ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কম খরচ, কম লোকবল দিয়ে বিচারিক জট নিরসন করা যাবে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ১০ অক্টোবর ২০১৭

কম খরচ, কম লোকবল দিয়ে বিচারিক জট নিরসন করা যাবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুইবারের সফরে রাশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন বলে মন্তব্য করেছেন দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টার পর পরেই সুপ্রীমকোর্টের জাজেস লাউঞ্জে দুই দেশের প্রধান বিচারপতিদের এক সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষরের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এ কথা বলেন। এ সময় বিচার বিভাগের মানোন্নয়নে সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে সমঝোতা স্মারকে সই করেন বাংলাদেশের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা ও রাশিয়ার প্রধান বিচারপতি ভায়াচেসলাভ এম লেভদেভ। দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, দুই দেশের বিচার বিভাগের মধ্যে সহযোগিতা চুক্তি সাক্ষরের মধ্য দিয়ে আমাদের বিচার ব্যবস্থা শক্তিশালী হবে। ‘এই সহযোগিতা চুক্তির প্রধান উদ্দেশ্যে হচ্ছে দুই দেশের বিচার ব্যবস্থা সম্পর্কে পারস্পরিক অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান বিনিময় করা।’ একই সঙ্গে বিচার ও মামলা ব্যবস্থাপনায় ই-সার্ভিস প্রতিষ্ঠায় রাশিয়ার প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রাপ্তিও এ চুক্তির অন্যতম উদ্দেশ্যে। আর তা বাস্তবায়িত হলে কম সময়ে কম খরচে ও কম লোকবল ব্যবহার করে বিচারিক জট নিরসন করা যাবে বলে মন্তব্য করেন বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। সুপ্রীমকোর্ট জাজেস লাউঞ্জে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বিচারপতি মোঃ আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা আরও বলেন, ১৯৭২ সালের পর জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মস্কো সফর করে ১৯৭১ মুক্তিযুদ্ধে সে অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা দিয়েছেন সেজন্য কৃতজ্ঞতা জানান। বঙ্গবন্ধু দুই দেশের সম্পর্ক ও বন্ধুত্বকে যে ভিত্তি দিয়েছিলেন ২০০৯ ও ২০১৩ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রুশ প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সাক্ষাত করে, সে বন্ধুত্বকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। রাশিয়া আমাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আরও বলেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতায় আমরা আমাদের রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য বৃহত্তর পরিবর্তন ও কৌশল নির্ধারণ করতে পারি। যা আমাদের জীবনের প্রত্যেক ক্ষেত্রে উন্নতি বয়ে আনবে। চুক্তি সাক্ষর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন আপীল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার, রুশ রাষ্ট্রদূত, রাশিয়ার বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতসহ প্রতিনিধি দলের সদস্যরা। চুক্তি সইয়ের পর সুপ্রীমকোর্টের সম্মুখভাগে বকুল ফুলের দুটি বৃক্ষ রোপণ করেন দুই প্রধান বিচারপতি। এরপর প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে আপীল বিভাগের এজলাসে বসে বিচার কাজ প্রত্যক্ষ করেন রুশ প্রধান বিচারপতি। এর আগে তিন দিনের সফরে রবিবার সকালে রাশিয়ার প্রধান বিচারপতি চার সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকায় পৌঁছান। সোমবার সকালে তিনি সুপ্রীমকোর্ট পরিদর্শনে যান। সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। প্রতিনিধি দলের অন্য সদস্যরা হলেন রাশিয়ার সুপ্রীমকোর্টের ডিরেক্টর জেনারেল আলেকজেন্ডার গুসেভ, ক্রিমিনাল কোর্ট অব কসট্রামস্ক্যায়ার চেয়ারপার্সন ভায়াচেসলাভ এম ইভানোভ ও কেন্দ্রীয় সরকারের উর্ধতন নিরাপত্তা কর্মকর্তা সার্গেই ই ইয়াকভ। এ চুক্তির মাধ্যমে হাইকোর্ট ও নিম্ন আদালতের প্রায় ১৭০০ বিচারককে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। আগামী পাঁচ বছরে তারা এই প্রশিক্ষণ নেয়ার সুযোগ পাবেন। প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উভয় দেশের বিচারকরা পারস্পরিক অভিজ্ঞতা বিনিময় করে বিচার বিভাগকে আরও গতিশীল করতে সম্মিলিত পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন। দুপুর একটায় লাঞ্চের পর আড়াইটায় এ্যাটর্নি জেনারেলের সঙ্গে বৈঠক করারও কথা রয়েছে রুশ প্রধান বিচারপতি লেবেদভ। পরে বিকেল সাড়ে তিনটায় বঙ্গবন্ধু জাদুঘর পরিদর্শনে যাবেন তিনি। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির সৌজন্যে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নিবেন বিচারপতি লেবেদভ। আজ মঙ্গলবার সারাদিন রাশিয়া দূতাবাসে অবস্থানের পর বিকেল ৪টা ৪০ মিনিটে নিজ দেশের উদ্দেশে তার ঢাকা ত্যাগ করার কথা রয়েছে। বিএনপিপন্থী আইনজীবীদের মানববন্ধন এক মাসের ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এসকে) সিনহাকে দেশত্যাগ না করার আহ্বান জানিয়েছেন সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট জয়নুল আবেদীন। সোমবার সুপ্রীমকোর্ট বারের পূর্ব ঘোষিত পাঁচ দিনের কর্মসূচীর দ্বিতীয় দিনে বার ভবনের সামনে এক মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। প্রধান বিচারপতিকে উদ্দেশ করে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘আপনি দেশত্যাগ করবেন না। সারা দেশের মানুষ আপনার সঙ্গে আছে। আপনি যেখানেই থাকুন না কেন, আপনি বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি। আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে আপনাকে স্বপদে বহাল করব।’ সমাবেশ থেকে মঙ্গলবার সারাদেশের জেলা আইনজীবী সমিতির সামনে দুপুর ১টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচী ঘোষণা করেন সুপ্রীমকোর্ট বারের সভাপতি। সমাবেশে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সুপ্রীমকোর্ট বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকন, আইনজীবী নেতা এ্যাডভোকেট সানাউল্লাহ মিয়া, এ্যাডভোকেট আবেদ রাজা প্রমুখ।
×