ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বকাপ বাছাই ফুটবল দক্ষিণ আমেরিকা, শেষ রাউন্ডের ম্যাচে বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে মাঠে নামবে প্রতিদ্বন্দ্বী ১০ দেশ, ইকুয়েডরের মাঠে বাঁচামরার লড়াই মেসির আর্জেন্টিনার, সবার দৃষ্টি ব্রাজিল-চিলি, পেরু-কলম্বিয়া, প্যারাগুয়ে-ভেনিজুয়েলা ম্যাচে

বিশ্বকাপে খেলার ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই আর্জেন্টিনার

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১০ অক্টোবর ২০১৭

বিশ্বকাপে খেলার ভাগ্য নির্ধারণী লড়াই আর্জেন্টিনার

জাহিদুল আলম জয় ॥ এমন কঠিন সমীকরণ যে এবারই প্রথম তা নয়। ২০১০ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও এভাবে খাদের কিনারায় ছিল আর্জেন্টিনা। শেষ রাউন্ডে অনেক হিসাব-নিকাশ মিটিয়ে শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের রঙিন মঞ্চে খেলেছিল কোচ দিয়াগো ম্যারাডোনার দেশ। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের বাছাইপর্বেও আগের স্মৃতি ফিরিয়ে এনেছেন লিওনেল মেসি, পাওলো দিবালা, সার্জিও রোমেরোরা। এবার বরং আগেরবারের চেয়ে আরও কঠিন পরিস্থিতি। দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চল থেকে চারটি দেশ বিশ্বকাপের টিকেট পায় সরাসরি। খেলা হয়ে গেছে ১৭ রাউন্ডের। আর বাকি মাত্র এক রাউন্ড। অথচ বিশ্বকাপের টিকেট পেয়েছে মাত্র ব্রাজিল। ইকুয়েডর, বলিভিয়া ও ভেনিজুয়েলা ইতোমধ্যে বাদ পড়েছে। বাকি তিনটি স্থানের জন্য লড়াই হচ্ছে ৬টি দেশ উরুগুয়ে, চিলি, কলম্বিয়া, পেরু, আর্জেন্টিনা ও প্যারাগুয়ের মধ্যে। এই তিনটি বাদেও এশটি দেশ অবশ্য প্লেঅফ খেলার সুযোগ পাবে। এই ৬টি দেশের পয়েন্টের পার্থক্য খুব সামান্যই। এখন শেষ ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে সবকিছু। এখন সবচেয়ে বেশি আলোচিত ও দৃষ্টি আর্জেন্টিনার ম্যাচের দিকে। যে অবস্থা তাতে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। রাশিয়ার টিকেট পেতে হলে অনেক যদি-কিন্তুর হিসাব পেরোতে হবে। এ লক্ষ্যেই শেষ রাউন্ডের ম্যাচে স্বাগতিক ইকুয়েডরের মুখোমুখি হচ্ছে আর্জেন্টিনা। মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটি মাঠে গড়াবে বাংলাদেশ সময় বুধবার ভোর ৫টা ৩০ মিনিটে। এই অঞ্চলের বাকি চারটি ম্যাচও একই সময়ে অনুষ্ঠিত হবে। কারণ প্রতিটি ম্যাচের ফলাফলই প্রভাব ফেলবে অন্য ম্যাচে। যে কারণে আয়োজকরা শেষ রাউন্ডের পাঁচটি ম্যাচের সময় একই করেছে। সবার দৃষ্টি আছে ব্রাজিল-চিলি, পেরু-কলম্বিয়া ও প্যারাগুয়ে-ভেনিজুয়েলা ম্যাচেও। আরেক ম্যাচে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে খেলবে উরুগুয়ে। বর্তমানে ১৭টি করে ম্যাচ শেষে ৩৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে ব্রাজিল। ২৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে উরুগুয়ে। ২৬ পয়েন্ট করে নিয়ে গোলগড়ে যথাক্রমে তিন ও চারে চিলি ও কলম্বিয়া। ২৫ পয়েন্ট করে নিয়ে গোলগড়ে পাঁচ ও ছয়ে পেরু ও আর্জেন্টিনা। ২৪ পয়েন্ট নিয়ে সাতে প্যারাগুয়ে। এখন যে অবস্থা তাতে কি হয় বলা মুশকিল। আর্জেন্টিনা যে ইকুয়েডরের মাঠে জিতবেই তা জোর দিয়ে কেউ বলতে পারছেন না। জিতলেও অন্যান্য ম্যাচগুলোর ফলের দিকে চেয়ে থাকতে হবে। এই ইকুয়েডরের বিরুদ্ধেই ২০১৪ বিশ্বকাপের রানার্সআপ আর্জেন্টিনা বাছাইপর্বের শুরুটা করেছিল দেশের মাটিতে ২-০ গোলে হেরে। শেষ ম্যাচটা গিয়ে খেলতে হচ্ছে তাদের রাজধানী কিটোয়, যে শহরটা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৯৩৫০ ফুট ওপরে। যেখানে আকাশী-নীলদের সবশেষ জয়ের স্মৃতি ২০০১ সালে, ২০০২ কোরিয়া-জাপান বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে। ১৬ বছরের বেশি সময় আগে, ১৫ আগস্ট ২০০১ তারিখে ইকুয়েডরের মাঠে তাদের ২-০ গোলে হারিয়েছিল আর্জেন্টিনা। এরপর ২০০৬ ও ২০১০ সালের বিশ্বকাপ বাছাই, দুইবারই নিজ মাঠে ইকুয়েডর ২-০ গোলে হারিয়েছে আর্জেন্টিনাকে। শুধু ২০১৪ বিশ্বকাপের বাছাই পর্বে এসে হার এড়াতে পারে ম্যারাডোনার দেশ। সেবার ড্র হয় ১-১ গোলে। এই কঠিন ইতিহাস সামনে রেখেই বাঁচামরার মিশনে নামছে দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। এবার বিশ্বকাপ খেলতে হলে ইতিহাস বদলানো ছাড়া উপায় নেই আর্জেন্টিনার। অবশ্য ইকুয়েডরের সঙ্গে ড্র করলেও কিঞ্চিৎ আশা থাকবে মেসিদের। সেক্ষেত্রে শেষ ম্যাচে হারতে হবে পেরু আর প্যারাগুয়েকে। এখন দেখে নেয়া যাক, অঙ্কের হিসাবটা কেমন আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপে যেতে হলে। ব্রাজিল ইতোমধ্যে বিশ্বকাপ নিশ্চিত করেছে। শেষ ম্যাচে চিলির কাছে হারলেও পয়েন্ট তালিকায় তাদের শীর্ষস্থান অটুট থাকবে। তবে ম্যাচটি জিততে পারলে লাভ হবে চিলির। তখন ২৯ পয়েন্ট নিয়ে সানচেজ, ব্রাভোরা শেষ করতে পারবে বাছাইপর্ব। সেক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা তৃতীয় স্থান নিশ্চিত। ২৮ পয়েন্ট উরুগুয়ের, শেষ ম্যাচটি নিজেদের মাঠে বলিভিয়ার বিরুদ্ধে। জিতলে হবে ৩১, সেক্ষেত্রে তাদের দ্বিতীয় হওয়াটা নিশ্চিত। ড্র করলে আর চিলি জিতলেও তাদের দুইয়েই শেষ করার জোরালো সম্ভাবনা। কারণ তখন পয়েন্ট সমান ২৯ হয়ে গেলেও গোলগড়ে এখনও চিলির চেয়ে ৮ ব্যবধানে এগিয়ে আছে সুয়ারেজের দেশ। প্যারাগুয়ের কাছে হেরে বিপাকে কলম্বিয়া। তাদের পয়েন্ট ২৬, শেষ ম্যাচ পেরুর বিরুদ্ধে তাদের মাঠে। পয়েন্ট টেবিলে তাদেও চেয়ে মাত্র ১ পয়েন্ট কম পেরুর, ২৫। অর্থাৎ পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থ ও পঞ্চম দল মুখোমুখি হচ্ছে শেষ দিনে। তাদের ম্যাচের ফলের ওপর নির্ভর করছে অনেক কিছু। কলম্বিয়া জিতলে তাদের পয়েন্ট হবে ২৯, শেষ ম্যাচে আর্জেন্টিনা যদি জিতেও যায় তাহলেও ২৫ পয়েন্টের সঙ্গে আরও ৩ যোগ হয়ে সর্বোচ্চ ২৮ পয়েন্ট অর্জন করা সম্ভব মেসিদের। পেরু-কলম্বিয়া ম্যাচ ড্র হলে দুই দলের পয়েন্ট হবে যথাক্রমে ২৬ ও ২৭। ব্রাজিল-চিলি ড্র হলে চিলির হবে ২৭ পয়েন্ট আর শেষ ম্যাচে প্যারুগুয়ে যদি ভেনিজুয়েলাকে হারিয়ে দেয় তখন প্যারাগুয়েরও পয়েন্ট হয়ে যাবে ২৭। তখন আর্জেন্টিনা জিতলে ২৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ চাওে থেকে সরাসরি বিশ্বকাপে খেলতে পারবে ম্যারাডোনার দেশ। এতকিছুর পর একটা তথ্য, হারলে কিন্তু সরাসরি বাদ আর্জেন্টিনা। খেলা হবে না বিশ্বকাপে। এখন শেষ রাউন্ডের খেলায় সরাসরি অথবা প্লেঅফ হয়ে বিশ্বকাপে যাওয়ার সম্ভাবনা খোলা আছে ৬টি দেশেরই। এখন দেখারÑ কার ভাগ্যে কী ঘটে।
×