ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নওগাঁর শুঁটকিপল্লীতে ব্যস্ততা বেড়েছে

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ অক্টোবর ২০১৭

 নওগাঁর শুঁটকিপল্লীতে ব্যস্ততা বেড়েছে

বিশ্বজিৎ মনি, নওগাঁ ॥ মৎস্য ভান্ডর খ্যাত উত্তরের নওগাঁ জেলার আত্রাইয়ে এ বছর স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে জেলেদের জালে ধরা পড়তে শুরু করেছে দেশী প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। আর এমন পর্যাপ্ত পরিমাণ মাছ ধরা পড়াতে স্থানীয় শুঁটকি ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে আনন্দের ঝিলিক বইছে। সেই সঙ্গে শুঁটকি তৈরির কাজে এখন মহাব্যস্ত সময় পার করছেন এখানকার শুঁটকি পল্লীর ব্যবসায়ীরা। এলাকা জুড়ে এখন চলছে নানা ধরনের মাছের শুঁটকি তৈরি ধুম। গত কয়েক বছরে শুঁটকি ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হলেও এবার তা পুষিয়ে নিতে তারা কোমর বেঁধে শুঁটকি তৈরির কাজে মাঠে নেমেছেন। এবার বন্যায় এলাকার শত শত চাষ করা মাছের পুকুর ভেসে যাওয়ায় নদীতে দেশী মাছের বিচরণ অনেক বেড়ে গেছে। তাই জেলেরা নদীতে উৎসাহ নিয়েই মাছ ধরছেন। ধরাও পড়ছে দেশীয় প্রজাতির নানা ধরনের মাছ। আর এ মাছ প্রতিদিন ভোর থেকে বিক্রি হচ্ছে আত্রাইয়ের আহসানগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন টোলমুক্ত ঐতিহ্যবাহী মাছের আড়তে। এলাকার ব্যবসায়ীরা দেশী মাছ বিশেষ করে পুঁটি, রাইখোর, চাঁন্দা, শোল, টাকি, বোয়াল মাছ দিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, নওগাঁর আত্রাই উপজেলা থেকে রেল, সড়ক ও নৌপথে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রতিদিন শত শত টন মাছ বাজারজাত করা হয়। রাজধানী ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ উত্তরাঞ্চলের সৈয়দপুর, রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁসহ দেশের প্রায় ১৮/২০টি জেলায় বাজারজাত হয় ঐতিহ্যবাহী খ্যাতি সম্পন্ন আত্রাইয়ের শুঁটকি মাছ। আর এই মাছের শুঁটকি তৈরি করে এখন জীবিকা নির্বাহ করছে আত্রাইয়ের শুঁটকিপল্লীর ব্যবসায়ীরা। শুঁটকিপল্লী হিসেবে উপজেলার ভরতেঁতুলিয়া গ্রাম বিশেষভাবে খ্যাত। আগে শুধু বর্ষা মৌসুমে শুঁটকি তৈরি করে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাজারজাত করা হতো। আর এ অর্থ দিয়ে তারা পরিবারের সারা বছরের ভরণপোষণ নিশ্চিত করত। কিন্তু গত বছর মাছের অভাব ও বাজার মন্দা থাকায় এসব ব্যবসায়ী হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। মাছের আমদানি কম ও বাজারে মূল্য বেশি থাকায় শুঁটকির বাজারে নেমেছিল ধস। সব কিছু মিলিয়ে ব্যবসায়ীদের গত বছর লাভের পরিবর্তে গুনতে হয়েছিল লোকসান। বর্তমানে মাছের ব্যাপক আমদানি, মূল্য কম এবং শুঁটকির বাজার মূল্য বেশি থাকায় ব্যবসায়ীদের চোখেমুখে ফুটে উঠেছে আনন্দের উচ্ছ্বাস। ভরতেঁতুলিয়া গ্রামের শুঁটকি ব্যবসায়ী রামপদ শীল জানান, গত বছর প্রতি চালানেই আমাদের লোকসান গুনতে হয়েছিল। শুঁটকি তৈরির আসল টাকাই উঠে আসেনি। এ বছর কাঁচা মাছের আমদানি বেশি এবং দাম কম থাকায় শুঁটকিতে লাভ ভাল হবে বলে আশা করছি। শুঁটকি ব্যবসায়ী জাহেদুল ইসলাম জানান, পরিবার-পরিজন নিয়ে শুঁটকি তৈরি করছেন তিনি। দেশের বিভিন্ন স্থানে আত্রাইয়ের শুঁটকির চাহিদা ব্যাপক। তিন মণ মাছ শুকালে এক মণের মতো শুঁটকি তৈরি হয়। মাছ শুকানো মানেই মানুষ শুকানো। এটা খুব কষ্টের কাজ। তবে লাভ ভাল হলে সব কষ্ট লাঘব হয়ে যায়।
×