ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাবিতে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ৫ মেধাবীর ভর্তি অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ৯ অক্টোবর ২০১৭

ঢাবিতে সুযোগ পেয়েও অর্থাভাবে ৫ মেধাবীর ভর্তি অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর ॥ বীরগঞ্জ ও কাহারোল উপজেলার ৫ মেধাবী শিক্ষার্থী ‘প্রাচ্যের অক্সফোর্ড’ খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেলেও টাকার অভাবে ভর্তি হতে পারছেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে যে টাকার প্রয়োজন, তা যোগাড় করা ওই ৫ পরিবারের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠছে না। বর্তমানে ৫ শিক্ষার্থী তাকিয়ে আছেন বিত্তবান বা সরকারীর সহযোগিতার দিকে। রুনা আক্তার বীরগঞ্জ উপজেলার ঝাড়বাড়ি প্রসাদপাড়া বাজার গ্রামের নুর ইসলামের মেয়ে। এ বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘খ’ ইউনিটে পরীক্ষা দিয়ে ১৭৫৪তম স্থান অধিকার করেছেন। গ্রামের আর দশ মেয়ের মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল না রুনার। প্রতিনিয়ত অভাব-অনটনের মধ্যে তার বেড়ে ওঠা। দুই বেলা দু’মুঠো খেতে পারাটাই ছিল তার পরিবারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। সেই প্রতিকূল অবস্থায় পড়ালেখা করেই আজ সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছে। রুনার বাবা নুর ইসলাম পেশায় চা বিক্রেতা। ছেলেসন্তান না থাকায় মেয়ে রুনাই দোকানের বিভিন্ন কাজে বাবাকে সাহায্য করত। ভবিষ্যত স্বপ্ন বা ইচ্ছার কথা জানতে চাইলে রুনা জানায়, বিসিএস ক্যাডার হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। একই উপজেলার শতগ্রাম ইউনিয়নের পালপাড়া গ্রামের লেবু পালের ছেলে উদ্ভব পাল। এসএসসি কিংবা এইচএসসি কোনটিতেই জিপিএ-৫ নেই। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাকে পড়তেই হবে। এটা তার স্বপ্ন নয় ছিল আত্মবিশ্বাস। অবশেষে ‘খ’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২১১৩তম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন উদ্ভব। উদ্ভবের বাবা পেশায় কুমার। মাটির হাঁড়ি-পাতিল বিক্রি করে ছেলের ভর্তি ফি জমা করা সম্ভব নয়। তাই সকলের সাহায্য কামনা করেন উদ্ভবের বাবা লেবু পাল ও মা শ্রীমতি পাল। বীরগঞ্জ উপজেলার আরেক মেধাবী শিক্ষার্থী সুমন ইসলাম ‘খ’ ইউনিট থেকে ২২৪৩তম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। সুমন ইসলাম পাল্টাপুর ইউনিয়নের সাদুল্যাহ পাড়ার বজলুর রহমানের ছেলে। বাবা পরিবারের সবাইকে ছেড়ে চলে গেছেন অজ্ঞাত স্থানে। মা রহেদা বেগম চাতাল শ্রমিক। মাকে সহযোগিতা করতে ও নিজের লেখাপড়া চালিয়ে যাওয়ার জন্য মাঝে মাঝে স্কুল-কলেজ না গিয়ে তাকে কৃষি শ্রমিকের কাজ করতে হয়। মা আর চার ভাই বোন নিয়ে তাদের সংসারে অভাব-অনটন লেগেই থাকে। যেখানে সংসার চলাই দায়, সেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার চিন্তা তাদের কাছে আকাশ কুসুম কল্পনা। একই ইউনিয়নের ঘোড়াবান্দ গ্রামের বাসিন্দা হাছিনুর রহমান। ভ্যানচালক সমাজ উদ্দীনের ছেলে হাসিনুর এবার ‘খ’ ইউনিট থেকে ৭৪৮তম স্থান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন। বাবা অসুস্থ হওয়ার কারণে এখন ভ্যান চালাতে পারেন না। হাছিনুরই মানুষের বাড়িতে কামলার কাজ করায় তারা কোনমতে খেয়ে-পরে বেঁচে আছে। তার ভর্তি পরীক্ষার যাবতীয় খরচও দিয়েছেন এক প্রতিবেশী। এ অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে শিক্ষা জীবন চালিয়ে যাওয়ার জন্য বিত্তবান ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান ও সরকারী সহযোগিতার আশায় রয়েছেন হাছিনুর ও তার পরিবার। তার বিশ্বাস কেউ না কেউ তাকে সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসবেনই। দিনাজপুর জেলার আরেকটি উপজেলা কাহারোল। এই উপজেলার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা পিতৃহীন মোহাম্মদ আলী মানুষের বাসায় দিনমজুরের কাজ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। ‘খ’ ইউনিটে মেধা তালিকায় ৬৬৮তম হয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। মোহাম্মদ আলী উচ্চ শিক্ষার জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাওয়ায় মা মসলিমা বেগম খুশিতে দিশেহারা। কিন্তু খুশিতে ভাটা পড়ে সন্তানের ভর্তির ও পড়ালেখার খরচ চালানোর অর্থাভাবে। মোহাম্মদ আলী জানায়, সারাদিন মায়ের সঙ্গে দিনমজুরের কাজ করে রাতে লেখাপড়া করতাম। এইচএসসি পাস করার পর ধরেই নিয়েছিলাম হয়ত আর পড়ালেখা করা হবে না। এ সময় জাহাঙ্গীর নামে স্থানীয় এক বড় ভাইয়ের সহযোগিতায় ভর্তি ফর্ম পূরণ করি এবং পরীক্ষা দেই। মোহাম্মদ আলী জানায়, ২৪ অক্টোবর ভর্তির শেষ সময়। ভর্তি হতে অনেক টাকা লাগবে। মা-ছেলে মিলে দিনমজুরের কাজ করে যে টাকা পাই, তা দিয়ে তাদের সংসার চলে। তাই স্বপ্ন পূরণে বিত্তবান ও হৃদয়বানদের সহযোগিতা কামনা করেছেন মোহাম্মদ আলী।
×