ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্ব শান্তির অগ্রপথিক আইসিএএন

প্রকাশিত: ০৭:০৫, ১১ অক্টোবর ২০১৭

বিশ্ব শান্তির অগ্রপথিক আইসিএএন

সকল জল্পনার অবসান ঘটিয়ে চলতি বছর (২০১৭) শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছে পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণাকারী সংগঠনের জোট ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু এ্যাবলিশ নিউক্লিয়ার উইপনস (আইসিএএন)। নরওয়ের স্থানীয় সময় ০৬/১০/২০১৭ রোজ শুক্রবার ১১টায় সংগঠনটিকে আনুষ্ঠানিকভাবে শান্তিতে নোবেল জয়ী ঘোষণা করা হয়। পুরস্কার ঘোষণা করতে গিয়ে নোবেল কমিটি পারমাণবিক সংঘাতের ঝুঁকির বিষয়ে সতর্ক করে। নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির নেতা বেরিট রেইস এ্যান্ডারসন বলেন, আমরা এখন এমন এক বিশ্বে বাস করছি যেখানে পূর্ববর্তী সময়ের চেয়ে আরও বৃহত্তর পরিসরে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ মানবিক বিপর্যয়ের প্রতি মনোযোগ আকর্ষণ এবং এ ধরনের অস্ত্র বিলোপে একটি চুক্তির জন্য আইসিএসএনের প্রচেষ্টায় স্বীকৃতি হিসেবে এ সংঘঠনকে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। পুরস্কার জয়ের খবরে আইসিএএন নেতা বিট্রিস ফিন আনন্দ প্রকাশ করেছেন বলে বেরিট রেইস জানান। বিট্রিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সের মাধ্যমে জানা যায়, পারমাণবিক অস্ত্র বিলোপে প্রচারণা চালানো সংগঠন আইসিএএন ১০০টিরও বেশি দেশে তৃণমূল পর্যায়ে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। সর্ব প্রথম অস্ট্রেলিয়ায় কার্যক্রম শুরু করলেও সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয় ২০০৭ সালে ভিয়েনায়। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটির সদর দফতর সুইজারল্যান্ডের জেনেভায় অবস্থিত। পুরস্কার জয়ের পর ফেসবুকে একটি বিবৃতি দেয় আইসিএএন। বিবৃতিতে বলা হয়, নরওয়ের নোবেল কমিটি ২০১৭ সালের শান্তিতে নোবেল পুরস্কারটি আইসিএএনকে দেয়ার ঘোষণা দিয়েছে। পারমাণবিক অস্ত্রের ব্যবহার এবং এই ধরনের অস্ত্রের ওপর একটি চুক্তিভিত্তিক নিষেধাজ্ঞা অর্জনের ভূমি প্রচেষ্টার জন্য বিপর্যয়কর মানবিক পরিণামের দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করার জন্য সংগঠনটিকে পুরস্কৃত করা হলো। পারমাণবিক অস্ত্র মানবতা এবং পৃথিবীতে সমস্ত জীবন একটি ধ্রুবক হুমকির জাহির। আন্তর্জাতিক চুক্তি প্রণয়নের মাধ্যমে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ইতোমধ্যে ভূমি খনি ক্লাস্টার অস্ত্রসজ্জা এবং জৈবিক ও রাসায়নিক অস্ত্রের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করেছে। পারমাণবিক অস্ত্রগুলো অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক, কিন্তু এখনও একই রকম আন্তর্জাতিক আইনী নিষেধাজ্ঞা অবলম্বন করা হয়নি এই বিষয়ে। আইসিএএন কাজের মাধ্যমে এই আইনী ফাঁক পূরণে সাহায্য করেছে। পারমাণবিক অস্ত্র নিষিদ্ধ করণের পক্ষে যুক্তিযুক্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ যুক্তি হচ্ছে পারমাণবিক যুদ্ধের কারণেই অগ্রহণযোগ্য মানুষের দুঃখ-কষ্ট। আইসিএএন বিশ্বব্যাপী প্রায় ১০০টি বিভিন্ন দেশের বেসরকারী জোট। পারমাণবিক অস্ত্র নির্মূল, নিষিদ্ধ ও নষ্ট করার প্রচেষ্টায় সর্ব স্টোকহোল্ডারের সঙ্গে সহযোগিতার অঙ্গীকার করার জন্য জোটটি বিশ্ব নেতৃবৃন্দের ওপর প্রয়াস চালাচ্ছে। এখন পর্যন্ত ১০৮টি রাষ্ট্রকে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করেছে। যা মানবতাবাদী অঙ্গীকার হিসেবে পরিচিত। এটি এখন ৭১ বছর আগে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ থেকে প্রথম ধাপে, পারমাণবিক নিরস্ত্রীকরণ এবং পারমাণবিক অস্ত্রমুক্ত বিশ্বের কথা বলেছে। তাই এই বছরের শান্তি পুরস্কারটি আইসিএএনকে দিয়ে সম্মানিত করছে। এটা নরওয়েজিয়ান নোবেল কমিটির দৃঢ় বিশ্বাস, যা আইসিএএন অন্য যে কোন ব্যক্তির চেয়েও বেশি। গত বছরের পারমাণবিক অস্ত্র ছাড়া পৃথিবী অর্জনের প্রচেষ্টার একটি নতুন দিকনির্দেশনা এবং নতুন শক্তি আইসিএএন ফেসবুক বিবৃতিতে আরও বলেন, আণবিক যুগ শুরুর পর থেকে যারা পারমাণবিক অস্ত্র রোধে সোচ্চার থেকেছেন। এসব অস্ত্র রাখার বৈধ উদ্দেশ্য নেই দাবি করে যারা সরব থেকেছেন এবং বিশ্ব থেকে এ ধরনের অস্ত্র বিলোপ করতে যারা সোচ্চার থেকেছেন, সেই লাখ লাখ ক্যাম্পেনারও বিশ্বের উদ্বেগী মানুষকে পুরস্কারটি উৎসর্গ করা হচ্ছে। এ বছর নোবেল শান্তি পুরস্কারের জন্য ৩১৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে মনোনীত করা হয়। শেষ পর্যন্ত পুরস্কার জিতে নেয় আইসিএএন। আইসিএএন যেভাবে প্রতিষ্ঠা হয় : বিশ্বজুড়ে আইসিএএন প্রতিষ্ঠা করতে ২০০৬ সালের সেপ্টেম্বরে ফিনল্যান্ডে হেলসিনকিতে একটি প্রস্তাব অনুমোদন করে নোবেল পুরস্কার জয়ী আন্তর্জাতিক পারমাণবিক যুদ্ধবিরোধী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ফিজিশিয়ান্স ফর দ্য প্রিভেনশন অব নিউক্লিয়ার ওয়ার্স। ২০০৭ সালের ২৩ এপ্রিল অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে যাত্রা শুরু। ক্যাম্পেনের জন্য সেখানে তহবিল সংগ্রহ করা হয়। একই বছরের ৩০ এপ্রিল পারমাণবিক অস্ত্র বিরোধী চুক্তি ‘ট্রিটি অন দ্য নন প্রলিফারেশন অব নিউক্লিয়ার উইপনস নিয়ে আয়োজিত এক বৈঠকের মধ্য দিয়ে ভিয়েনায় সংঘটনটি আত্ম প্রকাশ করে। আইসিএএনের লক্ষ্য : আইসিএএনের ওয়েব সাইটে সংগঠনটির লক্ষ্যের কথা জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে। আইসিএএন চায় পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে যে হুমকি তৈরি হয়েছে, তা নিরস্ত্রীকরণ করা, এসব অস্ত্রের একক ধ্বংসাত্মক সক্ষমতার দিকে মনোযোগ আকর্ষণে কাজ করবে। একই সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্রের কারণে স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকিকে সামনে নিয়ে আসা। চিকিৎসা ও ত্রাণ ব্যবস্থার ওপর পারমাণবিক বিস্ফোরণের প্রভাব শিথিল করা এবং বিস্ফোরণে আশপাশের এলাকার তেজস্ক্রিয়তার দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব নিয়ে সচেতনতা তৈরি করবে সংগঠনটি। স্থলমাইন বিরোধী সংগঠন ইন্টারন্যাশনাল ক্যাম্পেন টু ব্যান ল্যান্ডমাইনসের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়েছেন আইসএএনের প্রতিষ্ঠাতারা। আইসিএএনের পাশে যারা রয়েছেন : শান্তিতে নোবেল জয়ী ডেসমন্ট টুটু। দালাইলামা, জোডি উইলিয়াম, সঙ্গীতশিল্পী হার্বি হ্যানবাক, ক্রিকেটের ইয়ান চ্যাপেল, অভিনেতা মার্টিন শীন ও মাইকেল ডগলাস, চিত্রশিল্পী ইয়োবেন অন্যের মতো খ্যাতনামা ব্যক্তিদের সমর্থন রয়েছে সংগঠনটির প্রতি। ২০১২ সালের নবেম্বরে আইসিএএস এবং এর অংশীদারদের প্রশংসা করেন জাতিসংঘের চ্যাপলিন মহাসচিব বান কি মুন। সূত্র : ইন্টারনেট
×