ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মৃধা মোহাম্মাদ বেলাল

কেন এ নির্মম আচরণ!

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১২ অক্টোবর ২০১৭

কেন এ নির্মম আচরণ!

একটি সুন্দর ও মানবিক সমাজে বেঁচে থাকার অধিকার নিয়েই শিশু জন্মায়। এই অধিকার শিশুর মানবাধিকার। একটি শিশুর হৃদয়ে সঞ্চিত থাকে ভবিষ্যৎ উদ্যম তারুণ্য, নেতৃত্ব ও দেশমাতৃকার সেবায় নিয়োজিত একটি সুচিন্তক সুপ্ত প্রতিভা। শিশুর অধিকার রক্ষায় বাংলাদেশে প্রতিবছর বিশ্ব শিশু দিবস পালন করা হয়। এ বছর ‘শিশু পেলে অধিকার, খুলবে নতুন বিশ্বদ্বার’ এই প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হয় দিবসটি। সুন্দর প্রতিপাদ্য নিয়ে বিশ্ব শিশু দিবস পালিত হলেও শিশুর প্রতি নিষ্ঠুরতা ঠিকই চলতে থাকে! সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কিছু শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা সমাজকে প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করে দিয়েছে। কিছু রুচিহীন ও পৈশাচিক দৃষ্টিভঙ্গির অমানুষ সুযোগ পেলে ধর্ষণ করছে শিশুকে। আজকাল তিন-চার বছরের ছোট ছোট শিশুও ধর্ষিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাসা-বাড়িতে শিশু গৃহপরিচারিকাদের হত্যা-নির্যাতনের চিত্র তো অহরহ দেখা যায়। তথ্যমতে, ‘শ্রমজীবী শিশুদের মধ্যে ২২ শতাংশ শহরাঞ্চলে কাজ করে। এদের মধ্যে ৯৯ ভাগই নির্যাতনের শিকার।’ সামান্য ভুল-বিচ্যুতির অজুহাতে গরম খুন্তি ও ইস্ত্রি দিয়ে শিশুর কোমল শরীর পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি যৌন নির্যাতনের শিকারও হচ্ছে। যান্ত্রিক এই শহুরে জীবনে নির্মমতার সাক্ষী এমন আচরণ দিনদিন বেড়েই চলছে! শিশুর প্রতি মানবিক আচরণ ও সামাজিক মূল্যবোধ পুরনো কংক্রিটের মতো ক্ষয়ে যাচ্ছে! সত্যিই কি যান্ত্রিক চাকায় বিবেক ও মমতা পিষ্ট হয়ে যাচ্ছে? তথ্যমতে, মানবাধিকার সংগঠনের জোট শিশু অধিকার ফোরামের হিসেব অনুযায়ী- ২০১৫ সালে প্রথম ৭ মাসেই শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২৮০ টি। এছাড়াও ২০১২ সালে ৮৬ টি, ২০১৩ সালে ১৭০ টি, ২০১৪ সালে ১৯৯ টি শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের হিসাব মতে- চলতি বছরের প্রথম ৭ মাসে শিশু ধর্ষণ হয়েছে ২২৯ টি। এর মধ্যে মৃত্যুবরণ করেছে ৮ শিশু। মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের তথ্যমতে- ২০১৬ সালে ৩০৮ টি শিশু ধর্ষণের শিকার। শিশুদের প্রতি এমন বৈরী আচরণ এক ধরনের সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। ছোট ছোট শিশু ধর্ষণ ও হত্যা কোনো সামাজিক জীবের লক্ষণ কিনা তা জানা নেই। তবে তারা যে মানুষের মাঝে মানুষরূপী অমানুষ তা নিশ্চিত করে বলা যায়! সমাজবিজ্ঞানীদের ধারণা, ‘সুষ্ঠু বিচারহীনতা ও সুস্থ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে শিশু ধর্ষণ, হত্যা ও নির্যাতন বাড়ছে।’ এমন অনেক নজির আছে যে বছরের পর বছর মামলা ঝুলে আছে অথচ সুষ্ঠু বিচার প্রাপ্তির কোন সুরাহা হচ্ছে না! এ ধরনের মামলার জটিলতা ও দৌরাত্ম্য অতিশীঘ্র দূরকরা এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। আজকের কোমলমতি শিশুই আগামী দিনের মানবসম্পদ। তাই শিশুর নিরাপত্তায় অভিভাবকের পাশাপাশি সমাজের অন্য মানুষেরও এগিয়ে আসা উচিত। একটি মানবিক ও সুন্দর সমাজে সবার সহযোগিতায় এভাবেই শিশুদের বেড়ে ওঠার কথা। কারণ শিশুরাই একদিন আদর্শ মানুষ হিসেবে, শিক্ষিত নাগরিক হিসেবে এবং জাতির কর্ণধার হিসেবে গড়ে উঠবে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা থেকে
×