ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘রোহিঙ্গাদের ফেরত, ইয়াবা ফ্যাক্টরি ধ্বংস ও পাচার রোধে প্রস্তাব দেয়া হবে’

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১০ অক্টোবর ২০১৭

‘রোহিঙ্গাদের ফেরত, ইয়াবা ফ্যাক্টরি ধ্বংস ও পাচার রোধে প্রস্তাব দেয়া হবে’

শংকর কুমার দে ॥ মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার পাশাপাশি মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা ৪৯ ইয়াবা তৈরির কারখানা ধ্বংস করে ইয়াবা পাচার বন্ধের প্রস্তাব দেবেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। মিয়ানমারে গড়ে ওঠা ৪৯ ইয়াবা কারখানা থেকে প্রতিদিন চোরাইপথে সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে লাখ লাখ পিস ইয়াবা যার মূল্য কোটি কোটি টাকা। প্রতি বছর শতাধিক কোটি টাকার ইয়াবা মিয়ানমার থেকে পাচার হয়ে আসছে। সারাদেশে এই মাদকে আসক্ত তরুণ-যুবকের সংখ্যা প্রায় ৫০ লক্ষাধিক। এ মাসেই মিয়ানমারে সফরে গিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল রোহিঙ্গা ইস্যু, সীমান্ত দিয়ে মাদক পাচার ও মিয়ানমার সীমান্তে গড়ে ওঠা ইয়াবার কারখানা ধ্বংস করে দেয়ার প্রস্তাব দেবেন। মিয়ামারের প্রতিপক্ষের সঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর আলোচনার জন্য এজেন্ডা তৈরিতে কাজ করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের উখিয়া নিউজ ডটকমে প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী মিয়ানমারে গড়ে ওঠা ৪৯ ইয়াবা কারখানা থেকে বাংলাদেশে আসছে ইয়াবা চোরাচালান। এজন্য বাংলাদেশেও গড়ে তোলা হয়েছে অন্তত অর্ধ শতাধিক ইয়াবা সিন্ডিকেট। ২০১৫ সালে একটি তালিকায় মিয়ানমারকে ৪৫ ইয়াবা কারখানার ব্যাপারে তথ্য দেয় বাংলাদেশ। কক্সবাজার, টেকনাফ, চট্টগ্রাম, দিয়ে আসার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবার চালান ধরা পড়ে। চালানের সঙ্গে মিয়ানমারের অনেক নাগরিকও ধরা পড়েছে। মংডু, সিটওয়েসহ কয়েকটি এলাকায় বসতবাড়িতে ইয়াবা তৈরির কারখানা গড়ে তোলা হয়েছে বলে তাদের কাছ থেকে তথ্য পাওয়া যায়। এরপর বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) একটি প্রাথমিক তালিকা করে। ওই তালিকা ধরে মিয়ানমারে সোর্স দিয়ে তল্লাশি চালায় একটি গোয়েন্দা সংস্থা। এতে ৪৫টি কারখানার তথ্য মেলে। প্রতিটি কারখানা থেকে নিজস্ব সিন্ডিকেটে ইয়াবা আসে। বান্দরবান সীমান্ত এলাকার মিয়ানমারের নারায়ণচক এলাকায় রয়েছে আরেকটি ইয়াবা কারখানা। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, কক্সবাজারের ইয়াবা কারবারিরা ধরা পড়ার পর তাদের দাবি ও তথ্যানুযায়ী, মংডুর সুয়েজা ডেইলপাড়া, বাউলি বাজার, থাং ইয়, আনাইক্কা, আল লে থান কিওয়ে, সংসমা, আকিয়াব, সুয়েজা খায়নলখালী, ফয়েজপাড়া, নোয়াপাড়া, আলে কালাইওয়া, জাদিপাড়া, সাবাইগন, কিম্বুক, তমব্রু, দাগশিন নীল ও সিটওয়ের কিছু এলাকায় প্রকাশ্যে পাইকারি দরে ইয়াবা কেনাবেচা হয়। বাংলাদেশ থেকে ডিলার গিয়ে বা সেখানকার ডিলাররা নদী পথে ট্রলাযোগে বস্তায় ভরে ইয়াবা নিয়ে আসে। মিয়ানমারের প্রধান তিনটি কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢুকছে। মংডু থেকে বাউলি বাজার-সাহেব বাজার-ঘুনধুম হয়ে কক্সবাজার, মংডু থেকে বাউলি বাজার-সাহেব বাজার-পালেতোয়া হয়ে নাইক্ষ্যংছড়ি এবং থাং ইয় থেকে সেন্ট মার্টিনস হয়ে কক্সবাজার বা চট্টগ্রামে ইয়াবা চালান যাচ্ছে। সিটওয়ে থেকেও নৌপথে কক্সবাজার অথবা চট্টগ্রামে যাচ্ছে চালান। ওই তিন কেন্দ্র থেকে বাংলাদেশে ইয়াবা ঢোকার স্থানগুলোকে ১৫টি রুটে ভাগ করেছেন গোয়েন্দারা। আগে ইয়াবার চালানগুলো শুধু টেকনাফ, উখিয়াসহ কক্সবাজারে আসত। এখন নৌপথে চট্টগ্রাম, মেঘনা নদীর তীরবর্তী বিভিন্ন জেলা এমনকি ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনা, বরিশাল ও খুলনায়ও চলে যাচ্ছে। সড়কপথে ইয়াবা পাচারের জন্য খ-িত পথ বেছে নেয় কারবারিরা। তারা রাখাইন রাজ্যের মংডু থেকে বাওয়ালি বাজার-শবেকদরের বাজার-ঘুনধুম-কক্সবাজার রুট এবং মংডু-বাওয়ালি বাজার-শবেকদরের বাজার-পালেতোয়া-নাইক্ষ্যংছড়ি-বান্দরবান রুট ব্যবহার করছে। মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের প্রভাবশালী ব্যক্তিরা ইয়াবা কারবারের সঙ্গে জড়িত। তাদের সঙ্গে মংডু, বুথিডং এলাকায় সীমান্তরক্ষী বাহিনী, সেনা কর্মকর্তা, কাস্টমস অফিসার ও পুলিশ বাহিনীর যোগাযোগ থাকায় শান রাজ্য থেকে ইয়াবা আসার সময় কোন সমস্যা হয় না। বিভিন্ন চেক পয়েন্টে পাস ও পরিচয় নিশ্চিত হলে চালান ছেড়ে দেয়া হয়। ইয়াবা বহনকারীদের বেশির ভাগও শান রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী দলের সক্রিয় সদস্য। মিয়ানমারের মংডু, সিটওয়ে, মইং, কুখাই, নামকখাম, শান, ওয়া, মংশাত, তাশিলেক, মংপিয়াং, মংইয়াং ও পাংশাং, কুনলং, টেংইং, সেন, লুই হুপসুর, কাইয়াং, মাহাজা অ্যান্ড হুমং, কেউও, মাওকমাই, কাকাং মংটন কাশিন ও আইক্কা এলাকায় ইয়াবা কারখানা বেশি।
×