ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে

নির্মূল অভিযান সম্প্রসারণ

প্রকাশিত: ০৪:৪৭, ১১ অক্টোবর ২০১৭

নির্মূল অভিযান সম্প্রসারণ

মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যের মধ্যাঞ্চলে মুসলমানদের একঘরে করে রাখা, তাদের সঙ্গে লেনদেন করলে শাস্তির নিয়ম চালু করার কারণে রাজ্যের অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ বৌদ্ধ অধ্যুষিত ওই অঞ্চলে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযানের’ আশঙ্কা বাড়ছে। রাখাইনের গোলযোগপূর্ণ প্রত্যন্ত উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল থেকে সহিংসতা ওই নতুন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। রাখাইনের মধ্যাঞ্চলে প্রায় আড়াই লাখ মুসলিম বাস করে। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার। আদিবাসী রাখাইন ও বৌদ্ধরা মধ্যাঞ্চলের বেশ কয়েকটি এলাকায় বিভিন্ন কমিটি গঠন করেছে এবং সংখ্যালঘু মুসলিমদের সঙ্গে যারা লেনদেন করছে তাদের জরিমানা থেকে শুরু করে মারধর এমনকি এলাকা থেকে বিতাড়িতও করছে। ‘রোহিঙ্গা মুসলিম বিদ্রোহীদের’ কবল থেকে ‘রাখাইন সম্প্রদায়কে রক্ষা করতে’ এ ব্যবস্থা গ্রহণ প্রয়োজন বলে জোর দাবি ওইসব কমিটির নেতাদের। ওই অঞ্চলের মুসলিমরা জানান, তাদের একঘরে করে রাখা হয়েছে এবং জীবন ধারণের জন্য প্রয়োজনীয় রসদও তারা পাচ্ছে না। যে কারণে তারা এলাকা ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন। গত কয়েক দিনে সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে আসা নিয়ে নতুন এসব শরণার্থীর অভিযোগ, বৌদ্ধরা দল বেঁধে তাদের ওপর হামলা করছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থাগুলোও বলছে, সেনাসদস্য ও স্থানীয় বৌদ্ধরা রীতিমতো প্রচার চালিয়ে রোহিঙ্গাদের হত্যা করছে এবং তাদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিচ্ছে। যাতে তারা দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়। স্থানীয় প্রশাসন একচোখা আচরণ করছে বলেও অভিযোগ নতুন আসা এসব শরণার্থীর। গত ২৪ আগস্ট রাতে বিদ্রোহী আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএসএ) রাখাইন রাজ্যে একসঙ্গে ৩০টি পুলিশ পোস্ট ও একটি সেনা ক্যাম্পে হামলা চালানোর পর রাজ্যের পূর্বাঞ্চলের রোহিঙ্গা মুসলিম অধ্যুষিত গ্রামগুলোতে সেনা অভিযান শুরু হয়। প্রাণ বাঁচাতে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। জাতিসংঘ মিয়ানমার সেনাবাহিনীর এ অভিযানকে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ বলে বর্ণনা করেছে। রাখাইনের মধ্যাঞ্চলের শহর মাইবনের একজন বৌদ্ধ ভিক্ষু বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের লোকজনের একত্রে বসবাস সম্ভব নয়। সরকার তাদের সঙ্গে সমঝোতায় আসতে পারছে না। যে কারণে আমরা তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি, যাতে সংঘাত এড়ানো যায়।’ গত আগস্টে পুলিশ পোস্ট ও সেনা ক্যাম্পে রোহিঙ্গা বিদ্রোহী গোষ্ঠী এআরএসএ’র হামলার পর মাইবন শহর জুড়ে মাইকিং করে স্থানীয় ভিক্ষু ও রাখাইন সম্প্রদায়কে মুসলিমদের সঙ্গে যোগাযোগ এড়িয়ে চলার নির্দেশ দেয়া হয়। ওই নির্দেশ অমান্যকারী রাখাইন নারী সোয়ে চাই (৩৫) বলেন, গত ১২ সেপ্টেম্বর মুসলিমদের স্থানীয় একটি বাজার থেকে পণ্য কেনার পর একদল লোক তাকে ঘিরে ধরে। তারা আমাকে মারধর করে, চুল কেটে এবং গলায় ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ লেখা বোর্ড ঝুলিয়ে পুরো শহর ঘোরায়।’ একে ‘বিচ্ছিন্ন ঘটনা’ বলে বর্ণনা করেন রাখাইনের জেনারেল এ্যাডমিনিস্ট্রেশন ডিপার্টমেন্টের উপপরিচালক কিয়াউ সওয়ার তুন। ঘটনাটি নিয়ে আদালতে মামলা চলছে এবং দুই নারী ও এক পুরুষের বিরুদ্ধে সোয়ে চাইকে নির্যাতনের অভিযোগ আনা হয়েছে বলেও জানান তিনি। অভিযুক্ত দুই নারী আরাকান উইমেন্স নেটওয়ার্ক ইন মাইবনের সদস্য। এ বিষয়ে স্থানীয় সরকারের মুখপাত্র মিন আউং বলেন, মুসলিমদের সঙ্গে লেনদেন করলে বৌদ্ধদের শাস্তি দেয়ার কোন খবর তার কাছে নেই। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের পারস্পরিক আস্থার সম্পর্কের মাধ্যমে এই উত্তেজনা কমানো সম্ভব। অন্যান্য রাজ্য ও অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায় থেকে গঠন করা বিভিন্ন দল পারস্পরিক আস্থা অর্জনের জন্য কাজ করে। রাখাইনে এ ধরনের কোন দল নেই।’ ২০১২ সালে রাখাইনে বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গার পর প্রায় তিন হাজার মুসলিম মাইবনে একটি ক্যাম্পে আশ্রয় নেয়। বৌদ্ধ নেতারা ওই ক্যাম্পে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলোকে ত্রাণ বিতরণে বাধা দিচ্ছে বলে জানা গেছে। তাদের বক্তব্য, সেখানে শুধু সরকার ত্রাণ বিতরণ করবে এবং তাও বৌদ্ধরা খতিয়ে দেখবে। অশিন সারমানি নামের এক নেতা বলেন, ‘আমাদের ভয়, যদি আমরা বাঙালীদের জন্য এনজিও’র ত্রাণের নৌকাগুলো পরীক্ষা না করি, তবে সেগুলোতে ত্রাণের নামে আগ্নেয়াস্ত্র সরবরাহ হতে পারে।’
×