ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাশরাফিকে পেয়ে আত্মবিশ্বাসী মুশফিক

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১০ অক্টোবর ২০১৭

 মাশরাফিকে পেয়ে আত্মবিশ্বাসী মুশফিক

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ টেস্ট সিরিজে শোচনীয় হার, একেবারে বিপর্যস্ত এক বাংলাদেশকে দেখেছে ক্রিকেট বিশ্ব। দলের এমন বিদঘুটে পারফর্মেন্সের পর সবচেয়ে বেশি চাপের মুখে আছেন টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম। দুই টেস্টে উইকেটরক্ষকের ভূমিকা ছেড়ে সাধারণ ফিল্ডার হিসেবে মাঠে থাকতে হয়েছে। টস থেকে শুরু করে মাঠে নেয়া বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে মুশফিকের চিন্তাধারাও ব্যাপক ভ্রুকুটি আর সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। আবার ব্যাট হাতেও চার ইনিংসেই ব্যর্থ হয়েছেন মিডলঅর্ডারের এ নির্ভরতা। এরপরও অনুপ্রাণিত হয়ে উঠেছেন তিনি। কারণ ব্লুমফন্টেইন টেস্টের তৃতীয় দিনই দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। তার নেতৃত্বে গত তিন বছরে বিশ্বের অন্যতম শক্তিধর ওয়ানডে দলে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। দলের প্রতিটি ক্রিকেটারের জন্যও বড় অনুপ্রেরণা মাশরাফি। তাই হারের পরও প্রত্যয় নিয়ে মুশফিক দাবি করলেন মাশরাফি ভাই এসেছেন ওয়ানডেতে আমরা ঘুরে দাঁড়াব। টেস্ট সিরিজে এতটা দুর্দশায় পড়তে হবে সেটা কল্পনা করেনি কেউ। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার পেস আক্রমণের সামনে কোণঠাসা হয়ে পড়া বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ দুমড়ে-মুচড়ে গেছে। প্রথম টেস্টে যতটা খারাপ হয়েছিল তারচেয়ে বেশি বেহাল পরিস্থিতি হয়েছে দ্বিতীয় টেস্ট। অধিনায়ক মুশফিক ব্যাট হাতে এবং তার নেতৃত্ব দেয়ার কৌশলে হয়েছেন দারুণভাবে ব্যর্থ। এ কারণে এখন তার দিকেই সবার অভিযোগের আঙ্গুল। এমনকি অধিনায়কত্ব হারাতে পারেন এমন গুঞ্জন এখন জোরালো হয়েছে। এ বিষয়ে মুশফিক ম্যাচশেষে বলেন, ‘যখন দল অনেক ভাল করে সব কৃতিত্ব হয় টিম ম্যানেজমেন্টের। আর যখন আমরা একটুও ভাল করতে পারি না তখন সব দোষ ঘাড়ে চাপে অধিনায়কের! তবে আমি এটা সইতে পারি। বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে আমার ব্যাপারে। কারণ, পরবর্তী টেস্ট সিরিজের আগে বিশাল একটা সময় পড়ে আছে। এটা এমন একটি বিষয় যা আমার চাওয়াতে হয় না। আমি অধিনায়ক হিসেবে থাকা কিংবা ছাড়ার বিষয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারি না। বোর্ডই সিদ্ধান্ত নেবে এবং আমি নিশ্চিত দলের জন্য সবচেয়ে ভালটাই করবে। দেশ আগে, কোন ব্যক্তি নয়।’ মুশফিক ২০১১ সালে তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হন। তবে ২০১৩ সালের মে মাসে তিনি অধিনায়কের পদ থেকে সরে যাওয়ার পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। সেটা বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) হতে দেয়নি। তবে ২০১৪ সালে মাশরাফি পুরোপুরি ইনজুরি কাটিয়ে নিয়মিত হওয়ার পর সেপ্টেম্বরে ওয়ানডে নেতৃত্ব ছাড়েন মুশফিক। অধিনায়ক হন মাশরাফি। ২০১৪ সালে সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বাজে সময় গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেটে। আর সে কারণেই তিন ফরমেটের নেতৃত্বে চাপ হয়ে যাচ্ছে দাবি করে ওয়ানডের অধিনায়কত্ব ছাড়েন মুশফিক। তারপর থেকে মাশরাফি দায়িত্ব নিলে দলের চেহারাই পাল্টে যায়। একেবারেই অপ্রতিরোধ্য দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। টানা ৬ ওয়ানডে সিরিজ জিতে র‌্যাঙ্কিংয়েও অভূতপূর্ব উন্নতি করে। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে এবং টানা ৬টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দল যার মধ্যে ছিল তিনটি বড় পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাম। এবার ইংল্যান্ডের মাটিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও সেমিফাইনাল খেলে মাশরাফির দল। আর সে কারণেই আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের সেরা অবস্থান ৬ নম্বরেও ওঠে। এখন অবশ্য এক ধাপ পিছিয়ে ৭ নম্বরে আছেন মাশরাফিরা। কিন্তু মাশরাফি একেবারে বিপর্যস্ত দলকে সম্পূর্ণ পাল্টে দিতে পারেন সেই প্রমাণ ২০১৪ সালেই হয়ে গেছে। তিনি দলের ক্রিকেটারদের জন্য বিশাল অনুপ্রেরণা এবং উজ্জীবিত করতে দারুণ পারদর্শী। সেই মাশরাফি এবার ওয়ানডে সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দিতে দক্ষিণ আফ্রিকায় পৌঁছেছেন। টেস্ট সিরিজে ভয়াবহ পরাজয়ের পর তাই ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর ব্যাপারে প্রত্যয়ী মুশফিক, ‘ওয়ানডেতে সাকিব-তামিম খেলবে। তাছাড়া ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি ভাই চলে এসেছেন, এবার আমরা ওয়ানডেতে ঘুরে দাঁড়াব।’ মুশফিকের কথায় বুঝতে বাকি থাকে না মাশরাফি বিন মুর্তজা দলের ক্রিকেটারদের কাছে কতটা ভরসার জায়গা। তবে টেস্ট নিয়ে নিজের হতাশা আটকে রাখেননি মুশফিক। বলেছেন, ‘এরকম প্রত্যাশা করিনি। এমন হার হতাশার। উন্নতির অনেক জায়গা আছে। বিদেশে কিভাবে ভাল করা যায় সেটি আমাদের শিখতে হবে। লিটনের পারফর্মেন্সে আমি অনেক খুশি। ক্যারিয়ারের শুরুতে তাকে খুব সংগ্রাম করতে হয়েছে। এখানে আমরা অনেক কিছুই শিখেছি। যা ভবিষ্যতে ক্রিকেটাররা কাজে লাগাবে বলে আশা করি। আমাদের দলের সেরা দুই ক্রিকোঁর খেলতে পারেনি; যারা এক দশক ধরে বাংলাদেশ দলে ধারাবাহিকভাবে খেলে যাচ্ছে।’
×