ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সিলেকশন বোর্ডের সভা শেষ ;###;ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ;###;চলতি মাসেই চূড়ান্ত ব্যবস্থা

জন প্রশাসন ॥ পদোন্নতি তিন স্তরে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ১১ অক্টোবর ২০১৭

জন প্রশাসন ॥ পদোন্নতি তিন স্তরে

তপন বিশ্বাস ॥ সিভিল প্রশাসনে তিন স্তরে পদোন্নতি দিতে যাচ্ছে সরকার। এই লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। কয়েক দফা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ডের (এসএসবি) সভা ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। আরও কয়েকটি সভা শেষে চলতি অক্টোবরে পদোন্নতি দেয়ার লক্ষ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় কাজ করে যাচ্ছে। এবার পদোন্নতিতে বিবেচনায় আনা হচ্ছে বঞ্চিত কর্মকর্তাদেরও। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সম্প্রতি বেশ কয়েকটি বৈঠক করেছে এসএসবি। এসব বৈঠকে তিন স্তরে পাঁচ শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার জন্য সদস্যরা প্রাথমিকভাবে একমত পোষণ করেছেন। তবে বিষয়টি চূড়ান্ত করতে আরও কয়েকটি বৈঠকের প্রয়োজন হবে। উপ-সচিব পদে বিসিএস (প্রশাসন) ক্যাডারের ২৪তম ব্যাচ, যুগ্মসচিব পদে ১৩তম এবং অতিরিক্ত সচিব পদে নবম ও দশম ব্যাচের কর্মকর্তাদের বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এ ছাড়া আগে বিভিন্ন কারণে পদোন্নতিবঞ্চিত হয়েছেন, এমন অর্ধশতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতির জন্য বিবেচনায় আনা হতে পারে। সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনের তিন স্তরের পদোন্নতির বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় যাচাই-বাছাই চলছে। লেফটআউট (বঞ্চিত) কর্মকর্তাদের বিষয়গুলোও বিবেচনা করা হবে। এটি চলমান প্রক্রিয়া। চলতি মাসের মধ্যে পদোন্নতি দেয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রশাসনে এবার তিন ধাপে পদোন্নতির কাজ চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইতোমধ্যেই উপ-সচিব পদে পদোন্নতির সুপারিশ করতে ২৪তম ব্যাচের ৩৩৩ কর্মকর্তার মধ্যে ২৯০ জনের প্রয়োজনীয় তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। এ ছাড়া ২২তম ব্যাচের লেফটআউটসহ উপ-সচিব পদে পদোন্নতির জন্য ২০০ কর্মকর্তাকে বিবেচনা করা হতে পারে। লেফটআউট কর্মকর্তাসহ ১৩তম ব্যাচের ১৬৫ যুগ্মসচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন অনেক আগেই। তবে এ ক্ষেত্রে শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হতে পারে। এ ছাড়া অতিরিক্ত সচিব পদে দেড় শতাধিক কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। ইতোমধ্যে অতিরিক্ত সচিব হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন নবম ব্যাচের ৫২ এবং ১০ম ব্যাচের ১০২ কর্মকর্তা। পদোন্নতির জন্য তাদেরই মূলত বিবেচনায় নেয়া হচ্ছে। এর পাশাপাশি যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আগে পদোন্নতিবঞ্চিত ১৯৮২ বিশেষ ব্যাচের ১৪, ১৯৮৪ ব্যাচের ৬১, ১৯৮৫ ব্যাচের ১৬০, ১৯৮৬ ব্যাচের ৩২ কর্মকর্তার মধ্য থেকে ৭৭ কর্মকর্তাকে এবার পদোন্নতি দেয়ার সুপারিশ করতে পারে এসএসবি। সংশ্লিষ্ট অপর এক কর্মকতা বলেন, প্রশাসনে তিন স্তরের পদোন্নতি দিতে কাজ চলছে। যারা পদোন্নতি পাওয়ার যোগ্য, তারাই পাবেন। এবার কতজন পদোন্নতি পাচ্ছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এটা সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড বলতে পারবে। এদিকে এ পদোন্নতিকে ঘিরে আশা-নিরাশার দোলাচলে রয়েছেন এর আগে পদোন্নতিবঞ্চিত সিনিয়র ব্যাচের কর্মকর্তারা। তাদের কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু প্রতিটি ধাপে বিপুলসংখ্যক পদোন্নতিবঞ্চিত কর্মকর্তা লেফটআউট হিসেবে রয়েছেন, তাই তাদের বিষয়টি পৃথকভাবে বিবেচনা করা প্রয়োজন। তা না হলে নতুনদের সঙ্গে তাদের বিবেচনা করা হলে তদ্বিরের জোরে স্বল্পসংখ্যক কর্মকর্তার ভাগ্য সুপ্রসন্ন হতে পারে মাত্র। এতে ফের আরও এক দফা বঞ্চনার শিকার হতে হবে অনেক দক্ষ ও যোগ্য কর্মকর্তাকে। বিপরীতে এসব ধাপে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যারা প্রথমবারের মতো বিবেচিত হবেন বলে প্রত্যাশা করে আছেন, তাদের মত ভিন্ন। অতিরিক্ত সচিব পদে পদোন্নতি প্রত্যাশী নবম ও দশম ব্যাচের কয়েক কর্মকর্তা বলেন, প্রশাসনে পদোন্নতির ক্ষেত্রে যুগ যুগ ধরে যে ধারাবাহিকতা চলমান আছে তাই হওয়া উচিত। অন্যদের জন্য তারা কেন ভুক্তভোগী হবেন। আর প্রশাসনে প্রতিটি ধাপে সবাই তো পদোন্নতি পাবেন না। এটিই প্রশাসন পিরামিড গড়ে তোলার স্বীকৃত নিয়ম। তারা বলেন, বিগত বিএনপি সরকারের সময়ে সব ধরনের নিয়মনীতি লঙ্ঘন করে বেছে বেছে শুধু তাদের সমর্থকদের পদোন্নতি দেয়া হয়। এখন আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে সরকারবিরোধী মানসিকতার চিহ্নিত অনেক কর্মকর্তাও পদোন্নতি পাচ্ছেন। তারা বলেন, যেহেতু তারা অতিরিক্ত সচিব হওয়ার সব যোগ্যতা অর্জন করেছেন তাই তাদের পদোন্নতি স্বাভাবিক ও নির্বিঘœ হবেÑ এটিই তাদের প্রত্যাশা। সর্বশেষ গত ২৪ এপ্রিল ২৬৭ সিনিয়র সহকারী সচিবকে উপসচিব পদে পদোন্নতি দেয়া হয়। এর মধ্যে ২২তম ব্যাচেরই ১৯৩ কর্মকর্তা ছিলেন। এ ব্যাচের ৫২ কর্মকর্তাকে বঞ্চিত করার অভিযোগ ওঠে। এর আগে গত বছরের ২৭ নবেম্বর প্রশাসনের তিন স্তরে উপসচিব, যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদে ৫৭০ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয় সরকার। এর মধ্যে উপসচিব পদে ২২৭, যুগ্মসচিব পদে ১৯৫ এবং অতিরিক্ত সচিব পদে ১৪৮ কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেয়া হয়। প্রসঙ্গত, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের হিসেবে, বর্তমানে উপসচিবের নিয়মিত (ডিউটি) ৮৩৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত আছেন এক হাজার ৫৫২ কর্মকর্ত। যুগ্মসচিবের ৪৩০টি স্থায়ী পদের বিপরীতে এ স্তরে কর্মরত আছেন ৭৯৮ কর্মকর্তা। অতিরিক্ত সচিবের ১১১টি স্থায়ী পদের বিপরীতে আছেন ৪৫৫ কর্মকর্তা।
×