ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সুরক্ষা আইন না হওয়ায় সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১০ অক্টোবর ২০১৭

সুরক্ষা আইন না হওয়ায় সাক্ষীরা নিরাপত্তাহীনতায়

বিকাশ দত্ত ॥ মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সিরু বাঙালী মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন। সাক্ষ্যতে সিরু বাঙালী হিন্দু শিশু বৃদ্ধ ও নারীদের হত্যার বিবরণ তুলে ধরেন। বিচার শেষে সাকা চৌধুরীর মৃত্যুদ- কার্যকর হয়েছে। এখন সাক্ষী সিরু বাঙালী স্বাভাবিক ভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। সব সময় ভয় তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। সিরু বাঙালী ছাড়াও পিরোজপুরের সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার (৫৫) সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হওয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। চট্টগ্রামের সাক্ষী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনুর মারা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তার মুত্যু রহস্য উদ্ঘাটন করা যায়নি। ফরিদপুরের সাক্ষী জগন্নাথ দত্ত সাক্ষী দিয়ে যাওয়ার পর পরই তার জমি দখল করে নিয়েছে আসামির আত্মীয় স্বজনেরা। ইতোমধ্যে ৬ শতাধিক সাক্ষী আসামিদের বিরুদ্ধে জবানবন্দী দিয়েছেন। আরও সাক্ষী আসছে, সব মিলিয়ে চলতি বছরে প্রায় ১ হাজার সাক্ষী মামলায় জবানবন্দী প্রদান করবেন। অনেক সাক্ষী নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশনের দাবি অতিসত্তর সাক্ষীদের নিরাপত্তা দেয়ার জন্য আইন করা হোক। সাক্ষীরা সাক্ষ্য প্রদান শেষে বাড়িতে গেলেও তারা নিরাপত্তহীনতায় ভুগছে। অন্যদিকে সারাদেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রায় দুই লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। একই সঙ্গে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে মামলাও জট লেগেছে। এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থা জানিয়েছে, সাক্ষীরা আতঙ্কে আছে তা বলা যাবে না। কারণ আমাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রতি জেলার জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে একটি ‘সাক্ষী সুরক্ষা কমিটি’ গঠন করেছেন। ওই কমিটিতে ডিজিএফ আই, এনএস আই, পুলিশ সুপারসহ কয়েকজন সাক্ষীকেও রাখা হয়েছে। পাশাপাশি সাক্ষীদের পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। আমাদের কাছে এ বিষয়ে কোন অভিযোগ আসলে তাদের ওই কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেই। তা ছাড়া বিচারপতি, প্রসিকিউটর, তদন্ত সংস্থাসহ ট্রাইব্যুনালে সবার নিরাপত্তার জন্য একটি খসড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে। আইনটি পাস হলেই সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য সরকারের বাইন্ডিং হয়ে যাবে। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী এ্যাডভেকেট আনিসুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে সাক্ষী সুরক্ষা আইনের খসড়াটি আমার কাছে এসেছিল। ওটি বিবেচনা করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। এর পর আর আমার টেবিলে ফাইল আসেনি। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য ২০১০ সালের ২৫ মার্চ ঢাকার পুরাতন হাইকোর্টে স্থাপন করা হয় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর পর মামলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার ফলে ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। মামলা কমাতে বর্তমানে একটি ট্রাইব্যুনল গঠন করা হয়েছে। প্রতি মামলার অভিযোগ প্রমাণের জন্য সাক্ষীরা মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকেন। কিন্ত বর্তমানে অনেক সাক্ষী নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন। এ প্রসঙ্গে তদন্ত সংস্থার প্রধান এম এ হান্নান খান জনকণ্ঠকে বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে, সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য কোন আইন নাই। আইন করার জন্য সুপারিশ ছিল। আইন না হলেও ইতোমধ্যে আমাদের আবেদনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সাক্ষীর নিরাপত্তার জন্য প্রতি জেলায় জেলা প্রসাশকের নেতৃত্বে ‘সাক্ষী সুরক্ষা কমিটি’ গঠন করা হয়েছে। সেখানে বিভিন্ন আইন সংস্থার প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। পাশাপাশি প্রতি কমিটিতে ৪ থেকে ৫ সাক্ষী রাখা হয়েছে। কোন সাক্ষী যদি নিরাপত্তাহীনতা বোধ করে তা হলে তাদের ওই কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেই। কমিটি যাচাই বাচাই করে ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন। অন্যদিকে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেন, জেলা পর্যায়ে কমিটির পাশাপাশি কেন্দ্রীয় কমিটিও রয়েছে। কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্বরাষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (রাজনৈতিক) প্রধান করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেই কমিটিতে পুলিশ, র‌্যাব, ডিজিএফ আই, এনএস আই, এসবি, তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছে। তিনি আরও বলেন, কেন্দ্রীয় কমিটির পাশাপাশি জেলা কমিটি রয়েছে। সাক্ষীদের কল্যাণে যা যা করা প্রয়োজন এ কমিটি তা করবে। স্বারাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে একটি খসড়া আইন মন্ত্রণালয়ে গেছে, আইন মন্ত্রণালয় সেটি অনুমোদন করলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। তখন সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের বাইর্ন্ডিং এ থাকবে। প্রশাসন যাতে করে সাক্ষীদের সহজে চিনতে পারে সে জন্য তাদের পরিচয়পত্র দেয়া হচ্ছে। এতে করে তারা প্রশাসনের কাছে তড়িৎগতিতে পৌঁছতে পারবেন। তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন পক্ষ এর আগে দুটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে। দুটি প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি, প্রসিকিউটর, তদন্তকারী কর্মকর্তা, সহস্রাধিক সাক্ষী, বিচার কভার করতে আসা প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ ও তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা বলয়ের মধ্যে আনা। তদন্ত সংস্থা থেকে বলা হয়েছে এখন রুলসে সাক্ষীদের সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে, সেখানে শুধুমাত্র সাক্ষীকে বাড়ি থেকে আনা এবং ট্রাইব্যুনাল থেকে বাড়িতে নিরাপত্তা দেয়ার বিধান রয়েছে। সেজন্য আইসিটি এ্যাক্ট ২৫ এর সঙ্গে এ ও বি নতুন দুটি ধারা যোগ করার জন্য প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। প্রসিকিউশন পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এই মুহূর্তে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনিক আদেশ প্রয়োজন। পরবর্তীতে স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য পৃথক সাক্ষী সুরক্ষা আইন করতে হবে। নিরপত্তার অভাবে সাক্ষী ট্রাইব্যুনালে আসছে না। যার ফলে গুরুত্বপূর্ণ অনেক মামলায় অভিযোগ প্রমাণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে প্রসকিউশন পক্ষ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের রুলসের ৫৮ (ক) ১ এ বলা হয়েছে ট্রাইব্যুনাল স্ব-উদ্যোগে বা কোন পক্ষের আবেদনের প্রেক্ষিতে সাক্ষী অথবা ভিকটিমের সুরক্ষা, গোপনীয়তা এবং কল্যাণ নিশ্চিত করার্থে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশসহ প্রয়োজনীয় আদেশ দিতে পারেন। এই প্রক্রিয়া গোপনীয়তা থাকবে এবং অপরপক্ষকে অবহিত করা হবে না। প্রসিকিউটর জেযাদ আল মালুম জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা আইন মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবটি পাঠিয়েছি। ওই প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে বিচারের সঙ্গে বিচারপতিসহ সংশ্লিষ্ট সব কর্মকর্তা, প্রসিকিউটর, তদন্ত কর্মকর্তা, সংশ্লিষ্ট সাংবাদিকসহ তাদের পরিবারের সদস্যদের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা দেয়। আইনটি দেরিতে হলে, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের জন্য প্রশাসনিক আদেশ দেয়া অতি জরুরী। তিনি বলেন, যে সব মামলার রায় হয়েছে, যাদের বিচার চলছে, একই সঙ্গে যে মামলাগুলো ট্রাইব্যুনালে আসবে সেই মামলাগুলোর সাক্ষী দেয়ার জন্য প্রায় এক হাজার সাক্ষী রয়েছে। তাদের নিরাপত্তার বিষয়টি মাথায় রেখেই দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল বলেন, দীর্ঘদিন পর মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। এ বিচারে সাক্ষীদের ভূমিকা মুখ্য। কিন্তু সাক্ষীদের আনতে গিয়ে আমাদের নানামুখী সঙ্কটের মধ্যে পড়তে হয়েছে। তা ছাড়া মামলা তদন্ত করতে গিয়ে আসামি পক্ষের লোকদের হাতে শারীরিকভাবে আমাদের নাজেহাল হতে হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় সরকার যেখানে যা প্রয়োজন তা দিয়ে সহায়তা করছে। মামলার তদন্তে আমরা যা পাই তার সবকিছুই প্রকাশ করা যায় না। এতে মামলার ক্ষতি হয়ে থাকে। বর্তমান যে বিষয়টি জরুরী তা হলো সাক্ষীদের নিরাপত্তা। শুধু সাক্ষী নয় বিচারপতি, প্রসিকিউটর, সাংবাদিকসহ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবারই নিরাপত্তা বিধান করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এ প্রসঙ্গে প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয়। সাক্ষীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে বাধার সম্মুখীন হতে হবে। মামলার অভিযোগ প্রমাণে কষ্টসাধ্য হবে। নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারলে ভবিষ্যতে কোন সাক্ষী মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ দিতে আসবে না। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা দরকার। প্রতিটি অভিযোগ প্রমাণে সাক্ষীরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। কত বছর পর বিচার শুরু হয়েছে। অনেক সাক্ষী মারা গেছেন। আবার কেউ ভারতে চলে গেছেন। সাক্ষীদের খুঁজে পাওয়াটা বেশ মুশকিল। মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের এ পর্যন্ত বেশ কয়েকজন সাক্ষীকে হত্যা করা হয়েছে। বিভিন্ন সাক্ষীদের জীবননাশের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এমনকি বিচারের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিচারপতি ও প্রসিকিউটরদের বাড়িতে হামলা করা হয়েছে। জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় প্রসিকিউশনের সাক্ষী মোস্তফা হাওলাদার (৫৫) সন্ত্রাসীদের হাতে আহত হওয়ার পর ঢাকায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। বিএনপি নেতা সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধ মামলার সাক্ষী সৈয়দ ওয়াহিদুল আলম জুনুর মারা যাওয়ার পর এখন পর্যন্ত তার মুত্যু রহস্য উদঘাটন করা যায়নি। খোকন রাজাকারের বিরুদ্ধে সাক্ষী জগন্নাথ দত্ত সাক্ষী দিয়ে যাওয়ার পর পরই তার জমি দখল করে নিয়েছে খোকন রাজকারের ভাগ্নে। এছাড়া বিচারপতিদের বাড়িতেও হামলা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এর সাবেক চেয়ারম্যান, বর্তমানে আইন কমিশনের সদস্য বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীর, সদস্য বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিমের গ্রামের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে। এছাড়া চীফ প্রসিকিউটর গোলাম আরিফ টিপু, প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী, প্রসিকিউটর আব্দুর রহমান হাওলাদার ও প্রসিকিউটর ড. তুরিন আফরোজের ঢাকাস্থ বাসায় হামলা করা হয়েছে। লন্ডনে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের উপর হামলা চালানো হয়েছে। তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক আরও বলেন, শুধু সাক্ষীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা ভাবছি না। আমাদের ষ্পষ্ট কথা ট্রাইব্যুনারের সঙ্গে যারা জড়িত তাদের সবার নিরাপত্তার বিধান করতে হবে। প্রসিকিউশন শাখা আশা করছেন সাক্ষীদের নিরাপত্তারসহ ট্রাইব্যুনালের সঙ্গে জাড়িতদের ও নিরাপত্তার ব্যবস্থা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরদের মন্তব্য যেহেতু মানবতাবিরোধী মামলাটি একটি সেনসেটিভ বিষয়। কাজেই এ মামলার সঙ্গে যারা জাড়িত তাদেরকে সতর্কভাবে কাজ করতে হবে। সেখানে যারা কর্মরত আছেন তাদের বিষয়েও সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার। ল্যান্ড সার্ভে মামলা সারাদেশে ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালে প্রায় দুই লাখ মামলা বিচারাধীন রয়েছে। অন্যদিকে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইনে মামলাও জট লেগেছে। বর্তমানে ৬১ জেলায় মোট ১১ লাখ ২৩ হাজার ৮৭৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। ১৯৫০ এর ১৪৫ অ(১) ধারার আলোকে বাংলাদেশে মোট ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সারাদেশে ৪২টি ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনাল তৈরি করা হলেও এর বিপরীতে ১৩টি যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদার বিচারকের পদ সৃজন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২টি ট্রাইব্যুনালে যুগ্ম জেলা জজ পদমর্যাদায় ১২ বিচারকের পদায়ন করা হয়েছে। অন্য ৫২ জেলায় ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালের বিচারের জন্য কোন বিচারক নেই। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সারাদেশের ল্যান্ড সার্ভে ট্রাইব্যুনালগুলোতে মোট ২ লাখ ২৪ হাজার ৮২৩টি মামলা বিচারাধীন আছে। এর মধ্যে ঢাকা জেলায় ৭৯০২, জামালপুরে ১৭৯১৭, সাতক্ষীরায় ৪৯৫৯, গোপালগঞ্জ ৪৮৪০, নোয়াখালী ৪৪৩৯, বাগেরহাট ৪২৮৭, গাইবান্ধা ৭৩০, মৌলভীবাজার ৭২৭, চাঁদপুর ৮৩৮১, সুনামগঞ্জ ১০৬, নেত্রকোনা ২১৯১০, বরিশাল ২৮৪৫, সিরাজগঞ্জ ১০২১, টাঙ্গাইল ৯০৪৫, কিশোরগঞ্জ ৪৩৯৬৫, রংপুর ১৫৯৬, জয়পুরহাট ১০৩০, নিলফামারী ১৬৪, শেরপুর ৬৫৩১, মাগুরা ১৭২১, খুলনা ৪৩২৪, বগুড়া ৪০৮৬, যশোর ৩৫৪৮, কুড়িগ্রাম ৫২০, পিরোজপুর ১৯২১, লালমনিরহাট ১৯৮টি, নড়াইল ৩৬৬, হবিগঞ্জ ১৯১৯, সিলেট ১১৯০, ময়মনসিংহ ৩১৬৫৯, ফরিদপুর ২১৭৬, বরগুনা ৬২২৬, লক্ষ্মীপুর ৩০৯৭, কুমিল্লা ৩৫২৪, ঝালকাঠি ১৪৯৬, ভোলা ৫৭১, শরীয়তপুর ১৫০৩, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া ৪৪৫৪, ঝিনাইদহ ৬৫৫, পাবনায় ৪০৮৬টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে। উল্লেখ্য, ১৯৮৪ সাল থেকে বিআরএস জরিপ শুরু হয়েছে। এখন সারাদেশে এই জরিপ শেষ হয়নি। জরিপের পর্চা আর ম্যাপে হাজার হাজার ভুল। কারণ জমি পর্চায় আছে তো ম্যাপে নেই। ম্যাপে আছে তো পর্চায় নেই। আবার ম্যাপে থাকলেও শত বছর ধরে যে চৌহদ্দিতে মালিক সম্পত্তি ভোগ-দখল করে আসছেন সেভাবে নেই। এভাবে দেখা দিয়েছে নানা ত্রুটি। যার ফলে নতুন নতুন মামলা সৃষ্টি হচ্ছে। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০০১ সালে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন ২০১১ সালে সংশোধনীর পর প্রায় ৯ লাখ মামলা ইতোমধ্যে দায়ের হয়েছে। ২০১৪ সালে মোকদ্দমার বিবরণীতে দেখা যায় যে, ১ জানুয়ারি মোকদ্দমা ছিল ২ লাখ ৪৬ হাজার ১০৭টি। নতুন দায়ের হয়েছে ৫৪ হাজার ৫২৫টি। সর্বমোট ৩ লাখ ৬৩২টি। এর মধ্যে ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১ লাখ ৫৫ হাজার ৩৬টি এবং বিচারাধীন রয়েছে ১ লাখ ৩৩ হাজার ৭০২টি। অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ আইন কার্যকর হলেও এ আইনে দায়েরকৃত মামলাসমূহ বিচার নিষ্পত্তির জন্য কোন বিচারকের পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বিদ্যমান আদালতগুলোতে কর্মরত যুগ্ম জেলা জজ ও সিনিয়র সহকারী জজরা তাদের সাধারণ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে উক্ত মামলাগুলো পরিচালনা করে আসছেন। এছাড়া জেলা জজ ও অতিরিক্ত জেলা জজরা নিজ দায়িত্বে অতিরিক্ত অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যার্পণ আপীল ট্রাইব্যুনালের বিচারকের দায়িত্ব পালন করছেন।
×