশেষ চলতি বছরের এপ্রিল-জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী, শিল্প খাতে মোট খেলাপীর মধ্যে মেয়াদী শিল্প ঋণ খাতে খেলাপী ১৫ হাজার ৬৫৫ কোটি টাকা এবং চলতি মূলধন ঋণ খাতে খেলাপী হয়েছে ৯ হাজার ৫৯৩ কোটি টাকা। শিল্প ঋণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি খেলাপী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের ঋণ। মোট খেলাপীর ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ হলো সরকারী ৬টি ব্যাংকের। বেসরকারী বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো ৪৮ দশমিক ৩৪ শতাংশ, বিশেষায়িত ব্যাংকের ২ দশমিক ৪৯ শতাংশ, নন ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ এবং বিদেশী ব্যাংকগুলো শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ ১ দশমিক ৭৯ শতাংশ। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, চলতি বছরের জানুয়ারি-মার্চ সময়ে শিল্প খাতে খেলাপী ঋণ ছিল ২৭ হাজার ৮১৫ কোটি টাকা। এপ্রিল-জুনে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩০ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকায়। অর্থাৎ তিন মাসের ব্যবধানে খাতটিতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৯ দশমিক ৮৫ শতাংশ।
×