ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাণ্ডারী

প্রকাশিত: ০৪:১৪, ১০ অক্টোবর ২০১৭

উন্নয়ন ও অগ্রগতির কাণ্ডারী

যে যেভাবে দেখুন আর যেভাবেই বলুন বাংলাদেশের মানুষ ভাল আছে। বাংলাদেশের যে প্রজন্ম আজ বিশ্বের সবকিছু অনায়াসে ভোগ করছে, তাদের জানা উচিত আমাদের সময় জীবন এমন ছিল না। একের পর এক দুঃশাসন আর অন্যায়ের যাঁতাকলে পিষ্ট হয়েছে আমাদের যৌবন। আমরা বড় হয়েছি জিয়াউর রহমানের কঠিন সময়ে। তাঁকে ঘিরে একদিকে দেশ ও সমাজকে পাকিস্তানী করার ষড়যন্ত্র, আরেক দিকে ক্রমাগত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধিতা। এসব এখনকার প্রজন্ম ভাবতেও পারবে না। ভরা যৌবনে আমাদের যখন বিকশিত হবার সময়, আমাদের সামনে যখন নতুন দিনের হাতছানি তখন আমরা পড়েছিলাম এরশাদের হাতে। সে আরেক কাহিনী। তিনি চাপিয়ে দিয়েছিলেন ককটেল সংস্কৃতি। একদিকে পাকি আরেকদিকে ভুল মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস চারিত্রিক বিশৃঙ্খলা। এমন ও ঘটেছে কবিতার মতো কোমল শিল্পকেও এরশাদ তালুবন্দী করে ঘরে বেঁধে রাখতে দ্বিধা করেনি। সেসব কঠিন সময় ভেঙ্গেছে এদেশের ছাত্রজনতা। সে আন্দোলন সে ইতিহাস বা অতীত আজকের তারুণ্য জানে না। তারা ভাবে ছাত্র রাজনীতি বা যৌবনের আন্দোলন মানেই যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা। সেদিন যদি এরা এগিয়ে না আসতো দেশের আজকের এই চেহারা দেখতে হতো না। এরশাদের পর বেগম জিয়া ও বিএনপি না আসলে দেশের চেহারা আরও আগেই অন্য ধরনের হতে পারত। এরা পরপর দুবার দেশ শাসনের ফলে যত জঞ্জাল আর আর্বজনা জমিয়েছিল সেগুলো সাফ করতে সময় লেগেছে। আজকের প্রজন্ম জানে না হরতাল কি, জানে না ধর্মঘটের নামে এদেশে কত অন্যায় আর ভাঙচুর হতো। আমরা দিনের পর দিন ঘরে গৃহবন্দী কাটিয়েছি। না ছিল নেতা, না কোন দিক নির্দেশনা। শেখ হাসিনা না এলে এদেশের ভাগ্যাকাশে পাকিস্তানের চাঁদ ছাড়া আর কিছুই উদিত হতো না। আর সে তাঁকে বা তাঁর দেয়া পদ পদবীকে যারা অসম্মান করে বা পাবার পর অবহেলা করে কিংবা মনে করে ছেলের হাতের মোয়া তাদের নিয়ে! কত রঙ্গ আর কত গুজব। তিনি যদি না চাইতেন বা বাকিদের কথা শুনে পদ না দিতেন সিনহা বাবু কি কোনদিন জীবনে এদেশের প্রধান বিচারপতির পদে আসীন হতে পারতেন? একথা বলি না পদ পাবার অর্থ দালালী বা মোসাহেবি করা। আবার এটাও মানতে হবে পদবী ধারণ করেই আপনি যে পাতে খেলেন সে পাত ছিদ্র করবেন এটা কোন কাজের কাজ হতে পারে না। হঠাৎ করে আইন বিভাগ শাসন বিভাগে এত বিতর্কিত করার কি আসলেই দরকার ছিল? কথা কম কাজ বেশি এই আপ্তবাক্য না মানলে আপনি আইনের লোক হবেন কি করে? আপনি বা আপনার যেখানে দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও তাদের মনে শান্তিতে বসবাসের জন্য নিরাপদ রাখার কথা, সেখানে নানা বিষয়ে সরকারের সঙ্গে বচসায় গিয়ে দেখিয়ে দেন কার কত পাওয়ার! এই পাওয়ার গেইম দেশের মানুষ বোঝে না। জানতেও চায় না। বার বার দেখি একটা জায়গায় এসেই এ জাতীয় প্রক্রিয়া ধরা খায়। ঘুরে ফিরে পাকিদের কথা আসলেই বোঝা যায় রসুনের কোষ আসলে কোথায়? দুনিয়ায় এত দেশ এত উদাহরণ আর এত এত দৃষ্টান্ত থাকার পরও সবাই সামরিক শাসনে প্রায় অকার্যকর পাকিস্তানের কাছেই বাঁধা। তখন আমরাও বুঝে যাই চক্রান্ত থেমে নেই। বলছিলাম এই প্রজন্ম জানে না শেখ হাসিনা আজ তাদের কোন জায়গায় এনে দাঁড় করিয়েছেন। বাংলাদেশের অতীত ভাবমূর্তি আর লেপ্টে থাকা কলঙ্কগুলোর মোচন সহজ ছিল না। তিনি একে একে সব সরিয়ে দিতে পেরেছেন। অথচ এখনও ষড়যন্ত্র চলছে। বিচারপতি বিতর্কে দেখলাম বুঝে না বুঝে এক শ্রেণীর বিবেকহীন মানুষ আর একটি রাজনৈতিক দলের অন্ধ অনুসারীরা না জেনে না বুঝে নর্তন-কুর্দন করছে। কিন্তু কেন? কেন আপনারা অনুমান নির্ভর কথা বলবেন? কোথায় প্রমাণ আছে তিনি এর পেছনে ছিলেন? তিনি এদেশের জনমানুষের নেতা এ যাবত সর্বকালের সেরা প্রধানমন্ত্রী। সেটাই কি আপনাদের গাত্রদাহের কারণ? তাহলে নিজেরাই সাবধান হন। কারণ আপনাদের ষড়যন্ত্রের দিন আগের মতো নেই। তখন দেশ জাতি অনেক কিছু জানতে পারত না। দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগও ছিল কষ্টসাধ্য। ফলে আপনারা যা খুশি করে আমাদের মাতৃভূমিকে বিপদে ফেলতে পারতেন। আজ সে দিন গত। আপনাদের আদরের নেতা বা নেতারা দেশে থাকেন? তাদের জীবনে না আছে কষ্ট, না হারানোর বেদনা শুধু তারা আপনাদের মাথার ওপর বসে আছে ছড়ি ঘোরানোর জন্য। তাদের আসল খায়েশ বা উদ্দেশ্য আবার হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা আর খাম্বা রাজনীতি। কোন কারণে ওই দুঃস্বপ্ন ফেরত আনতে চান আপনারা? কি দেবে তারা এই জাতিকে? সে হিসাব না করে মাথার ওপর বসা লোকগুলোকে দলে টানলেই কি আর না টানলেই বা কি? আমরা দেখছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী যতগুলো বিষয়ে সফলতা অর্জন করেছেন সেখানে শান্তিতে নোবেল পাওয়া না পাওয়া ব্যাপার না। তারপরও তাঁর পাওয়া ছিল অত্যন্ত যৌক্তিক। সঙ্গে এটাও বলব পান বা না পান তাঁকে ঘিরে আনন্দ বা সমর্থন থাকবে কিন্তু বাড়াবাড়ি থাকবে না। তিনি দেশে ফিরেছেন সুস্থ আছেন এটা আমাদের জন্য বড় খবর। এই নিরাপদ ও শান্তির বিষয়টিকে অকারণে প্রশ্নবিদ্ধ করবেন না। মানুষ এতে মন খারাপ করে। তাদের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত করে আপনারা সংবর্ধনার নামে যা করেন তাতে শেখ হাসিনার সম্মান বাড়ে না। তিনি এখন এসবের উর্ধে। খামোখা এসব জটিলতা বা জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে ভোট কমানোর কাজ না করাই মঙ্গলের। তবু একশ্রেণীর অতি উৎসাহী ব্যক্তি-নেতা বিভিন্ন ব্যানারে এসব করে বেড়ায়। বাংলাদেশে এখন কঠিন রোহিঙ্গা সমস্যা চলমান। মিয়ানমার কৌশলে সেটা চাপিয়ে নিজেরা ভাল আছে। একদল অন্ধ মানুষ এ নিয়ে করছে ধর্ম ও সম্প্রদায়ের রাজনীতি। সেখানে শেখ হাসিনার কঠিন ও কোমল ভূমিকা আমাদের দেশকে নিরাপদ রাখতে সচেষ্ট। একদিকে তিনি মানবিক আরেকদিকে সমস্যা নিরসনে কঠোর হতে চাইছেন। এমন সময় তাঁর পাশে না থেকে জাতিকে এই সঙ্কটকালে উত্তরণের নিশানা না দিয়ে রাস্তায় মাতম কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য না। মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী জানেন ঠিকই। তিনি এসব চান না। তাই সাবধানতা আসতে হবে আমাদের কাছ থেকেই। মোদ্দাকথা এই আজকের বাংলাদেশে যারা গণতন্ত্রের জন্য মায়া কান্না করেন, যারা বিচার বিভাগের জন্য আহাজারী করেন বা উন্মাদ হন, তাদের আমরা চিনি। তাদের গোপন খায়েশও অজানা নয়। তাই আমরা চাই শেখ হাসিনার বলিষ্ঠতায় আরও একধাপ এগিয়ে এদেশ প্রবেশ করুক উন্নতির আরও এক সিঁড়ি ওপরে। যেখান থেকে কেউ তাকে টেনে নামাতে পারবে না। উন্নয়ন বা অগ্রগতির বাইরে কথা আর ধ্বংসের কারও যেন জায়গা না হয় বাংলার দেশ শাসনে। এটাই সত্য হোক। [email protected]
×