ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পুঁজিবাজারে নিয়ম ভেঙ্গে বিনিয়োগ

সাত ব্যাংকে জরিমানা

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৯ অক্টোবর ২০১৭

সাত ব্যাংকে জরিমানা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ পুঁজিবাজারে নিয়ম ভেঙ্গে বিনিয়োগসহ বিভিন্ন অসঙ্গতির দায়ে সাত ব্যাংকে জরিমানা করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। তাদের প্রত্যেককে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত জরিমানা করা হয়েছে বলে জানা গেছে। ব্যাংক কোম্পানি আইনের ২৬ (ক) এর ৩ ধারায় তাদের এ জরিমানা করা হয়েছে। রবিবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী বরাবর এ সংক্রান্ত চিঠি পাঠানো হয়েছে। তবে পুঁজিবাজার একটি স্পর্শকাতর বিষয় হওয়ায় এই সাত ব্যাংকের নাম প্রকাশ করতে রাজি হয়নি বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল কেউ-ই। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্র সাত ব্যাংকে জরিমানা করা সংক্রান্ত চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেছে, পুঁজিবাজারের দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিশীলতার স্বার্থে এ ব্যাংকগুলোকে জরিমানা করা হয়েছে; যাতে আগামীতে সবাই সীমার মধ্যে থেকে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে। এদিকে, শেয়ারবাজারে সীমাতিরিক্ত বিনিয়োগসহ বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের জন্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আরও ১৪টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে বলে জানা গেছে। এর মধ্যে ৯টি ব্যাংকের তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। সংশোধিত ব্যাংক কোম্পানি আইন ২০১৩ অনুযায়ী, এককভাবে কোন ব্যাংক তার ইকুইটির ২৫ শতাংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে পারে। আর ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ ও নিজস্বভাবে আদায়কৃত মূলধন, শেয়ার প্রিমিয়াম, সংবিধিবদ্ধ সঞ্চিতি ও রিটেইন্ড আর্নিংসের মোট পরিমাণের ৫০ শতাংশের বেশি কোন ব্যাংক বিনিয়োগ হতে পারবে না। ব্যাংক কর্তৃক অন্যান্য কোম্পানির শেয়ার ধারণের ক্ষেত্রে সামষ্টিক বা এককভাবে কোনো কোম্পানির শেয়ার ধারণের সর্বোচ্চ সীমার বিষয়ে অধিকতর স্পষ্টীকরণের লক্ষ্যে ২০১৪ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করা হয়। বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে অনুসৃত সর্বোত্তম নীতিমালায় ব্যাংক-কোম্পানির মূলধন পর্যাপ্ততাসহ সার্বিক ঝুঁকি পরিমাপ ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে কনসোলিডেটেড (সমন্বিত) ভিত্তি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। সেই আলোকেই পুঁজিবাজারে কোন ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানসহ সমন্বিতভাবে বিনিয়োগ সীমা ৫০ শতাংশ নির্ধারণ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সূত্র বলছে, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের এ সীমা ভঙ্গসহ বিভিন্ন অসঙ্গতিপূর্ণ তথ্যের জন্য প্রায় ২১টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে বাংলাদেশ ব্যাংক। এর মধ্যে ৭টি ব্যাংকের তদন্ত শেষে তাদের এ জরিমানা করা হয়। আরও ৯টি ব্যাংকের তদন্ত প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। ৫টি ব্যাংকের তদন্ত প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। জানা গেছে, নিয়ম ভঙ্গ করে শেয়ারবাজারে আগ্রাসী বিনিয়োগ করায় এর আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অফ-সাইট সুপারভিশন বিভাগ থেকে এ সাত ব্যাংককে কারণ দর্শানো নোটিস দেয়া হয়। ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এ বিষয়ে লিখিত জবাব দেয়া হয়। কিন্তু জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক তাদের এ জরিমানা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্র বলছে, ২০১০ সালে ব্যাংকগুলোর আগ্রাসী বিনিয়োগের কারণে পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। ঐ সময় অভিযোগ ওঠে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিমালা না মেনে অতিরিক্ত বিনিয়োগ করে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো। এর পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাংকের কার্যক্রম শেয়ারবাজার থেকে আলাদা করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে বাণিজ্যিক ব্যাংকের অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের (সাবসিডিয়ারি) বিনিয়োগ সীমাও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারিত সীমার আওতায় আনা হয়েছে।
×