ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

রাহুল গান্ধী কি পারবেন!

প্রকাশিত: ০৭:০৬, ১১ অক্টোবর ২০১৭

রাহুল গান্ধী কি পারবেন!

রাহুল গান্ধী কংগ্রেস সভাপতির পদ গ্রহণের জন্য তৈরি হচ্ছেন। তিনি চান আর নাই চান পরিস্থিতিই তাকে এই পদ গ্রহণের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। বর্তমান সভাপতি তার মা সোনিয়া গান্ধীর বয়স এখন ৭০ বছর। ইদানীং তার শরীরও ভাল যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে তার বেশিরভাগ কর্তৃত্ব তিনি দলীয় সহসভাপতি রাহুলের হাতে ন্যস্তও করেছেন। সুতরাং আজ থেকে কাল হোক দলের প্রধান কা-ারীর ভূমিকা রাহুুলকে নিতে হবে। কিন্তু কংগ্রেস আজ যে চোরাবালিতে আটকে গেছে রাহুল কি তা থেকে দলকে টেনে তুলতে পারবেন? এখানেই এসে যায় দলকে নেতৃত্ব দেয়ার ক্ষেত্রে রাহুলের সাফল্য ও ব্যর্থতা তার যোগ্যতা ও সীমাবদ্ধতা। তার সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো সিদ্ধান্ত গ্রহণে দীর্ঘসূত্রতা। এমন মন্তব্য করা হয় যে কংগ্রেস হলো বংশানুক্রমিক নেতাদের দ্বারা চালিত দল যারা সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে সবাইকে খুশি করার চেষ্টায় খুব বেশি গণতন্ত্রের চর্চা করে শেষ পর্যন্ত কোন সিদ্ধান্তই নিতে পারে না। অন্যদিকে বিজেপি গণতান্ত্রিক দল হলেও ঠিক হোক বেঠিক হোক সকল সিদ্ধান্ত দুই ব্যক্তি স্বৈরাচারীভাবে নিয়ে তাকে এবং সবাই তা মেনে নেয়। এই পার্থক্যের মধ্যেই ভারতের দুটি জাতীয় দলের সাফল্য ও ব্যর্থতার কারণ নিহিত। সুতরাং সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগা দলের নেতৃত্বের সীমাবদ্ধতার একটা বড় দিক এবং রাহুল ও তা থেকে ব্যতিক্রম নন। এবারের ইউপি নির্বাচনের কথাই ধরা যাক। প্রিয়াঙ্কা গান্ধী কোথায় কখন নির্বাচনী প্রচারে নামবেন তা ঠিক করতেই তিনটা মাস কেটে গিয়েছিল। এ জাতীয় বেশকিছু সিদ্ধান্ত এখনও অপেক্ষার প্রহর গুনছে। এ বছরের শেষ দিকে হিমাচল প্রদেশের রাজ্য বিধান সভার নির্বাচন। সেখানে দলের নতুন নেতা নির্ধারণের দাবি আছে। মধ্য প্রদেশে আগামী বছর নির্বাচন। সেখানেও দলের নতুন নেতা কাকে করা হবে এখনও ঠিক হয়নি। কংগ্রেসের রোডম্যাপ এখনও পর্যন্ত স্পষ্ট নয়। অনেক নেতাই চান রাজ্যগুলোতে দলের পুনরুজ্জীবন ঘটানো হোক, তৃণমূল পর্যায়ে কংগ্রেসকে শক্তিশালী করা হোক। ২০১৫ সালে রাহুল নাকি দলের পুনরুজ্জীবনের একটি নীলনক্সা তার মায়ের কাছে পেশও করেছিলেন। তাতে এই সংক্রান্ত সুপারিশমালাও ছিল। কিন্তু সেই নীলনক্সায় ধুলা জমতে লেগেছে। শোনা যায় রাহুলের কারণেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ স্থগিত থেকেছে। এই সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগাই রাহুলের এক মস্ত সমস্যা। চলতি মাসে কংগ্রেসের সাংগঠনিক নির্বাচন হওয়ার কথা। ওতে রাহুল প্রেসিডেন্ট পদের জন্য লড়বেন এটা প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু সোনিয়া নাকি চান না রাহুল নির্বাচনী প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যান। কারণ তার আশঙ্কা ক্যাডারদের মধ্যে রাহুলের জনপ্রিয়তা নিয়ে সন্দেহ আছে যদিও ওই পদের জন্য তার বিরুদ্ধে কারও দাঁড়ানোর সম্ভাবনা তেমন নেই বললেই চলে। রাহুলের ঘনিষ্ঠ মহল সূত্রে জানা গেছে তিনি দলের সভাপতি হওয়ার পর র‌্যাডিকেল সব সিদ্ধান্ত নেয়া হবে যা দলকে চাঙ্গা করে তুলবে। তিনি দায়িত্ব নিলেই নাকি সিদ্ধান্ত গ্রহণের গতি ও দলের মৌলিক কাঠামো বদলে যাবে। প্রক্রিয়াটি নাকি ইতোমধ্যেই শুরু হয়েছে। প্রবীণদের জায়গায় তরুণ নেতারা অনেক রাজ্যর দায়িত্ব পাচ্ছেন। তবে এর মধ্যেও সামঞ্জস্যের অভাব আছে। রাহুলের দুই প্রিয়ভাজনের ওপর কুঠারাঘাত নেমে এলেও সাবেক ইউনিয়ন মন্ত্রী সিপি যোশী এবং অসম, বিহার, মণিপুর ও পশ্চিমবঙ্গের অনেক নিষ্ক্রিয় নেতার বিরুদ্ধে কিছুই করা হয়নি। তবে এটা ঠিক যে রাহুল নবীনদের গুরুদায়িত্ব নিয়ে আসার পাশাপাশি প্রবীণদেরও আস্থায় রাখছেন। তাদের সঙ্গে সেতুবন্ধন দৃঢ় করার চেষ্টা করছেন। তার সামনে যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তা হলো রাজ্যগুলোয় দলকে শক্তিশালী করা, রাজ্যে দলীয় কোন্দল বন্ধ করে নতুন নেতৃত্বে প্রাণসঞ্চার করা, নেতৃত্বের শীর্ষ কাঠামোকে ঢেলে সাজানো, নতুন মেধার প্রবেশ ঘটানো, দলকে সঠিক ও বলিষ্ঠ দিকনির্দেশনা দেয়া তার সামনে সত্যিকারের বড় চ্যালেঞ্জ ২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী মোদিকে মোকাবেলা করার যুতসই স্ট্র্যাটেজি ঠিক করা। এ মুহূর্তে তিনি আর এস এসকে টার্গেট করে দলিত, মুসলমান ও ক্ষুদে ব্যবসায়ীদের কংগ্রেসের পক্ষে টানার চেষ্টা করছেন। বিরোধী দলগুলোকে বৃহত্তর ঐক্যবদ্ধ প্লাটফর্মে নিয়ে আসার পরিকল্পনাও তার আছে। তবে নির্বাচনে জেতার মতো ইস্যু তার বড়ই প্রয়োজন। ইতোমধ্যে তিনি ঘোষণা করেছেন যে তার সেই ইস্যুটি হলো বেকারত্ব এই ইস্যুটিই মোদিকে ক্ষমতায় এনেছিল এবং সেটাই তার পতনের কারণ হতে পারে। রাহুল বলেছেন যে সরকার দৈনিক মাত্র ৫শ’ লোকের কর্মসংস্থান করছেন যেখানে ৩০ হাজার লোককে কাজ দেয়া প্রয়োজন। রাহুল কি তার চ্যালেঞ্জগগুলো মিটিয়ে কংগ্রেসকে আবার স্বমহিমায় ফিরিয়ে আনতে পারবেন? এ প্রসঙ্গে এক প্রবীণ কংগ্রেস নেতা বলেছেন, সোনিয়া ১৯৯৮ সালে দলের হাল ধরেছিলেন এবং কেন্দ্র কংগ্রেসের ক্ষমতায় আসতে ৬ বছর লেগেছিল। রাহুল তো এখনও যথার্থ অর্থে কা-ারীর ভূমিকায় আসেননি যদিও সিদ্ধান্ত নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় তিনি এক দশকেরও বেশি কাল ধরে সংশ্লিষ্ট আছেন। সূত্র : ইন্ডিয়া টুডে
×