ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

পটিয়ায় বঙ্গমাতার নামে কেনা ১৮৫ সেলাই মেশিন নষ্টের পথে

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১০ অক্টোবর ২০১৭

পটিয়ায় বঙ্গমাতার নামে কেনা ১৮৫ সেলাই মেশিন নষ্টের পথে

নিজস্ব সংবাদদাতা, পটিয়া, ৯ অক্টোবর ॥ দুঃস্থ মহিলাদের স্বনির্ভর করতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী ও বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছার নামে পটিয়ায় কেনা সেলাই মেশিন দীর্ঘ ৫ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। এসব সেলাই মেশিন টেস্ট রিলিফের (টি আর) অর্থে কেনা হয়েছিল। উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগকে সম্পৃক্ত না করায় প্রকল্পটি পুরোপুরি ভেস্তে গেছে। যার ফলে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ, পটিয়া পৌরসভা ও সরকারী দলের প্রভাবশালী কিছু নেতার কব্জায় সেলাই মেশিন রয়েছে। তার মধ্যে বেশকিছু মেশিনের হদিস নেই। এসব মেশিন দীর্ঘদিন পড়ে থাকায় ঘুনে ধরে নষ্ট হতে চলেছে। ২০১১-১২ অর্থবছরের টেস্ট রিলিফের (টি আর) অর্থায়নে ১৮৫টি সেলাই মেশিন ক্রয় করেন পটিয়ার সরকার দলীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। যা ২০১২ সালের ২৭ জুলাই সংসদ সদস্যের পটিয়ার কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা দুস্থ মহিলা কল্যাণ কেন্দ্র পটিয়ার দায়িত্বশীলদের কাছে বুঝে দেয়া হয়। কিন্তু অদৃশ্য কারণে এসব সেলাই মেশিন পরবর্তীতে এলাকার অবহেলিত ও দুস্থ মহিলাদের প্রশিক্ষণ কিংবা মেশিন হস্তান্তর করা হয়নি। ওই সময় কমিটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী ফেরদৌস জামান ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন আফরোজা বেগম জলি (বর্তমানে বিএনপির নেত্রী)। অসহায় ও দুস্থ মহিলাদের স্বনির্ভর করতে মূলত টি আর প্রকল্পের আওতায় এসব সেলাই মেশিন ক্রয় করা হয়েছিল। এদিকে, বঙ্গমাতার কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এশিয়ান ডেভেলভমেন্ট ও বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানি সমিতির (বিজিএমই) যৌথ উদ্যোগে অসহায় ও দুস্থ নারীদের ফ্রি সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণ কাজ শুরু হয়েছে। যা আগামী ২০ অক্টোবর বিজিএমইএয়ের নেতৃবৃন্দ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করবেন। জানা গেছে, অসহায় ও দুস্থ নারীদের স্বনির্ভর করতে বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা দুস্থ মহিলা কল্যাণ কেন্দ্র পটিয়ায় সেলাই মেশিন প্রশিক্ষণের উদ্যোগ নেন পটিয়ার সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী। যার প্রেক্ষিতে ২০১১-১২ অর্থবছরে টেস্ট রিলিফ (টি আর) বরাদ্দ দিয়ে উপজেলার ১৭ ইউনিয়ন ও প্রথম শ্রেণীর একটি পৌরসভাসহ সর্বমোট ১৮৫ সেলাই মেশিন ক্রয় করেন। তৎকালীন উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আ ক ম শামসুজ্জামান চৌধুরীর সভাপতিত্বে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সরকার দলীয় এমপি নিজেই ফজিলাতুন্নেছা দুস্থ মহিলা কল্যাণ কেন্দ্র পটিয়ার কাছে ১৮৫টি সেলাই মেশিন বুঝে দেন। কিন্তু এসব সেলাই মেশিন অযতœ ও অবহেলায় ৫ বছর ধরে পড়ে রয়েছে। সরকারী অর্থ অপচয় ও বঙ্গমাতার নামে সেলাই মেশিন কিনে ফেলা রাখায় উপজেলা মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সাজেদা বেগম নিজেও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এ বিষয়ে পটিয়া পৌরসভার মেয়র ও পৌরসভা আওয়ামী লীগ সভাপতি অধ্যাপক হারুনুর রশিদ বলেন, বঙ্গমাতা মহিলা কল্যাণ কেন্দ্র পটিয়ার বেশকিছু সেলাই মেশিন পৌর ভবনে পড়ে রয়েছে। তবে কি কারণে মহিলাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে তা তিনি জানেন না বলে জানান। বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানি সমিতি (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ নাছির বলেন, এলাকার অসহায় ও দুস্থ নারীদের স্বাবলম্বী করতে এশিয়ান ডেভেলভমেন্ট ও বিজিএমইএয়ের যৌথ উদ্যোগে ফ্রি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখানে ২ মাসের প্রশিক্ষণ নিয়ে যেকোন গার্মেন্টসে গিয়ে কমপক্ষে ৬ হাজার ২৪০ টাকা বেতনে চাকরি করতে পারবেন। বঙ্গমাতা শহীদ ফজিলাতুন্নেছা পটিয়া কল্যাণ কেন্দ্রের সভাপতি মাজেদা বেগম শিরু বলেন, টেস্ট রিলিফের অর্থে কেনা সেলাই মেশিন পৌরসভা ও উপজেলার বিভিন্নস্থানে পরে রয়েছে। তাছাড়া তিনি (মাজেদা) দায়িত্ব নেয়ার পর বেশকিছু দিন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম হয়েছে বলে জানান। এর পর বিভিন্ন কারণে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। শীঘ্রই সেলাই মেশিনগুলো খোঁজে বের করে পুনরায় প্রশিক্ষণ কাজ শুরু করা হবে।
×