ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এনামুল হক

ভারতে অনলাইন ঘটকালি শিল্পের দ্রুত প্রসার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ১১ অক্টোবর ২০১৭

ভারতে অনলাইন ঘটকালি শিল্পের দ্রুত প্রসার

ভারতে বিবাহকে ঘিরে যে শিল্প আছে তার বার্ষিক মূল্য ৫ হাজার কোটি ডলার। দেশটিতে পারিবারিক আয়োজনে বিয়ে এখনও মূলধারা হিসাবে বহমান। ভারতে ১৯৮০ থেকে ১৯৯৬ সালের মধ্যে জন্ম নেয়া নরনারীর সংখ্যা ৪৪ কোটি। এছাড়া রয়েছে আরও ৩৯ কোটি তরুণ যাদের জন্ম ২০০০ সাল কি তার পরে। কাজেই সন্তানের বিয়ের জন্য ঘটকের দ্বারস্থ হওয়া চিন্তাগ্রস্ত বাবা-মায়ের সংখ্যা যে প্রচুর হবে তাতে সন্দেহ নেই। বিখ্যাত কনসালটেন্সি ও হিসাব নিরীক্ষণ ফার্ম কেপিএমজির হিসাবে ভারতে অবিবাহিত নারী ও পুরুষ রয়েছে ১০ কোটি ৭০ লাখ। এরমধ্যে ৬ কোটি ৩০ লাখ সক্রিয়ভাবে জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সন্ধানে লিপ্ত। এখন পর্যন্ত এদের মাত্র ১০ শতাংশ পাত্র বা পাত্রীর জন্য ইন্টারনেটে সন্ধান করে। তবে এদের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেতে যাচ্ছে। ভারতে ম্যারেজ পোর্টাল ব্যবসার সাইট আছে ২৬০০। ফেসবুকের যাত্রা শুরু হবার পর মানুষ তাদের জীবন নিয়ে আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি খোলামেলা কথা বলছে। বিবাহ সংঘটনে এরও একটা প্রভাব পড়ছে। ভারতের প্রথম বৃহত্তম অনলাইন ঘটকালি কোম্পানি ম্যাট্রিমনি ডট কম সম্প্রতি প্রথমবারের মতো বাজারে শেয়ার ছেড়ে ৭ কোটি ৮০ লাখ ডলার সংগ্রহ করেছে। এটি বিভিন্ন জাত ও ধর্মের প্রয়োজন মেটানোর উপযোগী করে ১৫টি ভাষায় এক ওয়েব সাইট চালায়। ডিভোর্সি, পঙ্গু ও যাদের হস্তরেখা বিবাহের অনুকূল নয় তাদের জন্য ও এর আলাদা সাইট আছে। সকল অনলাইন ফার্ম একটা ‘ফ্রিমিয়াম’ মডেল চালায়। সে অনুযায়ী বিনা চার্জে প্রোফাইল আপলোড করতে হবে এবং তারপর একটা এলগোরিদম দিয়ে সম্ভাব্য জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর বয়স, জাত, শিক্ষা, আয়, গাত্রবর্ণের সঙ্গে নিজের এসব বৈশিষ্ট্য মিলিয়ে নিতে হবে। ম্যাচিং হয়ে গেলে পয়সা দিতে হবে। অথবা তাৎক্ষণিক চ্যাটিং কিংবা নিজের প্রোফাইলের চারপাশে রঙিন বর্ডার দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্যের জন্য পারিশ্রমিক দেয়া যেতে পারে। বিভিন্ন অপশনের এত দীর্ঘ তালিকা থাকার অর্থ ওয়েবে যুৎসই পাত্র বা পাত্রী খুঁজে পাওয়া সময়সাপেক্ষ ও বিরক্তিকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াতে পারে। এ যেন খড়ের গাদায় সুই খুঁজতে যাওয়া। আবার অনেকের অভিযোগ অনলাইন প্রোফাইলগুলোতে অনেক সময় বাস্তবতার প্রতিফলন থাকে না। আবার প্রতারণার ব্যাপারও থাকে। সম্প্রতি দিল্লীতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। সে ১৫ জন মহিলাকে প্রলুব্ধ করে ম্যাট্রিমনিয়াম ওয়েবসাইটে এনে তাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ রূপী আদায় করেছিল। স্পাউজ আপ নামে দক্ষিণ ভারতের আরেকটি স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান আছে, যার কাছ হচ্ছে, টানা জাল দিয়ে টেনে তোলার মতো করে সোশাল মিডিয়ায় একজন প্রার্থীর ব্যক্তিত্বের সবকিছু নির্ণয় করে ‘কমপ্যাটিবিলিটি স্কোর’ দিয়ে হিসাব করে উপযুক্ত পাত্রপাত্রীর সুপারিশ করা। এই অনলাইন ম্যাচমেকারের ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীর সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার। এর নয় দশমাংশই হলো অনিবাসী ভারতীয় যারা এক মাসের মতো সময় হাতে নিয়ে ভারতে আসে, জীবনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর সন্ধান করে, তারপর একটাকে বেছে নিয়ে যেখান থেকে এসেছে সেখানে পাড়ি জমায়। ভারতে ৯৫ শতাংশ বিয়ে নিজস্ব জাত পাতের মধ্যেই ঘটে। ফলে একেক জাতের পাত্রপাত্রীর ঘটকালির জন্য রয়েছে একেক ওয়েব সাইট। তাছাড়া মুসলমানদের, খ্রীস্টানদের ঘটকালির জন্য আলাদা আলাদা সাইট আছে। এভাবে এসব সাইটের সংখ্যা বেশ কয়েকশ ছাড়িয়ে যাবে। অপারেটিং কস্ট কম থাকায় বিচক্ষণতার সঙ্গে বিনিয়োগ করলে ভারতে জিডিটাল ঘটকালি শিল্পের ভাল মুনাফা করার সুযোগ থাকে। অনেকে তো এই অনলাইনে ঘটকালির চুটিয়ে ব্যবসা করছে। ভারতে অনলাইনের জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় এক বছর আগে ছিল ৩৯ কোটি। মোবাইল অপারেটর রিলায়েন্স জিও চালু হবার পর ড্যাটা প্রাইস বহুলাংশে কমে যাওয়ায় অনলাইনে বিবাহ সার্ভিসের বাজারেরও ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটতে যাচ্ছে। জিজিটাল শ্রেণীভুক্ত বৈবাহিক সার্ভিসে ভারতের ব্যয় ২০১৫ সাল পর্যন্ত ৫ বছরে প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে। আগামী পাঁচ বছরেও এসব সার্ভিসের পিছনে ব্যয়ের অনুরূপ প্রবৃদ্ধি ঘটবে। একজন গড় ভারতীয় সারা জীবনে যে সম্পদ জমায় তার এক-পঞ্চমাংশ সন্তানের বিয়ের পিছনে খরচ করে। ফলে ঘটকালি ও বৈবাহিক সার্ভিস শিল্পের বিশাল সম্ভাবনাময় বাজার রয়েছে ভারতে। অনলাইনে ঘটকালি ও পাত্রপাত্রী নির্বাচন তাৎক্ষণিক সুবিধাজনক ও এতে গোপনীয়তা রক্ষিত হয়। উপযুক্ত জীবনসঙ্গী নির্বাচনের এ এক শক্তিশালী হাতিয়ার এবং এই হাতিয়ারের প্রয়োগ থেকে ক্রমবর্ধমান সংখ্যায় সফল বিবাহ ঘটছে। ব্যাপক পরিসরে বিস্তৃত বৈবাহিক সাইটগুলো সমাজেও বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটাচ্ছে। এমন সাইটের অস্তিত্ব আগে থেকেই আছে। কিন্তু সেটা নতুন বৈশিষ্ট্য তা হলো এই অবিবাহিত জুটি নেটের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে ফটো, ভিডিও মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি বিনিময়ের মধ্য দিয়ে পরস্পরকে নির্বাচন করছে। অনলাইনে ঘটকালি ও বৈবাহিক বিষয়াদি নির্ধারণের কতগুলো সুবিধা আছে। এতে সময় ও অর্থের সাশ্রয় হয়, উভয় পক্ষের জন্য স্বাচ্ছন্দ্যকর, জীবনসঙ্গী নির্বাচন সহজ। এই অনলাইন ব্যবস্থাটি ব্যবহারকারীবান্ধব, নিরাপত্তার উন্নত ব্যবস্থা আছে। সঠিক নির্বাচনে সময়ও লাগে কম। অনলাইন পদ্ধতি পাত্রপাত্রী নির্বাচনের প্রচলিত ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা দূর করে দিয়েছে ঘটকালি ব্যবস্থায়ও এনেছে পরিবর্তন। এর ফলে অনলাইন ঘটকালি শিল্পের দ্রুত প্রসার ঘটে চলেছে। সূত্র : দি ইকোনমিস্ট
×