ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

মাহীয়ান দ্বীপ

টেনিসের নতুন রানী সিমোনা

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১১ অক্টোবর ২০১৭

টেনিসের নতুন রানী সিমোনা

আরও আগেই সম্ভাবনা জাগিয়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তীরে এসেই যেন তরী ডুবে তার। কয়েকবার বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের খুব কাছাকাছি পৌঁছার শিরোনাম হয়েও হোঁচট খান তিনি। শেষ পর্যন্ত শনিবার আসে কাক্সিক্ষত সেই মুহূর্ত। প্রথমবারের মতো বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে উঠেন সিমোনা হ্যালেপ। চীনা ওপেনের সেমিফাইনালে জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোকে পরাজিত করেই অবিস্মরণীয় এই কীর্তি গড়েন তিনি। শেষ চারে রোমানিয়ার এই টেনিস তারকা ৬-২ এবং ৬-৪ গেমে পরাজিত করেন লাটভিয়ার জেলেনা ওস্টাপেঙ্কোকে। আর সেই ম্যাচ জয়ের পরই শীর্ষস্থান নিশ্চিত হয়ে যায় তার। সেইসঙ্গে বিরল এক রেকর্ডেও উঠে যায় সিমোনা হ্যালেপের নাম। রোমানিয়ার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠার গৌরব অর্জন করেন তিনি। আর সবমিলিয়ে ২৫তম প্রমীলা খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্ব টেনিস র‌্যাংকিংয়ের প্রথম স্থানটি দখল করেন হ্যালেপ। তবে দুর্ভাগ্য তার। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান নিশ্চিত হওয়ার একদিন পরেই হারের তিক্ত অভিজ্ঞতার সাক্ষী হতে হলো রোমানিয়ান তারকাকে। ফাইনালে হ্যালেপকে পরাজিত করে চীনা ওপেনের শিরোপা নিজের শোকেসে তুলেন ক্যারোলিন গার্সিয়া। হ্যালেপের বিপক্ষে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লড়াইয়ে ৬-৪, ৭-৬ (৭-৩) গেমে জয় পান ফরাসি তারকা। চীন হয়ে উঠেছে গার্সিয়ার জন্য দারুন পয়মন্ত। কেননা গত সপ্তাহে উহান ওপেনের শিরোপা জিতেই ফেবারিট হিসেবে চীন ওপেনের কোর্টে নামেন তিনি। এবার বেজিংয়েও বাজিমাত করলেন গার্সিয়া। টানা দুই শিরোপা জয়ে এখন দারুণ সময় কাটছে গার্সিয়ার। চায়না ওপেনে প্রথম থেকেই বেশ বড় বড় ও স্বীকৃত প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে খেলতে হয়েছে তাকে। এলিজ করনেট, এলিনা সিতোলিনা এমনকি পেত্রা কেভিতোভার মতো তারকাদের হারিয়ে ফাইনালের টিকিট কাটেন তিনি। ফাইনালে দারুণ ফর্মে থাকা রোমানিয়ার সিমোনাকে প্রতিপক্ষ হিসেবে পান। আর সে কারণেই লড়াইটা হয়েছে দারুণ উত্তেজনাপূর্ণ। শেষ পর্যন্ত অবশ্য জিততে পারেননি হ্যালেপ। তাকে হারিয়েই টানা দুই শিরোপা জয় করেন গার্সিয়া। অথচ, চায়না ওপেনের সেমিফাইনালের আগেই ঊরুর ইনজুরিতে পড়েছেন। ঊরুতে স্ট্র্যাপ পেঁচিয়ে ফাইনালে নেমেছিলেন তিনি। সেই অবস্থায়ও শিরোপা জয় করলেন। তার লক্ষ্য এবার তিয়ানজিন ওপেন। চীনের শেষ পরীক্ষা গার্সিয়ার জন্য। এদিকে ক্যারিয়ারে এখন পর্যন্ত কোন গ্র্যান্ডস্লাম জিততে পারেননি। তবে এবার মোক্ষম সুযোগ পেয়েছিলেন ফ্রেঞ্চ ওপেন জয়ের। কিন্তু আশাভঙ্গ হয়েছে ওস্টাপেঙ্কোর কাছে হেরে। ২০১৪ সালেও এই ফ্রেঞ্চ ওপেনে শিরোপা হাতছাড়া হয়েছিল তার। ক্যারিয়ারে ১৫ ডব্লিউটিএ শিরোপা জিতলেও গ্র্যান্ডস্লাম তাই হাতে ওঠেনি সিমোনার। ২৬ বছর বয়সী এ তারকা কোন গ্র্যান্ডস্লাম ছাড়াই এবার বিশ্বের এক নম্বর হয়ে গেছেন। এ তালিকায় সিমোনার আগে কোন রোমানিয়ান ছিলেন না। দেশের জন্য এক অনন্য গৌরবই বয়ে আনলেন তিনি। জানুয়ারিতে বিশ্বের এক নম্বর সেরেনা উইলিয়ামস অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর কোর্টের বাইরে চলে যান মা হওয়ার জন্য। এরপর থেকে তার অবস্থানটা দখল করতে জোর যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। এ বছর সিমোনার আগে মোট ৪ জনকে র‌্যাঙ্কিংয়ের এক নম্বর হতে দেখা গেছে। জার্মানির এ্যাঞ্জেলিক কারবার, সেরেনা উইলিয়ামস, চেক প্রজাতন্ত্রের ক্যারোলিনা পিসকোভা এবং স্প্যানিশ টেনিস তারকা গারবিন মুগুরুজা। সর্বশেষ শীর্ষ তারকা হিসেবে এক নম্বরে থাকা মুগুরুজা মাত্র ৪ সপ্তাহ ছিলেন শীর্ষে। গত ৫২ সপ্তাহে সিমোনা জিতেছেন মাদ্রিদ ওপেন, ফ্রেঞ্চ ওপেন, ইতালিয়ান ওপেন, সিনসিনাতি ওপেন। শীর্ষে দশে টানা সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকার রেকর্ডও গড়েছেন সিমোনা। ২০১৪ সালের ২৭ জানুয়ারি তিনি প্রথম সেরা দশে ওঠেন। তারপর থেকে আর দশের নিচে নামেননি তিনি। এবার উইম্বলডনেই রেকর্ডটি হয় ১৮২ সপ্তাহ শীর্ষ দশে থাকার মাধ্যমে। এখন সেটা আরও দীর্ঘায়িত হয়েছে। শনিবার শীর্ষস্থান নিশ্চিত হলেও সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তা কার্যকর হয়। ৬,১৭৫ পয়েন্ট নিয়ে বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান দখল করেন তিনি। হ্যালেপকে জায়গা করে দিয়ে র‌্যাঙ্কিংয়ের দুইয়ে নেমে গেলেন গারবিন মুগুরুজা। স্প্যানিশ টেনিস তারকার পয়েন্ট ৬,১৩৫। গত বছর প্রথমবারের মতো টেনিস বিশ্বের পাদপ্রদীপের আলোয় উঠে এসেছিলেন তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনে ক্যারিয়ারের প্রথম গ্র্যান্ডস্লাম টুর্নামেন্ট জিতে। চলতি বছর উইম্বলডনে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। কিন্তু এরপর আর নিজেকে সেভাবে মেলে ধরতে না পারায় র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষস্থান হারাতে হয় তাকে। হ্যালেপ-মুগুরুজার পর র‌্যাঙ্কিংয়ের তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছেন ক্যারোলিনা পিসকোভা। চেক প্রজাতন্ত্রের এই টেনিস তারকার সংগ্রহে ৫৬০৫ পয়েন্ট। শীর্ষ পাঁচে রয়েছেন যথাক্রমে ইউক্রেনের এলিনা সিতলিনা এবং ভেনাস উইলিয়ামস। ৫৪৬৫ পয়েন্ট নিয়ে চারে সিতলিনা এবং ৪৬৫২ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে অবস্থান ভেনাসের। চলতি বছরের বেশিরভাগ সময়ই আলোচনায় ছিলেন উইলিয়ামস পরিবারের দুই বোন সেরেনা-ভেনাস। যদিওবা অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর আর কোর্টেই দেখা যায়নি সেরেনা উইলিয়ামসকে। তবে কোর্টের বাইরেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন তিনি। কেননা গত মাসেই যে কন্যা সন্তানের মা হয়েছেন বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের সাবেক নাম্বার ওয়ান তারকা। আর ভেনাস উইলিয়ামস দীর্ঘদিন পর আবারও গ্র্যান্ডস্লাম জয়ের খুব কাছাকাছি এসেও তা নিজের শোকেসে তুলে নিতে ব্যর্থ হয়েছেন। র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে রয়েছেন যথাক্রমে ডেনমার্কের ক্যারোলিন ওজনিয়াকি, লাটভিয়ার জেলেনা ওস্টাপেঙ্কো, রাশিয়ার সভেতলনা কুজনেতসোভা, ফ্রান্সের ক্যারোলিনা গার্সিয়া এবং গ্রেট ব্রিটেনের জোহানা কন্টা। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চমক ওস্টাপেঙ্কো। লাটভিয়ার ইতিহাসে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে মেজর কোন টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ পান তিনি। ফ্রেঞ্চ ওপেনের শিরোপা জয়ের পুরস্কার হিসেবেই বিশ্ব টেনিস র‌্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ দশে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। বর্তমানে সপ্তম স্থানে থাকা ওস্টাপেঙ্কোর লক্ষ্য এখন নতুন মৌসুম। যেখানে নিজের সেরাটা দিতেই মরিয়া লাটভিয়ার এই টেনিস তারকা। গত মৌসুমটা দুর্দান্ত কেটেছিল এ্যাঞ্জেলিক কারবারের। কিন্তু এবার খুব বাজে কেটেছে জার্মান তারকার। যে কারণেই ছিটকে গেছেন ১২ নম্বরে। তবে শীর্ষ বিশেও জায়গা নেই ২৩টি গ্র্যান্ডস্লামের মালিক সেরেনা উইলিয়ামসের।
×