ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এবার চ্যালেঞ্জ মাশরাফির

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১০ অক্টোবর ২০১৭

এবার চ্যালেঞ্জ মাশরাফির

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দুর্বিষহ টেস্ট সিরিজ শেষ হয়ে গেছে। দুই টেস্টে খেলা হওয়ার কথা ১০ দিন, সফরকারী বাংলাদেশ দল কাঁটায় কাঁটায় হিসাব করলে খেলতে পেরেছে মাত্র ৭ দিন (প্রথম টেস্টে পঞ্চম দিন প্রথম সেশন এবং দ্বিতীয় টেস্টে তৃতীয় দিন দ্বিতীয় সেশন)। প্রথম টেস্টে ৩৩৩ রানের লজ্জাজনক পরাজয়ের পর দ্বিতীয় টেস্টে হয়েছে শোচনীয় হার। অধিনায়ক মুশফিকুর রহীম নিজে এবং দলকে নিয়ে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন। দল এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এবার পরীক্ষা মাশরাফি বিন মর্তুজার। ওয়ানডে দলকে নেতৃত্ব দেবেন তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে। আরও ৫ দিন বাকি সেজন্য নিজেদের হারিয়ে ফেলা আত্মবিশ্বাস পুনরুদ্ধার করতে। তবে ১৫ অক্টোবর কিম্বার্লিতে প্রথম ওয়ানডেতে নামার আগেই একটি অনুশীলন ম্যাচ খেলে ছোট পরিসরের ক্রিকেটে কতখানি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে দল সেটার পরীক্ষা হয়ে যাবে। টানা ওয়ানডে ক্রিকেটে দুর্দান্ত ফলাফল বের করে আনা দলের সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ এখন মাশরাফির। মাশরাফির নেতৃত্বে ২০১৪ সালের শেষভাগ থেকে দুর্দান্ত খেলে আসছে বাংলাদেশ দল ওয়ানডে ক্রিকেটে। নিজেদের শক্তিমত্তা অন্য দুই ফরমেটের চেয়ে এই ফরমেটে অনেকটাই বেশি তা প্রমাণ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছে এবং টানা ৬টি ওয়ানডে সিরিজ জিতেছে দল যার মধ্যে ছিল তিনটি বড় পরাশক্তি পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার নাম। আপাতত আর কোন শঙ্কা কিংবা বাড়তি চাপ নেই। পুরো বছর ধরেই মাশরাফিদের ওপর একটা বড় চাপ ছিল ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরি খেলার সুযোগ করে নেয়া। সেজন্য নিজেদের ফলাফলটা নিয়ে শঙ্কা কাজ করেছে সবসময়। এবার দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ৩ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে সেই চাপটা থাকছে না। কারণ, ইতোমধ্যেই নিশ্চিত হয়ে গেছে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য ২০১৯ ওয়ানডে বিশ্বকাপে সরাসরিই খেলবে বাংলাদেশ দল। টেস্ট দলটি নিয়ে এবার কিছুটা ভাল করার প্রত্যাশা ছিল সবার। এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে কখনও ভাল করতে পারেনি। কিন্তু ক্রমেই টেস্ট ক্রিকেটে নিজেদের উজ্জ্বল করে মেলে ধরা বাংলাদেশ দল হারলেও ভাল ব্যাটিং-বোলিং করে আগের তুলনায় নিজেদের ভাল দল হিসেবে প্রমাণ করবে। কিন্তু আগের চেয়েও মর্মান্তিক পারফর্মেন্স দেখিয়ে শোচনীয় পরাজয় বরণ করেছে দল। বিদেশের মাটিতে দুর্বলতাটাও ফুটে উঠেছে বেশ ভালভাবেই। অবশ্য, এই সিরিজে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান খেলেননি। দেশসেরা এই ক্রিকেটারকে ছাড়া কোন প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে কতটা বিপর্যস্ত হতে পারে দল সেটার প্রমাণ মিলেছে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে দুই ম্যাচের সিরিজে। এমনকি ইনজুরির কারণে দ্বিতীয় টেস্টে খেলতে না পারা দেশসেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল প্রথম টেস্টে পুরোপুরি ফিটনেস না নিয়েই খেলেছিলেন। ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই তাকে ছাড়া নামতে হতে পারে বাংলাদেশকে। ওয়ানডে দলে মাশরাফির সঙ্গে যোগ দিয়েছেন সাকিব। তাই নিশ্চিতভাবেই শক্তি বৃদ্ধি পাবে বাংলাদেশের। এছাড়া দীর্ঘদিন পর দলে ফিরেছেন ওয়ানডাউন ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক সৌরভ। নতুন মুখ হিসেবে পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন আহমেদ এবং অফস্পিন অলরাউন্ডার নাসির হোসেন আছেন ওয়ানডে দলে। টেস্ট দল থেকে ফলে নতুন করে ৪ জন যোগ হয়ে কিছুটা ভিন্ন চেহারা পাবে বাংলাদেশ দল। এই চেহারাটা বেশ প্রত্যয়ী বাংলাদেশের চেহারা। কারণ, টেস্ট ক্রিকেটে ফলাফল যেমনই হোক বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেটে অবস্থান এখন বেশ শক্ত। তবে টেস্ট সিরিজে এমন হারের পর মাশরাফি দলকে কতখানি অনুপ্রাণিত করতে পারবেন সেটা একটা বড় চিন্তার বিষয়। কারণ, দলটিতে টেস্ট অধিনায়ক মুশফিক থাকছেন এবং আরও ১১ জন থাকছেন ওয়ানডেতে। ইতোমধ্যেই উইকেটরক্ষকের ভূমিকা থেকে বাদ পড়েছেন- টেস্ট সিরিজে কিপিং গ্লাভস ছিল লিটন দাসের হাতে। তিনি দ্বিতীয় টেস্টে দুর্দান্ত ব্যাটিং করে এখন ওয়ানডে দলেও খেলার মতো যোগ্যতার নিদর্শন দিয়ে রেখেছেন। সেক্ষেত্রে ওয়ানডেতেও লিটনকেই উইকেটরক্ষকের ভূমিকায় দেখা যেতে পারে। দলের সমন্বয় ঠিক রাখার জন্য শেষ পর্যন্ত মুশফিককে একাদশের বাইরেই চলে যেতে হতে পারে- কারণ ব্যাট হাতেও এই কন্ডিশনে তিনি দুই টেস্টেই হয়েছেন ব্যর্থ। আগামী ১৫, ১৮ ও ২২ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে খেলবে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ওয়ানডে সিরিজে পেস অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিনকে নেয়া হয়েছে। তিনি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুটি টি২০ খেলে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পদার্পণ করেছেন। এবার ওয়ানডে খেলার অপেক্ষা। টেস্ট খেলা দল থেকে দুই পেসার শফিউল ইসলাম, শুভাশীষ রায় এবং স্পিনার তাইজুল ইসলাম দেশে ফিরে আসবেন। তাসকিন আহমেদ ও রুবেল হোসেন টেস্ট সিরিজে যেমন বোলিং করেছেন তাতে করে সাইফউদ্দিনের ওয়ানডে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল। নাসিরকে নেয়া হয়েছে স্পিন অলরাউন্ডারের ভূমিকায় রাখার জন্য। এর আগে ১৮ ওয়ানডে খেলেছে বাংলাদেশ দল প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে। টানা ১৫ পরাজয়ের পর ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সফরে ২ ম্যাচে হারতে হয়েছে তাদের। একটি ম্যাচ হয়েছে পরিত্যক্ত। সর্বশেষ ওই ২০১৫ সালেই দু’দলের ওয়ানডে মোকাবেলা হয়েছে। এবার টেস্ট সিরিজে বাংলাদেশকে বাজেভাবে হারিয়ে দেয়ার পর উজ্জীবিত দক্ষিণ আফ্রিকা ঘরের মাঠে সেই সিরিজ হারের শোধ কড়ায়-গ-ায় তুলে নেয়ার লক্ষ্যেই নামবে। বিশেষ করে, পেস আক্রমণের বিরুদ্ধে অসহায় বাংলাদেশকে সেটা দিয়েই ঘায়েল করার প্রচেষ্টা থাকবে তাদের। সেটা কতখানি সফল হবে তা বোঝা যাবে বৃহস্পতিবার ব্লুমফন্টেইনে প্রোটিয়া আমন্ত্রণমূলক একাদশের বিরুদ্ধে ৫০ ওভারের প্রস্তুতি ম্যাচের মধ্য দিয়ে। সেই ম্যাচে মাশরাফিদের ওয়ানডে সিরিজে ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াই শুরু হয়ে যাবে।
×