ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রামবাসীর বিক্ষোভ

জয়পুরহাটে আসামির চাচাকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশ

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১০ অক্টোবর ২০১৭

জয়পুরহাটে আসামির চাচাকে পিটিয়ে হত্যা করল পুলিশ

নিজস্ব সংবাদদাতা, জয়পুরহাট, ৯ অক্টোবর ॥ কালাইয়ের হারুঞ্জা গ্রামের শাহপাড়ায় আসামি ধরতে গিয়ে পুলিশের অস্ত্রের আঘাতে আসামির চাচা সাইদুল ইসলাম নিহত হয়েছেন। পুলিশ নিহত যুবককে হাসপাতালে আনার পর হত্যাকা-ের প্রতিবাদে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ মানুষ কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অবরুদ্ধ করে রাখে। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৫৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল ছোড়ে। পুলিশের ছোড়া রাবার বুলেটে অন্তত ১২ জন আহত হয়েছে। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত এসআই রফিকুল ইসলাম, পিএসআই আসাদুজ্জামানসহ ৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। জেলা প্রশাসক এ ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন। জানা যায়, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে ওয়ারেন্ট মূলে সোমবার ভোরে কালাই থানার এসআই রফিক, পিএসআই আসাদসহ পুলিশের একটি দল কালাই উপজেলার আহম্মেদাবাদ ইউনিয়নের হারুঞ্জা গ্রামের মৃত আবদুস সামাদের ছেলে শাপলা হোসেনকে (২৮) ধরার জন্য বাড়িতে যায়। পুলিশ এক পর্যায়ে একটি দরজা ভেঙ্গে অপর দরজার কাছে গেলে অভিযুক্ত শাপলার চাচা সাইদুল ইসলাম (৩৪) পুলিশের সামনে এসে দরজায় ধাক্কা-ধাক্কি দেয়ার কারণ জানতে চান। এ সময় সাইদুল ও পুলিশের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে এসআই রফিক সাইদুলের মাথায় পিস্তলের বাঁট দিয়ে আঘাত করেন। এরপর তাকে এলোপাতাড়ি মারধর করা হয়। এর মধ্যে বাড়ির অন্য লোকজন ঘুম থেকে উঠে হৈচৈ শুরু করলে পুলিশ বেগতিক দেখে আহত সাইদুলকে পুলিশ ভ্যানে তুলে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৌসুমী আকতার সাইদুলকে মৃত ঘোষণা করেন। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে কয়েক হাজার বিক্ষুব্ধ জনতা এসআই রফিক ও পিএসআই আসাদকে তাদের হাতে ছেড়ে দেয়ার দাবি জানান। জনতা একপর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের গেট ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এর মাঝে জয়পুরহাট থেকে দাঙ্গা পুলিশ গিয়ে সেখানে অবস্থান নেয়। এক পর্যায়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে ছত্রভঙ্গ করার উদ্দেশে পুলিশ ৫৪ রাউন্ড রাবার বুলেট ও ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। এতে অন্তত ১২ জন আহত হয়। এদের মধ্যে বুলেটবিদ্ধ সাইদুর রহমানকে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। আহতদের ৩ জনকে কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ও ২ জনকে ক্ষেতলাল উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করার জন্য কালাই উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সামনে কালাই উপজেলা চেয়ারম্যান মিনফুজুর রহমান মিলন, ইউএনও আফাজ উদ্দিনসহ জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাস্থলে আসেন এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন। এ সময় মিনফুজুর রহমান মিলন বলেন, এটি কোন ক্রমেই মেনে নেয়া যায় না। তিনি বিষয়টির তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান। ওই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলী আকবর বলেন, ভোরে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসি। পুলিশের পিস্তলের আঘাতেই সাইদুলের মৃত্যু হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। এ ঘটনায় তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্ত এসআই রফিকুল ইসলাম রফিক, পিএসআই আসাদুজ্জামান আসাদ, কনস্টেবল রাশেদুল ইসলাম (নং ৩১৯) এবং কনস্টেবল ফারুক হোসেনকে (নং ৬০৪) সাসপেন্ড করা হয়েছে। এ ঘটনার ব্যাপারে মামলা প্রসঙ্গে পুলিশ সুপার মোঃ রশীদুল হাসান জানান, পুলিশ দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে এ ঘটনা ঘটেছে। তাই পুলিশের বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়া হবে না। তবে কেউ মামলা করতে চাইলে আদালতে মামলা করতে পারেন। তিনি আরও বলেন, ঘটনার ব্যাপারে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ৪ জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। অপরদিকে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল্লাহেল বাকীকে প্রধান করে ৩ সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্যরা হচ্ছেনÑ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলায়েত হোসেন, সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ রাশেদ মোবারক জুয়েল। আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে। ঘটনার ব্যাপারে জেলা প্রশাসক মোঃ মোকাম্মেল হক জানান, ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে নিহত যুবক সাইদুল ইসলামের ময়নাতদন্ত শেষে সোমবার বিকেল ৫টায় আনন্দ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে জানাজা শেষে পারিবারিক গোরস্তানে দাফন করা হয়েছে।
×