ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

একই টেবিলে-

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ১১ অক্টোবর ২০১৭

একই টেবিলে-

অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে, দুর্ভোগ, হয়রানি সয়ে সয়ে, এ অফিস ও অফিস, এ টেবিল, সে টেবিল পেরিয়ে তবেই আমদানি-রফতানি সেবার হদিস মেলে। ঘুষ, দুর্নীতি, আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ইত্যাদি অধ্যায় পাড়ি দিতে পদে পদে দুর্ভোগ মেনে নিতে হয়। বর্তমান ব্যবহার পণ্য আমদানি থেকে শুরু করে রফতানি পর্যন্ত পুরো প্রক্রিয়া চালাতে ব্যাংকের এলসি খোলা, পণ্যের মান পরীক্ষাসহ আরও কিছু বিষয়ের অনুমোদনের জন্য ঘুরতে হয় নানা সরকারী অফিসে। অপচয় যেমন হয় সময়ের, তেমনি নানাবিধ হেনস্থারও মুখোমুখি হতে হয়। এই অবস্থা পুরনো হলেও তার খোল নলচে বদলানোর জন্য ব্যবসায়ীরা বহুদিন থেকে বলে বলে ক্লান্ত প্রায়। বিদেশে এই প্রক্রিয়াগুলো সরেজমিন পরিদর্শন ও প্রশিক্ষণ নেয়া হলেও কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। স্থিতাবস্থা বহাল রাখার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরগুলো ছিল ঐক্যবদ্ধ। এতে তারা কোন না কোনভাবে যে কামিয়াব হয়ে থাকেন তা বলাইবাহুল্য। দীর্ঘদিনের এই অব্যবস্থা, অসহনীয় অবস্থার বিলুপ্তি ঘটতে যাচ্ছে অবশেষে। বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) একটি নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে। ‘ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো’ (এনএসডব্লিউ) নামের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সুফল আসার সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছে। আশার কথা যে, বিদ্যমান অবস্থা বদলে যাচ্ছে। আমদানি-রফতানি সেবা এই প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে মিলবে এক জায়গায়। ঘরে বা অফিসে বসেই পাবেন ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তারা এই সেবা। এজন্য প্রয়োজন হবে সংশ্লিষ্ট সরকারী ও বেসরকারী সংস্থাকে অটোমেশনের আওতায় এনে পরস্পরের মধ্যে যুক্ত করা। শুল্ক বিভাগকে আধুনিকায়নের লক্ষ্যে চলমান ট্রেড ফ্যাসিলিয়েশন প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে যেসব সুবিধা মিলবে বলা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে পণ্য দ্রুত খালাস হবে, শুল্কায়ন প্রক্রিয়া আরও সহজ হবে, হয়রানি কমবে ব্যবসায়ীদের। পাশাপাশি আমদানি-রফতানি কর্মকা- গতিশীল হতে বাধ্য। কিন্তু এসব কাজেও যদি অবহেলা, ঔদাসীন্য, গাফিলতি ইত্যাদি নানা কিসিমের ঝুট-ঝামেলা দেখা দেয় তবে তো বিপত্তি বাড়বে। উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হবে ৫৮৫ কোটি টাকা ব্যয়ের এ প্রকল্পে বাংলাদেশ জোগান দেবে ৫২ কোটি টাকা। যা মোট প্রকল্প ব্যয়ের নয় ভাগ। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। শেষ হতে সময় নেবে তিন বছর। সুতরাং ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা এই সময়কালে দুর্ভোগ, হয়রানিমুক্ত হওয়ার ক্ষেত্রে কোন সহায়তা পাবেন কিনা তা অনিশ্চিত। বর্তমানে আমদানি-রফতানি প্রক্রিয়ায় পনেরোটি মন্ত্রণালয়ের তেত্রিশটি বিভাগ প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে জড়িয়ে আছে। যেমন ভোগান্তির ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে আমদানি-রফতানি নিবন্ধীকরণ সনদ বা আইআরসি ও ইআরসির জন্য যেতে হয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে সিসিআই এ্যান্ড-ই ও ইপিবি অফিসে। পণ্যের মান পরীক্ষার সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বিএসটিআই। ওষুধের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে ড্রাগ অধিদফতর। এলসি খুলতে হয় ব্যাংকে। বিজনেস আইডেনটিফিকেশন বা বিআইএন দেয় ভ্যাট দফতর। খাদ্যপণ্যের পরীক্ষার জন্য সনদ দেয় পরমাণু শক্তি কমিশন। পণ্য খালাস ও শুল্কায়ন করে থাকে এনবিআরের অধীনে বিভিন্ন কাস্টমস হাউস। সরকারী এসব সংস্থাই শেষ নয়, এর বাইরেও আছে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, ফ্রেইট ফরোয়ার্ড এসোসিয়েশন, সিএ্যান্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশন ইত্যাদি সংস্থা বা দফতর । তাদের আরও তিন বছর এই ধকল পেরিয়ে যেতে হবে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়াকে মেনে নেয়ার অভ্যাসের কারণেই। তবু নতুন প্রকল্পটি সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে বাস্তবায়ন এবং কার্যকর হোক সেটাই কাম্য।
×