ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আরসার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষে নতুন করে শঙ্কা

থামছেই না রোহিঙ্গার ঢল, নৌকাডুবিতে ১৩ লাশ উদ্ধার

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১০ অক্টোবর ২০১৭

থামছেই না রোহিঙ্গার ঢল, নৌকাডুবিতে ১৩ লাশ উদ্ধার

হাসান নাসির/এইচএম এরশাদ ॥ মিয়ানমারে রাখাইন রাজ্যে সক্রিয় আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একতরফা যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ায় নতুন করে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। টুইট বার্তায় দেয়া সংগঠনটির ঘোষণা অনুযায়ী সোমবার রাতেই শেষ তাদের যুদ্ধবিরতি। তবে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সেদেশের সরকার আলোচনা করতে চাইলে তারা সাড়া দিতে রাজি। কিন্তু আরসার ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে আলোচনার কোন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয়নি। ফলে নবসৃষ্ট কোন পরিস্থিতিতে ফের বাংলাদেশ অভিমুখে রোহিঙ্গাঢল আছড়ে পড়ে কিনা সেই আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। কেননা বাংলাদেশে পালানোর চেষ্টারত রোহিঙ্গাদের নিরাপদ পারাপারের সুযোগ করে দেয়া হবে বলে উল্লেখ রয়েছে আরসার বক্তব্যে। সোমবার দিনভর কক্সবাজারের টেকনাফ এবং উখিয়ায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অনুপ্রবেশ অব্যাহত ছিল। রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়ার আশ্বাস থাকলেও সেদেশের সেনাবাহিনীর কর্মকা-ে মোটেও প্রতীয়মান নয় যে, সৃষ্ট সঙ্কট সমাধানে তাদের কোন আন্তরিকতা রয়েছে। সীমান্তে শৈথিল্য থাকায় বাংলাদেশে রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ এখন ঘটছে বিনাবাধায়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকেও বলা হয়েছে, রাখাইনে সহিংসতা বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত মানবিক কারণে সীমান্ত শিথিল রাখা হবে, যাতে বিপদগ্রস্ত রোহিঙ্গারা অন্তত প্রাণে বাঁচতে পারে। এদিকে, উখিয়ার কুতুপালং এবং বালুখালী এলাকায় আশ্রয় নেয়া লাখ লাখ রোহিঙ্গার সুবিধার্থে স্যানিটেশন এবং সুপেয় পানির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে কার্যক্রম এগিয়ে চলেছে। পুরোদমে চলছে নলকূপ এবং টয়লেট স্থাপনের কাজ। এখানে সরকারী উদ্যোগে স্থাপন করা হবে ৩ হাজার নলকূপ এবং ৫ হাজার টয়লেট। এ দুই এলাকার ১২ অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ঘিরে চলছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন সংস্থার ব্যাপক কার্যক্রম। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় উদ্যোগে আজ মঙ্গলবারই শুরু হচ্ছে কলেরার টিকাদান কর্মসূচী। ১০-১৬ অক্টোবরের মধ্যে শেষ করা হবে প্রথম দফায় টিকাদান। শিশু থেকে সব বয়সের রোহিঙ্গাদের কয়েক পর্যায়ে টিকা দেয়া হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ লক্ষ্যে সংগৃহীত হয়েছে ৯ লাখ টিকা। আরসার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ শেষ ॥ আরাকান রোহিঙ্গার স্যালভেশন আর্মি (আরসা) একতরফা যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছিল গত ৯ সেপ্টেম্বর। সে অনুযায়ী ৯ অক্টোবর সোমবার ওই মেয়াদ শেষ হয়েছে। গত শনিবার সংগঠনটির পক্ষ থেকে তাদের টুইট এ্যাকাউন্টে দেয়া এক পোস্টে জানানো হয়েছে, সোমবার রাতেই শেষ হচ্ছে তাদের ঘোষিত যুদ্ধবিরতির সময়সীমা। কিন্তু এ কথাও জানিয়ে দেয়া হয় যে, শান্তি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মিয়ানমার সরকার যদি আলোচনায় আন্তরিক হয় তাহলে তারা সাড়া দেবে। তবে মিয়ানমার সরকার আলোচনার মাধ্যমে সঙ্কটের নিষ্পত্তিতে আন্তরিক না হলে ফের কোন ধরনের আক্রমণের হুমকি প্রদান করা হয়নি। মিয়ানমারে গণমাধ্যম এবং বার্তাসংস্থা এএফপির খবরে জানা যায়, আরসার এ ধরনের ঘোষণার প্রতিক্রিয়ায় মিয়ানমার সরকারের কোন বক্তব্য এখনও পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে কোন মন্তব্য করেননি সুচি সরকারের মুখপাত্র। তবে পূর্ববর্তী বক্তব্যের উল্লেখ করে জানানো হয়, ‘কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের সঙ্গে সরকার সমঝোতায় যাবে না।’ অপরদিকে, এএফপিকে দেয়া এক রোহিঙ্গা নেতার সাক্ষাতকারে উঠে আসে তাদের একটি পরিকল্পনার কথাও। পরিকল্পনাটি হলো, সহিংসতার মুখে আরাকান থেকে পালিয়ে যাওয়াদের মধ্য থেকে ১০০ জনের একটি তালিকা প্রস্তুত করেছে আরসা, যারা মিয়ানমারে গিয়ে ফের পুলিশ ও সেনা ক্যাম্পে হামলা চালাবে। যদি তেমন হয়, তাহলে নতুন করে নির্যাতনের শিকার হতে পারে সেখানে থাকা অবশিষ্ট রোহিঙ্গারা। সেক্ষেত্রে তাদের গন্তব্যও হবে বাংলাদেশ। জাতিসংঘের পক্ষ থেকেও বাংলাদেশে আরও অন্তত ৩ লাখ রোহিঙ্গা আসার পূর্বাভাস রয়েছে। জাতিসংঘের অনুমান এবং আরসার পক্ষ থেকে নিরাপদে বাংলাদেশে প্রবেশের সুযোগ সৃষ্টি করে দেয়ার পরিকল্পনাটি অনেকটাই মিলে যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের সীমান্তে শিথিলতার পাশাপাশি মিয়ানমারে নির্যাতন চলমান থাকায় ঘর-বাড়িহারা রোহিঙ্গারা এখন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়াকেই নিরাপদ ভাবছে। নৌকাডুবিতে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩ ॥ টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ সৈকতে লাশের মিছিল ও নিখোঁজ শিশুদের সন্ধানে অব্যাহত রয়েছে স্বজনদের আহাজারি। জীবিত উদ্ধার হওয়া মায়ের বিলাপে ভারি হয়ে উঠেছে শাহপরীর দ্বীপের বাতাস। মিয়ানমার সরকারী বাহিনীর হাতে নির্যাতিত হয়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসার সময় নাফ নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় সোমবার সকালে ১৩ রোহিঙ্গার মৃতদেহ ভেসে আসে জোয়ারের পানিতে। শাহপরীর দ্বীপ জেটিঘাট, নয়াপাড়া, গোলার চর এবং জালিয়াপাড়া পয়েন্ট থেকে উদ্ধার করা হয়েছে এই ১৩ মৃতদেহ। বিজিবি ও স্থানীয়রা ১৪ জনকে জীবিত উদ্ধার করেছে। তবে এখনও নিখোঁজ আছে ৩৩ জন। খবর পেয়ে বিজিবি সদস্যরা ঘটনাস্থলে গিয়ে রাতেই ৮ জনকে জীবিত উদ্ধার করে। তারা পানিতে ভাসমান অবস্থায় ছিল। রবিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নাফ নদীর শাহপরীর দ্বীপ পয়েন্টের গোলারচর নামক স্থানে নিমজ্জিত হয় নৌকাটি। উদ্ধার হওয়া রোহিঙ্গারা জানিয়েছেন, ওই নৌকায় অন্তত ৬০ যাত্রী ছিল। তার মধ্যে বেশিরভাগই নারী ও শিশু। সাগরে ভাটার সময়ে দমকা হাওয়ার কবলে পড়ে নৌকা উল্টে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। জীবিত ও মৃত অনেককে উদ্ধারের পরও সোমবার বিকেলে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত আরও ৩৩ জনের মতো রোহিঙ্গা নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য ফজলুল হক বলেন, সকালে উদ্ধার হওয়া মৃতদেহগুলো জালিয়াপাড়া ও বাজারপাড়া কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া জীবিত ১৪ রোহিঙ্গা রয়েছে বিজিবির হেফাজতে। সেখানে তাদের চিকিৎসা সেবা দেয়া হচ্ছে। এখনও ওই এলাকায় নিখোঁজদের সন্ধানে কোস্টগার্ড, বিজিবি ও স্থানীয়রা উদ্ধারকাজ চালিয়ে যাচ্ছে। টেকনাফ ২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল এসএম আরিফুল ইসলাম জানান, বিজিবির সদস্যরা রাত ১১টা পর্যন্ত আটজনকে জীবিত উদ্ধার করে। টেকনাফ থানার ওসি মোঃ মাইন উদ্দিন খান জানান, নৌকাডুবির ঘটনায় শিশুসহ ১৩ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও অনেক নিখোঁজ রয়েছে। তাদের উদ্ধার অভিযান চলছে। উল্লেখ্য, গত ২৮ সেপ্টেম্বর উখিয়ার ইনানী সৈকতের কাছে সাগরে রোহিঙ্গাবাহী নৌকাডুবির ঘটনায় ২০ জন মারা যান। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সময়ে নাফ নদী ও সাগরে ট্রলার ও নৌকাডুবির ঘটনায় মোট ১৫৭ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এ পর্যন্ত সাগর ও নাফ নদীতে ডুবে প্রাণ হারিয়েছে ১৯০ রোহিঙ্গা নারী-শিশু। নৌকাডুবিতে সাঁতরে কূলে উঠে আসা মোহাম্মদ জাফর জানান, মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে পরিবারের সাত সদস্যকে নিয়ে বুচিদংয়ের মাইদং পাহাড় পেরিয়ে নাইক্ষ্যংদিয়া আসি। পরে একটি নৌকায় করে প্রায় ৪০ জনের মতো রোহিঙ্গা নিয়ে টেকনাফে আসার পথে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনা বদরমোকাম এলাকার ঘোলারচরে ঢেউয়ের কবলে পড়ে নৌকাটি উল্টে যায়। মা আয়েশা খাতুন, স্ত্রী মাজেদা বেগম ও তিনি কূলে উঠে আসতে পারলেও দুই বোন ও দুই শিশু ছেলে এখনও নিখোঁজ রয়েছে। স্থানীয়রা ধারণা করেছেন, ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি লোক ওঠায় নৌকাডুবির ঘটনা ঘটেছে। এদিকে সীমান্ত এলাকায় সেনাবাহিনীর পুঁতে রাখা স্থলমাইন বিস্ফোরণে হতাহত হয়েছে ১৩ রোহিঙ্গা ও গ্রামবাসী। ইতোপূর্বে ভাটার সময় হেঁটে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্টে ভিড় করত রোহিঙ্গারা। তবে সেনা বাহিনীর পুঁতে রাখা মাইনের ভয়ে এখন স্থলপথ বাদ দিয়ে সাগরপথে নৌকাকে বেছে নিয়েছে রোহিঙ্গা পরিবারগুলো। হাজারো রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষমাণ ॥ সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরে মিয়ানমার অভ্যন্তরে আরও হাজার হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের জন্য অপেক্ষা করছে বলে জানা গেছে। সপ্তাহখানেক ধরে না খেয়ে থাকা এরা খোলা আকাশের নিচে দিনাতিপাত করছে। যাদের টাকা আছে তারা আসতে পারলেও গরিব রোহিঙ্গারা অর্থাভাবে নাফ নদী পেরিয়ে বাংলাদেশে আসতে পারছে না। নৌকার মাঝিরা ছোট বড় প্রতি রোহিঙ্গার কাছ থেকে মাথাপিছু আদায় করছে ৬০ হাজার কিয়েত। নৌকা ভাড়া না পেয়ে নাফ নদীর ওপারে মিয়ানমার অভ্যন্তরে প্রায় ১০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের অপেক্ষমাণ। তাদের সে অপেক্ষার সময়টুকু কাটছে অনাহারে-অর্ধাহারে। তারা এপারে চলে আসা স্বজনদের খবর পাঠাচ্ছে। তবে বাংলাদেশে আসা লাখ লাখ রোহিঙ্গার মধ্যে কে কোথায় আশ্রয় নিয়েছে, তাদের সাম্ভাব্য ঠিকানাও তাদের জানা নেই। নৌকার ভাড়া যাদের ছিল তারা বাংলাদেশে পৌঁছতে সক্ষম হলেও গরিব রোহিঙ্গারা আটকা পড়েছে সীমান্তের বেড়িবাঁধে। রবিবার রাতে রাখাইনের উপকূলীয় এলাকায় ভারি বৃষ্টিপাত ও ঝড়ো হাওয়ায় আশ্রয়সন্ধানী ওসব রোহিঙ্গারা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। অনুপ্রবেশের পথে নাডালা বাহিনীর হামলা ॥ রাখাইনে চলমান নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশের পথে বের হওয়া একাধিক রোহিঙ্গা পরিবারের ওপর হামলা করেছে উগ্রপন্থী দল নাডালা বাহিনী ও মগদের সম্মিলিত গ্রুপ। রবিবার মংডু টাউনশিপের লম্বাবিল, ওয়াসিল্লাপাড়া, মন্নাপাড়া থেকে কিছু রোহিঙ্গা পরিবার বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রা করে। আসার পথে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত এলাকায় স্থানীয় উগ্রপন্থী সশস্ত্র দল নাডালা বাহিনীর সদস্যরা রোহিঙ্গাদের ওপর হামলে পড়ে। ও সময় রোহিঙ্গাদের কাছে থাকা নগদ অর্থ এবং স্বর্ণালঙ্কার ছিনিয়ে নেয়। প্রসঙ্গত, সরকারী মদদপুষ্ট মিয়ানমারে একটি গ্রুপ রয়েছে, এটির নাম নাডালা বাহিনী। এর শাখা রয়েছে পুরো মিয়ানমারজুড়ে। মিয়ানমারে রোহিঙ্গা বিতাড়নের উদ্দেশে সেনা বাহিনীর পাশাপাশি নাডালা বাহিনীও চড়াও হয়েছে তাদের ওপর। গত ২৬ আগস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইনে থেমে নেই সেনা বাহিনীর নির্মমতা। রাখাইনে এখনও কোন না কোন এলাকায় প্রতিদিন জ্বলছে রোহিঙ্গাদের ঘরবাড়ি। রাখাইনে একজন রোহিঙ্গাকেও বসতি করতে দেয়া হবে না- এমন কঠোর মনোভাব নিয়ে উচ্ছেদ অভিযান ও গণবিতাড়ন অভিযান অব্যাহত রেখেছে সেনা বাহিনী। সরকারী বাহিনীর নির্মম অত্যাচারে রোহিঙ্গারা খেয়ে-না-খেয়ে, রোদে পুড়ে গাছের ছায়ায় ও খোলা আকাশের নিচে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের জন্য প্রহর গুনছে। নিবন্ধনের বুথ সংখ্যা বৃদ্ধির উদ্যোগ ॥ ডিসেম্বরের মধ্যে রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিক নিবন্ধন শেষ করার পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। উখিয়া ও টেকনাফের ৩ ক্যাম্পে ৪৮ বুথে প্রতিদিন গড়ে আড়াই হাজার রোহিঙ্গার নিবন্ধন হচ্ছিল। এ সংখ্যা ৯ হাজারে উন্নীত হয়েছে। নিবন্ধনের গতি বাড়াতে বৃদ্ধি করা হচ্ছে বুথ, জনবল ও যন্ত্রপাতির সংখ্যা। সোমবার পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গার নিবন্ধন শেষ হয়েছে বলে জানিয়েছে পাসপোর্ট অধিদফতর। জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর হিসেব মতে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গার সংখ্যা ৫ লাখ ১০ হাজারের বেশি। রোহিঙ্গাদের পরিচয় নিশ্চিত ও তালিকা তৈরির জন্য বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধন শুরু হয় ১২ সেপ্টেম্বর। সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তায় এই নিবন্ধন কাজ করছে পাসপোর্ট অধিদফতর। তিন মাসের মধ্যে নিবন্ধন শেষ করতে বুথ সংখ্যা আরও বাড়ানো হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহম্মেদ চৌধুরী। স্যানিটেশন ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা ॥ মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হাতে দমন নিপীড়ন ও নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে এসে কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের ১২ অস্থায়ী ক্যাম্পে আশ্রয় গ্রহণকারী রোহিঙ্গাদের জন্য সরকারী উদ্যোগে স্যানিটেশন ব্যবস্থা ও সুপেয় পানির উৎস স্থাপন কাজ এগিয়ে চলছে। মানবিক সহায়তার অংশ হিসেবে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে নলকূপ বসানো ও স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট স্থাপন করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে ৩ হাজার নলকূপ এবং ৫ হাজার টয়লেট স্থাপন করা হবে। প্রয়োজন বিবেচনায় দ্রুততার সঙ্গে স্যানিটেশন এবং পানির উৎস সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে কাজ করছে সরকার ॥ সোমবার কর্ণফুলী টানেল প্রকল্পের স্থান পরিদর্শনে আসেন সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, রাখাইন প্রদেশ থেকে জীবন বাঁচাতেই রোহিঙ্গারা পালিয়ে আসছে। মানবিক কারণে সরকার তাদের আশ্রয় দিয়েছে। তাদের সুন্দরভাবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ লক্ষ্যে সরকার কাজ করছে। জাতিসংঘের মাধ্যমে মিয়ানমার সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার প্রক্রিয়াও চলমান বলে জানান মন্ত্রী। পাশাপাশি তিনি এও জানান যে, আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যেন কোন ধরনের সন্ত্রাসী বা অপরাধমূলক কর্মকা-ে জড়িয়ে না পড়ে সে জন্য সতর্ক রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
×