ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্লু হোয়েল

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১২ অক্টোবর ২০১৭

ব্লু হোয়েল

অনলাইনভিত্তিক একটি খেলার নাম ব্লু হোয়েল বা নীল তিমি। তবে এটি অন্যবিধ আর পাঁচটি গেমের মতো নয়; বরং বলা যায় বর্তমানে ব্লু হোয়েল একটি আতঙ্কের নাম। সর্বশেষ বাংলাদেশেও এক কিশোরীর এই গেমটি খেলে আত্মহত্যার খবর পাওয়া গেছে। যদিও পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন প্রামাণ্য তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে এই ভূতগ্রস্ত খেলাটি খেলে বেশ কিছু সংখ্যক তরুণ-তরুণীর আত্মহননের খবর ইতোমধ্যে পাওয়া গেছে প্রতিবেশী দেশ ভারত, রাশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এই প্রেক্ষাপটে ব্লু হোয়েল আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। আরও বলা যায়, ব্লু হোয়েল গেমসটি বর্তমানে দেখা দিয়েছে একটি বৈশ্বিক সমস্যা হিসেবেও। ব্লু হোয়েল খেলাটি মূলত মানুষ, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে থাকে। বলা যায়, এটি একটি সুইসাইড গেম। এতে ধাপে ধাপে বেশ কিছু ভীতিকর ও রোমহর্ষক দৃশ্য সংযোজিত হয়েছে, যা খেলাটির আকর্ষণ বাড়িয়ে দেয়। এটি এক ধরনের আসক্তি তৈরি করে খেলোয়াড়ের মন ও মননে। এমনকি প্ররোচিত ও প্রলুব্ধ করে থাকে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে। পরিণামে যা ডেকে আনে চূড়ান্ত আত্মহননের মতো পর্যায়কেও। ২০১৩ সালে রাশিয়ার এক তরুণ ফিলিপ বুদেকিন এই প্রাণঘাতী গেমটি তৈরি করেন। গেমটিতে আসক্ত হয়ে প্রথম আত্মহত্যার ঘটনা ঘটে ২০১৫ সালে। এরপর একাধিক ঘটনা ঘটলে পুলিশ গ্রেফতার করে বুদেকিনকে। তবে ততদিনে গেমটি অনলাইনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশে গেমটি এখন পর্যন্ত সুলভ না হলেও কারও কাছে থাকা বিচিত্র নয়। প্রশ্ন হলো, ব্লু হোয়েল আসলে কী? মূলত এটি নিছক কোন গেম বা এ্যাপ্লিকেশন নয়। এটি আসলে একটি সফটওয়্যার, সোশ্যাল মিডিয়াভিত্তিক ডিপওয়ে গেম। যেসব তরুণ-তরুণী অবসাদ বা বিষণœœতায় ভোগে, তারাই মূলত এতে আসক্ত হয়ে পড়ে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এটি আদৌ অবসাদ অপনোদনের খেলা নয়, বরং আত্মহত্যার জগতে প্রবেশপথ মাত্র। এই গেমের শুরুতে তুলনামূলকভাবে সহজ অথচ সাহস আছে কিনা এই ধরনের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া হয়। কাজটি চ্যালেঞ্জিং হওয়ায় তরুণ প্রজন্ম স্বভাবতই এতে আকৃষ্ট ও আক্রান্ত হয়ে পড়ে। অতঃপর একের পর এক নির্দেশ তথা চ্যালেঞ্জ আসতে থাকে গেম প্রশাসকের পক্ষ থেকে। সেই কাজটি করার পর ছবি তুলে বা ভিডিও করে পাঠাতে হয় প্রশাসককে। এভাবে ৫০তম ধাপ বা ৫০তম দিনে পাওয়া যায় সর্বশেষ নির্দেশটিÑ আত্মহত্যা করার। অবসাদ বা বিষণœতায় ভোগা তরুণ-তরুণীরা এই নির্দেশকেও মেনে নেয় চ্যালেঞ্জ হিসেবে। অবশ্য অনলাইনে এই জাতীয় আত্মহননের নান্দীপাঠের খেলা নতুন নয়। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রে স্ট্রেনজার মেন নামে উইন্ডোজভিত্তিক একটি মরণঘাতী গেম তৈরি হয়েছিল, যেটি খেলে অন্তত দু’জন খেলোয়াড়ের আত্মহত্যার খবর আসে। আত্মপক্ষ সমর্থনে ব্লু হোয়েলের উদ্ভাবক বুদেকিনের ভাষ্য, সে সমাজের ‘বায়োলজিক্যাল ওয়েস্ট’ অর্থাৎ, যাদের মানসিক শক্তি কম বা বিষণœতায় ভোগে তাদের চিরতরে নির্বাসনে পাঠাতেই এটি তৈরি করেছে। তরুণটি যে প্রতিভাবান সে বিষয়ে সন্দেহ পোষণ না করেও বলা যায়, প্রকৃতপক্ষে সে বিপথগামী প্রকারান্তরে আত্মহত্যার প্ররোচনা দানকার ‘খুনী’। প্রতিরোধ ব্যবস্থা হিসেবে ভারত সরকার ইতোমধ্যে গুগল, ফেসবুক, হোয়াটস-এ্যাপ, মাইক্রোসফট ও ইয়াহুর মতো বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় সোশ্যাল সাইটগুলো থেকে ব্লু হোয়েল চ্যালেঞ্জ গেমটির সব ধরনের লিঙ্ক মুছে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে। বাংলাদেশেও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বিটিআরসিকে অনুরূপ নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তবে যে নির্দেশনাই দেয়া হোক না কেন, সর্বস্তরের প্রবল জনসচেতনতাই পারে ব্লু হোয়েলসহ যে কোন নিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মের আসক্তি কমাতে। যে খেলা মানুষকে আত্মহত্যায় প্ররোচিত করে তা নিষিদ্ধ হওয়া বাঞ্ছনীয়। জীবনে সুখ-দুঃখ, সাফল্য-ব্যর্থতা, অবসাদ-বিষণœতা থাকবেই। তবু শেষ পর্যন্ত জীবন আনন্দময় ও প্রশান্তিতে ভরপুর, সর্বোপরি ইতিবাচক।
×