ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আগস্টে এসেছে ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকার

দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৯ হাজার কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ১১ অক্টোবর ২০১৭

দুই মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৯ হাজার কোটি টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকে আমানতের সুদহার কম থাকায় সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্ট) সঞ্চয়পত্র থেকে বিনিয়োগ এসেছে ৯ হাজার ২৮ কোটি টাকা। একক মাস হিসেবে অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইতে ৫ হাজার ৫৩ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়। আর দ্বিতীয় মাসে বিক্রি হয় ৩ হাজার ৯৭৫ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। প্রথম মাসের তুলনায় দ্বিতীয় মাসে বিক্রি কম হয় ১,০৭৮ কোটি টাকা। জানা গেছে, আগে বিক্রি হওয়া সঞ্চয়পত্রের মূল ও মুনাফা পরিশোধের পর যে পরিমাণ অর্থ অবশিষ্ট থাকে তাকে বলা হয় নিট বিনিয়োগ। তাই বিনিয়োগের ওই অর্থ সরকারের কোষাগারে জমা থাকে এবং সরকার তা প্রয়োজন অনুযায়ী বাজেটে নির্ধারিত বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মসূচী বাস্তবায়নে কাজে লাগায়। বিনিময়ে সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের প্রতি মাসে মুনাফা দিতে হয়। এ কারণে অর্থনীতির পরিভাষায় সঞ্চয়পত্রের নিট বিক্রিকে সরকারের ‘ঋণ’ বা ‘ধার’ হিসেবে গণ্য করা হয়। চলতি অর্থবছরে সঞ্চয়পত্র থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ৩০,১৫০ কোটি টাকা। তবে প্রবণতা বলছে অর্থবছরের ছয় মাসেই ছাড়াবে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা। গত অর্থবছরের বাজেটে ১৯,৬১০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়। পরে সংশোধিত বাজেটে তা বাড়িয়ে নতুন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৪৫,০০০ কোটি টাকা। চাহিদার কারণে শেষ পর্যন্ত বিক্রি দাঁড়ায় ৭৫,০০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র। চলতি বাজেটে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ৬০ হাজার ৩৫২ কোটি টাকা। তার মধ্যে ব্যাংকব্যবস্থা থেকে ঋণের লক্ষ্য ধরা হয় ২৮ হাজার ২০৩ টাকা। বর্তমানে ব্যাংক আমানতে সুদের হার ৪ থেকে ৬ শতাংশ। অন্যদিকে বিভিন্ন সঞ্চয় প্রকল্পের সুদহার ১১ থেকে ১২ শতাংশের কাছাকাছি। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ গড়ে কমিয়ে আনা হয় ২ শতাংশ। সুদহার আবার সমন্বয়ের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তবে শেষ পর্যন্ত সেই পদক্ষেপ থেকে সরে আসে অর্থ মন্ত্রণালয়। আর সঞ্চয়পত্র বিক্রির ক্ষেত্রে কঠোর বিধিনিষেধ তৈরি কাজ শুরু করেছে অর্থ বিভাগ। তুলনামূলক বেশি মুনাফা পাওয়াই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের এই উল্লম্ফনের প্রধান কারণ মনে করছেন অর্থনীতির বিশ্লেষকরা। তাছাড়া নিরাপদ বিনিয়োগের সুযোগ সংকুচিত হয়ে যাওয়াটাও একটি বড় কারণ বলে তারা মনে করছেন। এ বিষয়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ও অগ্রণী ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, মূলত ব্যাংকের আমানতের সুদহার কমে যাওয়ার কারণেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ছে। পুঁজিবাজার যদি স্থিতিশীল হয় তবে হয়তো সেখানে কিছু বিনিয়োগ যাবে। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ বাড়ায় সামাজিক কিছু সুবিধা থাকলেও সরকারের সুদ পরিশোধজনিত ব্যয় চাপ বাড়ে বলেও উল্লেখ করেন অর্থনীতির এ গবেষক। তাছাড়া ব্যাংকব্যবস্থা থেকে সরকারের ঋণ কমে যাওয়ায় বাজারে মুদ্রার সরবরাহ কমে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গবর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ বলেন, সঞ্চয়পত্রের মুনাফা বেশি থাকায় স্বল্প আয়ের লোকজন ও অবসরে যাওয়া বৃদ্ধরা এক ধরনের সামাজিক সুরক্ষা পাচ্ছে। সেই দিক থেকে সুদব্যয় বাড়লেও এটা অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবে এখানে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগের সীমা সঠিকভাবে পরিপালন হচ্ছে কি না সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। দেশী-বিদেশী উভয় উৎস থেকেই ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটায় সরকার। অভ্যন্তরীণ উৎসের মধ্যে আগে বেশি ঋণ আসত ব্যাংকব্যবস্থা থেকে। এখন বেশি ঋণ আসছে ব্যাংকবহির্ভূত উৎস থেকে। ব্যাংকবহির্ভূত উৎসের মধ্যে রয়েছে এই সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য কিছু বন্ড। ২০১২-১৩ অর্থবছরের সঞ্চয়পত্র থেকে মাত্র ৭৭৩ কোটি টাকা নিট বিনিয়োগ আসায় পরবর্তী অর্থবছরে এ খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে আনা হয়। কিন্তু পরের অর্থবছর থেকেই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের উল্লম্ফন দেখা দেয়। দেশে কার্যরত বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে স্থায়ী আমানত রাখলে ব্যাংক ভেদে ৫ থেকে ৭ শতাংশ হারে সুদ পাওয়া যাচ্ছে, যা সঞ্চয়পত্রের সুদের তুলনায় অনেক কম। ২০১৫ সালের মে মাসে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদ বা মুনাফা গড়ে ২ শতাংশ হারে কমানোর পরও এর প্রতিটি স্কিমের মুনাফার হার প্রায় ১১ শতাংশের ওপরে রয়েছে। পাঁচ বছর মেয়াদী পরিবার সঞ্চয়পত্রের মেয়াদ শেষে ১১ দশমিক ৫২ শতাংশ সুদ পাওয়া যায়। এই সঞ্চয়পত্রটি বিক্রি মূল্য ১০ হাজার, ২০ হাজার, ৫০ হাজার, ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী পেনশন সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এই সঞ্চয়পত্রের বিক্রি মূল্য ৫০ হাজার, ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। পাঁচ বছর মেয়াদী বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ। দেশের যে কোন নাগরিক এই সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন। বাজারে ১০, ৫০, ১০০ ও ৫০০ টাকা; ১০০০, ৫০০০, ১০,০০০, ২৫,০০০ ও ৫০,০০০ টাকা এবং ১ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র পাওয়া যায়। তিন বছর মেয়াদী মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদের হার ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ। বিক্রি মূল্য ১ লাখ, ২ লাখ, ৫ লাখ ও ১০ লাখ টাকা। তিন বছর মেয়াদী ডাকঘর সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বর্তমানে ১১ দশমিক ২৮ শতাংশ।
×