ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সে সরকারকে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী দলের সমন্বয়ে হতে হবে ॥ ইসির সংলাপে এরশাদ

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় জাপা

প্রকাশিত: ০৫:২১, ১০ অক্টোবর ২০১৭

অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় জাপা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সংবিধান অনুযায়ী অন্তর্বর্তী সরকারের অধীনেই নির্বাচন চায় সংসদে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। যে সরকার কেবল বর্তমান সংসদের প্রতিনিধিত্বকারী দলগুলোর সমন্বয়ে গঠিত হবে। তবে সংবিধান অনুযায়ী বিএনপি এই সরকারে থাকতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ। তিনি বলেন, বিএনপির জন্য দুঃখজনক ঘটনা হলো তারা অন্তর্বর্তী সরকারের থাকতে পারবে না। কারণ তারা এই সংসদে নেই। এছাড়া সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান এবং নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েনের দাবি জানিয়েছে জাতীয় পার্টি। সোমবার একাদশ জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ইসির সঙ্গে আলোচনা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের বিষয়টি ইসির এখতিয়ারে নেই। তাই তাদের সঙ্গে আলোচনায় অন্তর্বর্তী সরকারের বিষয় নিয়ে কোন আলোচনা করা হয়নি। কমিশনের সঙ্গে আলোচনা করে মনে হয়েছে তারা আগামী নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। তাদের কথা আমাদের বিশ্বাস হয়েছে। প্রতিশ্রুতিবদ্ধ নির্বাচনের মাধ্যমে তারা ইতিহাসের পাতায় নাম লেখাতে চায়। নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন প্রসঙ্গে বলেন, জনগণ মনে করে সেনাবাহিনী মোতায়েন করলে নির্বাচন সুষ্ঠু হবে। তবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়টিও সরকারের এখতিয়ার বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংসদ ভেঙ্গে নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে এরশাদ বলেন, নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের আনুপাতিক প্রতিনিধির সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। দলীয় প্রধানের সুপারিশের ভিত্তিতে অন্তর্বর্তী মন্ত্রিসভায় সদস্য নিয়োগ করতে হবে। বেলা ১১টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদার সভাপতিত্বে এই সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদের নেতৃত্বে দলের ২৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এই সংলাপে অংশগ্রহণ করেন। সংলাপে দলটির পক্ষ থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে মোট ৮ দফা প্রস্তবনা তুলে ধরা হয়। সংলাপ শেষে হুসেইন মোহাম্মদ এরশাদ বলেন, আমার বিশ্বাস বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে। বৃহত দল হিসেবে বিএনপিকে বাইরে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন ঠিক হবে কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে জবাবে এরশাদ বলেন, বিএনপি বৃহত দল কিনা জানি না। বৃহত দল অন্যরা হতে পারে। আমরা হতে পারি। বৃহত দল কে তা জনগণ নির্ধারণ করবে উল্লেখ করেন। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনে দেশে লাখ লাখ রোহিঙ্গা আশ্রয় নেয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রোহিঙ্গা শিবিরে দু’বার গিয়েছিলাম। ত্রাণ দিয়েছি। কিন্তু যত রোহিঙ্গা আসছে, আমাদের জন্য এদের ব্যবস্থাপনা করা কঠিন কাজ হবে। আমি দোয়া করি, প্রধানমন্ত্রী যেন সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এদের পুনর্বাসন করতে পারেন। আগামী নির্বাচন নিয়ে জাতীয় পার্টির ৮ দফা প্রস্তাব নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করতে দিতে হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ওপর অন্তর্বর্তী সরকারের হস্তক্ষেপ করা চলবে না। নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় সারাদেশে সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে হবে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর নির্দিষ্ট সময়ে সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী সব দলের আনুপাতিক প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। নির্বাচনের সিডিউল ঘোষণার পর জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে প্রশাসনে কোন বিতর্কিত কর্মকর্তাকে দায়িত্বে রাখা যাবে না। নির্বাচনী ব্যয় সর্বোচ্চ ২০ লাখ টাকা নির্ধারণ করে- সব খরচ তার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার ক্ষেত্রে কঠোরতা আরোপ করতে হবে। প্রচার কাজের গাড়িবহর সীমিত রাখার বিধান রাখতে হবে। সংসদীয় এলাকার সীমানা নির্ধারণ করতে বারবার সীমানা নির্ধারণ না করে ভোটের আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সীমানা নির্ধারণ করতে হবে। নির্বাচনকালীন সময়ে প্রয়োজনে সংবিধানের ধারা-উপধারা সংশোধন করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সংস্থাপন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়-নির্বাচন কমিশনের অধীনে নিয়ে আসতে হবে। নির্বাচন পদ্ধতি সংস্কারের বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে বিবেচনা করতে হবে। বর্তমানে যে পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাতে সুষ্ঠু নির্বচনের ব্যবস্থা করা খুবই কঠিন ব্যাপার। এই পদ্ধতিতে সন্ত্রাসী, মাস্তান, কালো টাকার মালিক, অর্থ ও বিত্তের জোরে রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দলীয় মনোনয়ন কিংবা নির্বাচনে জিতে আসার সুযোগ রয়ে গেছে। এজন্য নির্বাচন শুধু দলের ভিত্তিতে হতে পারে। অর্থাৎ ভোটাররা দলকে ভোট দেবেন। সরাসরি প্রার্থীকে নয়। প্রত্যেক দল প্রাপ্তভোটের ভিত্তিতে আনুপাতিক হারে সংসদীয় আসনের সদস্য পাবে। গত ২৪ আগস্ট থেকে আগামী নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে ধারাবাহিক সংলাপ শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সঙ্গে সংলাপ সম্পন্ন করেছে। জাতীয় পার্টিসহ সোমবার পর্যন্ত ৪০ নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে ২৬টি দলের সঙ্গে মতবিনিয়ে সম্পন্ন করেছে তারা। আজ মঙ্গলবার আরও দুটি দলের সঙ্গে সংলাপে বসছে নির্বাচন কমিশন। দল দুটির মধ্যে রয়েছে বেলা ১১টায় সাবেক রাষ্ট্রপতি বি চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারা বাংলাদেশ এবং বিকেল ৩টায় ইসলামী ঐক্যজোটের সঙ্গে সংলাপে সময়সূচী রয়েছে। এছাড়াও আগামীকাল বুধবার সকালে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বিকেলে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি; ১২ অক্টোবর সকালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি, বিকেলে গণতন্ত্রী পার্টির সঙ্গে বৈঠক করবে ইসি। ১৫ অক্টোবর বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি, ১৬ অক্টোবর সকালে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, বিকেলে বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), ১৮ অক্টোবর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, ১৯ অক্টোবর সকালে জাতীয় পার্টি (জেপি), বিকেলে লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টির (এলডিপি) সঙ্গে ইসির বৈঠকের সূচী রয়েছে।
×