ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মুম্বাইয়ে দেশের হয়ে ক্রীড়াবিদরা খেলবেন নিজেদের টাকায়

শরীর গঠন ফেডারেশনের তেলেসমাতি

প্রকাশিত: ০৬:৪৯, ১১ অক্টোবর ২০১৭

শরীর গঠন ফেডারেশনের তেলেসমাতি

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আসন্ন ১৩-১৫ অক্টোবর ভারতের মুম্বাইয়ে অনুষ্ঠিতব্য মিস্টার অলিম্পিয়া এ্যামেচার ইন্ডিয়া প্রতিযোগিতায় প্রতিনিধিত্ব করার জন্য বাংলাদেশ শরীর গঠন ফেডারেশন থেকে চার সদস্যের দল সেখানে যাচ্ছে। আজ মুম্বাই যাচ্ছেন বাংলাদেশের তিন বডিবিল্ডার। তারা হলেন সুমন চন্দ্র দাস (৮০ কেজি), নাজমুস সাকিব ভুঁইয়া (৭০ কেজি) ও আনোয়ার হোসেন (৭০ কেজি)। এছাড়া দলের সঙ্গে অফিসিয়াল হিসেবে যাচ্ছেন পেয়ার মোহাম্মদ। বিশ্বের ৫০টির বেশি দেশের বডিবিল্ডাররা পাঁচটি ডিসিপ্লিনের বিভিন্ন ইভেন্টে অংশ নেবেন এই আসরে। বাংলাদেশ দল মেনস বডিবিল্ডিং ইভেন্টে অংশ নেবে। এ উপলক্ষে মঙ্গলবার বাংলাদেশ অলিম্পিক এ্যাসোসিয়েশন অডিটরিয়ামে এসব তথ্য জানান ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম। এ সময় ফেডারেশনের সহ-সভাপতি মোঃ শাহাবুদ্দিন ও কোষাধ্যক্ষ জহির চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। প্রেসমিটে জানানো হয় ভারতগামী খেলোয়াড়দের সম্পূর্ণ খরচ বহন করছে বাংলাদেশ এ্যামেচার বডিবিল্ডিং ফেডারেশন। এছাড়া তিন বডিবিল্ডারকে ১০ হাজার টাকা করে পকেটমানিও দিচ্ছে তারা। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছেÑ প্রকৃতপক্ষে বডিবিল্ডাররা সেখানে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ নিজেদের টাকায়। ফেডারেশন এখানে নিজেদের ইমেজ বৃদ্ধি করতেই এমন প্রচারণা চালায়। ঠিক যেমনটি করেছিল কয়েকমাস আগে আরেক বডিবিল্ডার হাসিব হলির বেলাতেও। গত মধ্য জানুয়ারিতে সিঙ্গাপুরে ‘নাব্বা ওয়ার্ল্ড ফিটনেস ফেডারেশন এশিয়া মাসল ওয়ার’ বডিবিল্ডিং প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনুর্ধ-২৪ জুনিয়র বিভাগে জিতে নেন স্বর্ণপদক। যা বাংলাদেশের বডিবিল্ডিংয়ের ইতিহাসে প্রথম। অথচ এই বডিবিল্ডারকে দিয়ে নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে না পারায় বিরাগভাজন হয়ে তাকে আজীবন নিষিদ্ধ করে ফেডারেশন। সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি যে কতটা দূর্নীতিগ্রস্ত, সে প্রসঙ্গ টেনে ফেডারেশনের এক গুরুত্বপূর্ণ সদস্য বলেন, কোন্ সুবিধাবলে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের হোস্টেল থাকা সত্ত্বেও বডিবিল্ডিংয়ের জিমনেশিয়ামটিতে নির্বাহী কমিটির এক সদস্যকে বসবাসের সুযোগ দেয়া হয়েছে? অভিযোগ রয়েছে, সেখানে অবস্থানরত একজন অল্পবয়সী ছেলে মাদকের সঙ্গে জড়িত এবং রাতে ভাসমান মেয়েদেরও ঘোরাফেরা করতে দেখা যায়। যা স্টেডিয়ামের পরিবেশ নষ্ট করছে বলে দীর্ঘদিন যাবত অভিযোগ করে আসছে আশেপাশের দোকানদার ও স্টেডিয়ামের নিরাপত্তারক্ষীরা। ফেডারেশনে এ বিষয়টি নিয়ে একাধিকবার শরীর গঠনবিদরা জিমের পরিবেশ ফিরিয়ে দেবার দাবি তুললেও তা কর্ণপাত করেননি সাধারণ সম্পাদক বরং জিমে কার্ডধারীদের অনুশীলন বন্ধ করে আরও পোক্তভাবে ওই ব্যক্তি ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের বসবাসের অবৈধ সুযোগ করে দেন। নজরুল সবসময়ই প্রেস রিলিজে নিজের নামের সঙ্গে ‘সাবেক মিস্টার বাংলাদেশ’ শব্দটি যোগ করে থাকেন। যা দৃষ্টিকটু। আদৌ তিনি মিস্টার বাংলাদেশ ছিলেন কি না, তা নিয়ে রয়েছে ঢের সংশয়। অভিজ্ঞ সংগঠকদের অনেকেই বলেন, তিনি আদতে বডিবিল্ডারই ছিলেন না। ছিলেন একজন কুস্তিগীর। তার কখনই ‘সিক্স প্যাক’ও ছিল না। আদর্শ বডিবিল্ডারদের মতো শারীরিক গঠনও ছিল না। প্রবাদে আছে, ‘চেনা বামনের পৈতা লাগে না। নকল বামনই পৈতা লাগিয়ে নিজেকে জাহির করতে চায়।’ এ ব্যক্তিকে নিয়ে ক্রীড়াঙ্গনে রয়েছে সমালোচনা। একজন সাধারণ সম্পাদক হওয়ার পরও একই সঙ্গে আরেকটি ফেডারেশনে যুগ্ম সম্পাদক ও আরেকটি ফেডারেশনের সদস্য হিসেবে কাজ করছেন যা অন্য ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদকদের জন্য বিষয়টি লজ্জার। সাধারণ সম্পাদকের স্বেচ্ছাচারিতার কারণেই বাংলাদেশের বডিবিল্ডিং উন্নতি করতে পারছে না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কার্যনির্বাহী সদস্য এবং কিছু বডিবিল্ডার বলেন, ‘নজরুল হচ্ছে বডিবিল্ডিংয়ের ক্যান্সারস্বরূপ। এ্যাডহক কমিটিতে ১৯৯৪ সালে সাদেক হোসেন খোকার হাত ধরে আসা এই সম্পাদক এখন অতিমাত্রায় বর্তমান সরকারের অনুগত লোক হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। সরকারের প্রভাবশালী এক সাবেক আমলার ছত্রছায়ায় বহাল তবিয়তেই এই আমলেও ফেডারেশনে থেকে দাপটের সঙ্গেই অরাজকতা চালিয়ে যাচ্ছেন।’ অভিযোগ রয়েছে ফেডারেশনের নির্বাহী কমিটির কার্যক্রম চালান কোন সভা ছাড়াই। এজিএম বা ইজিএম নিয়মমাফিক হয় না। আসন্ন ফেডারেশনের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কাউন্সিলারের সংখ্যা যেন না বাড়ে তাই এবারের জাতীয় প্রতিযোগিতারও আয়োজন করেননি। বর্তমান কাউন্সিলরদের অধিকাংশই প্যাডস্বর্বস্ব ক্লাবগুলো, অথচ অতীতে প্রতিষ্ঠিত ক্লাবগুলো খেললেও এখন তাদের ফেডারেশন থেকে আমন্ত্রণই জানানো হয় না। ফেডারেশনের আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যেই ক্যালেন্ডার-বহির্ভূত বিভিন্ন অনুষ্ঠান করে সেখানে মন্ত্রী বা এমপিদের দাওয়াত করে নিয়ে আসেন। এতে করে নিজেকে খাঁটি আওয়ামী লীগার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করে আবারও ক্ষমতায় টিকে থাকাই তার ভবিষ্যত লক্ষ্য। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এ ধরনের মুখোশধারী লোকদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে সঠিক ভূমিকা পালন করবেÑ এমনটাই প্রত্যাশা ক্রীড়ামোদীদের।
×