ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ॥ পেশাজীবন ও পারিবারিক দুশ্চিন্তা

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১০ অক্টোবর ২০১৭

মানসিক স্বাস্থ্য দিবস ॥ পেশাজীবন ও পারিবারিক দুশ্চিন্তা

১০ অক্টোবর ২০১৭ বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় হচ্ছে কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য। আমাদের দেশে ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে চিন্তা কেবল শুরু হয়েছে। আর কর্মক্ষেত্রে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে মানুষের ধারণা এখনো সীমিত। ইদানীংকালে পুরুষের পাশাপাশি মেয়েরা নিজেদের ক্যারিয়ার নিয়ে বেশ সচেতন হয়েছে। নারীর পেশা গ্রহণের ফলে সকলের মধ্যে মানসিক চাপ সৃষ্টি হওয়ায় ধীরে ধীরে নারী-পুরুষ সকলে মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে অধিক সচেতন হতে শুরু করেছে। পেশাজীবন শুরুর পূর্বে মনোবিজ্ঞানীর অধীনে ক্যারিয়ার কাউন্সিলিং করে নিলে, নিজের সম্পর্কে ব্যক্তির ধারণা সুস্পষ্ট হয়ে যায়। ফলে পেশা নির্বাচনে প্রথম জীবনেই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া খুব সহজ হয়ে যায়। কাজের প্রতি ইচ্ছা আগ্রহ, কর্মসন্তুষ্টি, কর্মদক্ষতা, কর্ম অভিজ্ঞতা, কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ সকল কিছুর ওপর নির্ভর করে ব্যক্তির মানসিক সুস্বাস্থ্য। পেশাজীবন ও কর্মক্ষেত্রের সমস্যা, ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ঠিক তেমনি ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের সমস্যাও পেশাজীবন ও কর্মক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। পরিবারে মা বাবা দু’জনই বাইরে কাজ করলে সন্তানের জন্য অনেক ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। একক পারিবারে মেয়েরা চাকরি করে সন্তানের দেখাশোনার সার্বিক দায়িত্ব নিতে হিমশিম খাচ্ছে। বর্তমানে যৌথ পরিবার না থাকার কারণে মা অথবা শাশুড়ির সহায়তা পাওয়ার সুযোগ থেকে মেয়েরা বঞ্চিত হচ্ছে। ফলে শিশুরা বাড়িতে কাজের লোকের হাতে বড় হচ্ছে। এসব নিয়ে পরিবারে বিভিন্ন ধরনের টেনশন সৃষ্টি হচ্ছে। কর্মজীবী মা-বাবা সকালে বেড়িয়ে গিয়ে বিকালে, সন্ধ্যায় বা রাতে বাড়ি ফিরছেন। সন্তানের সার্বিক দেখাশোনা, স্কুলে নিয়ে যাওয়া, বাড়িতে হোমওয়ার্ক করানো, টিচার, কোচিং ইত্যাদি কাজ মা-বাবার মধ্যে ভাগাভাগি নিতে পরিবারে অনেক ধরনের টেনশন সৃষ্টি হয়। এছাড়া বাড়ি ফিরে আবার ঘরের স্বাভাবিক কাজকর্ম নিয়েও ব্যস্ততার বিষয় রয়েছে। একক পরিবারে কর্মজীবী মা-বাবারা অনেক ধরনের বাড়তি ঝামেলার শিকার হয়ে থাকেন। যৌথ পরিবারে কিছুটা পারিবারিরক দ্বন্দ্ব থাকলেও পেশাজীবন ও সন্তানদের নিয়ে নিশ্চিন্তে নিরাপদে থাকা যায়, বড় ধরনের কোন সমস্যা থাকে না। যৌথ পরিবারের বাড়তি সুবিধা হচ্ছে কাজের লোকদের পরিচালনার জন্য বাড়িতে সার্বক্ষণিক পরিবারের আপনজনেরা থাকেন। ফলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাড়তি উটকো ঝামেলা পোহাতে হয় না। ঘরে ছেলেমেয়েদের নিরাপদে রেখে গিয়ে অফিসে নিশ্চিন্ত মনে কাজ করা যায়। ব্যক্তি মনে দুশ্চিন্তার প্রবণতা, আত্মবিশ্বাসের অভাব দেখা দিলে ব্যক্তিগত ও পারিবারিক সমস্যার কারণে কাজের প্রতি অনীহা, কাজে বার বার ভুল করা শুরু হতে পারে। কর্মক্ষেত্রের সুষ্ঠু পরিবেশ, সহকর্মীদের সহযোগিতা ও সহমর্মিতা, বেতন কাঠামো, প্রমোশন, বসের আচরণ, মহিলাদের প্রতি সম্মান ইত্যাদি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে। কর্মক্ষেত্রে এ সবকিছু যথাযথ থাকার পরও ইদানীংকালে অনেকের মধ্যে বার বার চাকরি বা ব্যবসা পরিবর্তন করার প্রবণতা বা সিদ্ধান্তহীনতা দেখা যায়। সব শেষে চাকরি অথবা ব্যবসা পেশাজীবন ছেড়ে দেয়ার ঝোঁক বা প্রবণতা সৃষ্টি হতে পারে। এসব সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর সহায়তা নিলে খুব সহজে পেশাগত সমস্যা সমাধান ও ব্যক্তিজীবন ও পারিবারিক জীবনের উন্নতি করা যেতে পারে। আমরা দিনের দীর্ঘসময় কর্মক্ষেত্রে ব্যয় করে থাকি। এ দীর্ঘসময়ের ব্যবধানে বাড়িতে কাজের লোকের বিস্বস্ততার সন্দেহ, ছোট্ট শিশুর নিরাপত্তার অভাবের দুশ্চিন্তায় অনেকে কাজে মনোযোগী হতে পারে না। নতুন সংসার, প্রথম সন্তানের বেলায় শিশু লালন পালনের সঠিক পদ্ধতি না জানার কারণে পারিবারিক দ্বন্দ্ব ও হতাশার সৃষ্টি হয়। সন্তানের যে কোন সমস্যায় মা বাবা নিজেকে দোষী মনে করে। বাড়িতে কাজের মানুষের সহায়তা নিয়ে অনেকে এসব সমস্যাকে সমাধানের চেষ্টা করে থাকেন। তবে সব সময় নিয়মিতভাবে কাজের লোক পাওয়া যায় না। অনেক সময় কাজের লোক ছুটিতে চলে যায়, এরূপ পারিবারিক নানান ধরনের সমস্যা কর্মক্ষেত্রে বিশাল প্রভাব ফেলে। সৃষ্টি হয় কর্ম ক্ষেত্রে মানসিক সমস্যা। নেতিবাচক পরিবেশে ব্যক্তির উৎপাদনশীলতা কমে যেতে পারে, নানা ধরনের মানসিক সমস্যা ও রোগ দেখা দিতে পারে। কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত কাজের চাপ অথবা সমস্যা সৃষ্টির কারণে ব্যক্তি মনে রাগ, জেদ, দুশ্চিন্তা করার অভ্যাস তৈরি হতে পারে। দীর্ঘদিন এসব মানসিক সমস্যা অবহেলা করার কারণে ব্যক্তি মনে বিভিন্ন মানসিক রোগ যেমন প্যানিক এ্যাটাক, ডিপ্রেশন, এ্যাংজাইটি, ফোবিয়া ইত্যাদি দেখা যেতে পারে। মানসিক সমস্যার শুরুতে দক্ষ মনোবিজ্ঞানীর অধীনে মনোবৈজ্ঞানিক চিকিৎসা নিলে, পরবর্তীতে জীবন বিপন্নকারী কঠিন জটিল মানসিক রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব হবে। কেবল মানসিক রোগ হলেই নয় বরং যে কোন সাধারণ মানসিক সমস্যা সমাধানে দ্রুত মনোবিজ্ঞানীর কাছে কাউন্সিলিং ও সাইকোথেরাপি নেয়া প্রয়োজন। যা ব্যক্তিকে আরও বেশি কর্মঠ, আত্মবিশ্বাসী ও সফল্য অর্জনে সহায়তা করতে পারে। উম্মে কুলসুম কলি মনোবিজ্ঞানী, মনস্তাত্ত্বিক, গবেষক ও সাইকোথেরাপিস্ট অরকিড সাইকোলজি রিসার্চ সেন্টার ফোন - ০১৬২০৬১৯৬৮৬, ০১৭১১০১৮০৯৪
×