ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

এ্যাপসের বাজারে সুবাতাস বইছে

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ১০ অক্টোবর ২০১৭

এ্যাপসের বাজারে সুবাতাস বইছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ সরাসরি বাংলায় গুগলে এ্যাড দেয়ার বিষয়টি চূড়ান্ত হওয়ার খবরে দেশীয় এ্যাপসের বাজারে সুবাতাস বইতে শুরু করেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ সুবিধা চালু হওয়ায় বাংলা কনটেন্ট বাড়বে, সেখানে এ্যাডসেন্সের এ্যাড থাকবে। ফলে এ্যাপস নির্মাতাদের বিজ্ঞাপনের জন্য আর বসে থাকতে হবে না। তাদের মতে, দেশের তথ্যপ্রযুক্তি পণ্য ও সেবার বাজারের আকার ৮০০ মিলিয়নের মতো। এর মধ্যে ২০ ভাগ এ্যাপস, ওয়েবভিত্তিক পণ্য ও সেবার। সে বাজার বড় হতে শুরু করেছে। গুগলে বাংলা অন্তর্ভুক্তির ফলে আগামী দিনে এ বাজার আরও বড় হবে। ইন্টারনেট পর্যালোচনায় দেখা গেছে, বিশ্বে বর্তমানে ৫ মিলিয়নের বেশি তথা ৫০ লাখের বেশি যোগাযোগভিত্তিক ও সেবাধর্মী এ্যাপস রয়েছে। এর মধ্যে গুগল প্লে-স্টোরে ২৮ লাখ ও এ্যাপল (আইওএস) স্টোরে রয়েছে ২২ লাখ এ্যাপস। এর বাইরে আরও এ্যাপস রয়েছে কিছু জায়গায়। এ্যাপস জিনি পোর্টাল জানাচ্ছে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত প্লে-স্টোরগুলোয় বাংলাদেশের ডেভেলপারদের তৈরি এ্যাপ ছিল ৩ লাখ। যদিও বর্তমানে তা বেড়েছে বলে জানা গেছে। দেশীয় এ্যাপসের বাজার, সমস্যা ও সম্ভাবনার বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এ্যান্ড ইনফর্মেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তাফা জব্বার গুগলে সরাসরি বাংলা অন্তর্ভুক্তির বিষয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের ডিজিটাল পণ্য ও সেবার জন্য এটি ভাল হলো।’ আর এ্যাপসের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে এ্যাপের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক তৈরি হয় না, তা কখনও সফল হতে পারে না। এ্যাপস তৈরির আগে মানুষের সমস্যা ও প্রয়োজনটা বুঝতে হবে। আমাদের দেশে এসব বিশ্লেষণ করে এ্যাপস তৈরি করা হচ্ছে না বলে সে মাপের সফলতা আসছে না। অথচ বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে।’ মোস্তাফা জব্বার আরও বলেন, ‘দেশে এ্যাপস বানানোর সময় দেশের মানুষকে অগ্রগণ্য না ভেবে বিদেশকে টার্গেট করা হয়। অথচ দেশে ১৩ কোটি মানুষ মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। এটাই বিশাল একটা বাজার। নিজেদের বাজার ধরতে পারলেও বড় অভিজ্ঞতা অর্জন হয়। এক্ষেত্রে বাংলা অনেক সহায়তা করতে পারে।’ দেশের এ্যাপস বিষয়ে জানতে চাইলে এ্যাপস নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এমসিসি লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী আশরাফ আবীর জানান, ‘দেশের বেশকিছু এ্যাপস ভাল করছে। আগামীতে এ্যাপসগুলো আরও ভাল করবে।’ এর পেছনে স্মার্টাফোনের ব্যবহার, ইন্টারনেট গ্রাহক বৃদ্ধিকে কারণ হিসেবে তিনি উল্লেখ করে বলেন, ‘দেশে এখনও এ্যাপসের ইকোসিস্টেম তৈরি হয়নি। বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে এ্যাপস নিয়ে পড়াশোনা শুরু করতে হবে, শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের মানসিকতা থাকতে হবে। ইনোভেটিভ হতে হবে। তাহলেই এ্যাপস নিয়ে ভাল কিছু করা যাবে।’ এমসিসি এ পর্যন্ত দুই শতাধিক এ্যাপ তৈরি করেছে। এর মধ্যে মীনা, লেট’স ইট, রূপকথা, পুলিশ স্টেশন (থানা) নামের এ্যাপগুলো বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে। এর মধ্যে মীনা গেমস তো বেশ কিছুদিন গুগলের টপচার্টে ছিল। আশরাফ আবীর জানালেন, ‘এখন পর্যন্ত গেমটি প্লে-স্টোর থেকে সাড়ে চার লাখবার ডাউনলোড হয়েছে। ব্র্যান্ডনেম, ইউনিসেফের পণ্য, চকচকে ঝকঝকে দৃশ্য, চমৎকার আর্টওয়ার্ক ইত্যাদির কারণে মীনা জনপ্রিয়তা পেয়েছে বলে তিনি জানান। আগামীতে চিলড্রেন প্রোফাইল ও মিট মীনা নামে এ্যাপস আসার কথাও জানা গেল। শুধু এ্যাপ তৈরি করাই নয়, নিয়মিতভাবে এ্যাপ ডেভেলপ করা, বিপণন করা, গ্রাহকদের বাজেট বরাদ্দ রাখা এবং এর জন্য পৃথক উইং খোলা না হলে সংশ্লিষ্ট এ্যাপ থেকে সুফল পাওয়া যাবে না। বরং এগুলো করা হয় না বলেই এ্যাপ শিল্পটা প্রকৃত অর্থে এখনও শিল্প হয়ে উঠতে পারছে না। গবেষণা প্রতিষ্ঠান প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান নির্বাহী আরিফ নেজামী বলেন, দেশের এ্যাপস বাজারের অবস্থা ভাল। এখন থেকে আরও ভাল হবে। গুগলে সরাসরি বাংলা এসে গেছে। বাংলায় প্রচুর কনটেন্ট তৈরি হবে। গুগল এ্যাডসেন্স থেকে আয়ও হবে। আরিফ নেজামী জানালেন, কিছুদিনের মধ্যে দেশীয় এ্যাপের বাজারের আকার দ্বিগুণ হয়ে যাবে। যুক্তি হিসেবে তুলে ধরেলেন বাংলার কারণে বাজার বড় হবে। আর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাজার ধরলে তা এক লাফে দ্বিগুণ হয়ে যাবে। তবে প্রেনিউর ল্যাবের প্রধান জানালেন, গুগলের সঙ্গে এ্যাপস বিষয়ক মনেটাইজেশন সমস্যা বড় একটা জটিলতা তৈরি করেছে। গুগল বাংলাদেশে অপারেটর বিলিংয়ের সঙ্গে কানেক্টেড নয়। ফলে এ্যাপ ডেভেলপারদের কোন মার্চেন্ট এ্যাকাউন্ট নেই। এজন্য এ্যাপস বিক্রিও করা যায় না। আর এ কারণে দেশের ডেভেলপাররা প্লে-স্টোর থেকে কোন এ্যাপ ডাউনলোড হলে অর্থ পায় না। এ সমস্যা দূর হয়ে গেলে বাংলাদেশের এ্যাপসই একদিন বিশ্ব মাতাবে। ইন্টারনেট পর্যালোচনায় দেখ গেছে, দেশীয় প্রতিষ্ঠান রাইজ আপ ল্যাবসের তৈরি ট্যাপ ট্যাপ এ্যান্ট এরই মধ্যে কয়েক কোটিবার ডাউনলোড হয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানের তৈরি হাইওয়ে চেজ ছাড়াও এ্যান্ট সিরিজের অন্যান্য এ্যাপও দেশ-বিদেশে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সম্প্রতি মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে জনপ্রিয় এ্যাপ ‘মুসলিম প্রো’ বিক্রি হয়েছে ৮ ডিজিটের আমেরিকান ডলার অঙ্কে। ধারণা করা হচ্ছে, কয়েক কোটি ডলারে বিক্রি হয়েছে এ্যাপটি। সিঙ্গাপুরের সিআইএমএ ক্যাপিটাল পার্টনারস এবং মালয়েশিয়ার আফিন হং এ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট যৌথভাবে এ্যাপটি কিনে নিয়েছে। প্রেনিউর ল্যাব জানায়, বর্তমানে বাংলাদেশে সর্বাধিক ব্যবহৃত এ্যাপগুলো হলোÑ ফেসবুক, ভাইবার, আইএমও, শেয়ার ইট, ক্ল্যাশ অব ক্ল্যান, হোয়াটসএ্যাপ, ইউসি ব্রাউজার, অপেরা মিনি, ক্লিন মাস্টার ও এমএক্সপ্লেয়ার।
×