ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ৯ অক্টোবর ২০১৭

হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে সবচেয়ে বড় হারটি হয়ে গেল বাংলাদেশের। ইনিংস ও ২৫৪ রানে হার হলো। ব্লুমফন্টেইনের ম্যাংগাউং ওভালে এত বড় হারে সিরিজ হারতো হলোই, সেই সঙ্গে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশও হলো বাংলাদেশ। হার হলো আবার আড়াইদিনেই। টস জিতে ফিল্ডিং নেয়াই কাল হয়ে দাঁড়াল। আগে ব্যাটিং করার সুবিধা পেয়ে চার সেঞ্চুরির সুবাদে ৪ উইকেটে ৫৭৩ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দক্ষিণ আফ্রিকা। ব্যাট হাতে নেমে প্রথম ইনিংসে ১৪৭ রান করে বাংলাদেশ ফলোঅনে পড়ে। এরপর দ্বিতীয় ইনিংসে খেলতে নেমে ইনিংস হার এড়াতে ৪২৭ রান লাগে বাংলাদেশের। ৪২৬ রানে যে প্রথম ইনিংসেই পিছিয়ে থাকে বাংলাদেশ। এরপর ব্যাট হাতে নেমে ইনিংস হার এড়ানো তো দূরের কথা, ১৭২ রানের বেশি করতেই পারেনি বাংলাদেশ। যখনই বড় জুটি হওয়ার সম্ভাবনা জাগে। তখনই হয় রাবাদা, নয়তো ওলিভিয়ার, নয়তো পরনেল, নয়তো পেহলুকওয়ায়ো আঘাত হানেন। আর পুরো সময়টা জুড়েই তো গতি আর বাউন্সে মাতোয়ারা হয়ে ওঠেন। তাতে করে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা শুরু থেকেই ছন্নছাড়া হয়ে পড়েন। ১৩ রানে সৌম্য, ২৯ রানে মুমিনুল, ৬৩ রানে ইমরুল ও ৯২ রানে মুশফিক আউট হন। এরমধ্যে ওলিভিয়ারের বলটি আবার মুশফিকের মাথায় আঘাত হানে। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগেই মুশফিক আউট হতেই চার উইকেটের পতন ঘটে। মুশফিক আউট হওয়ার পর হাসপাতালে যান। তবে কোন অসুবিধা নেই বলেই নিশ্চিত হন। এদিক দিয়ে মধ্যাহ্ন বিরতির পর যেন বাংলাদেশ শিবিরেও ‘ডায়রিয়া’ লেগে যায়। একের পর এক ব্যাটসম্যান আউট হতে থাকেন। পঞ্চম উইকেটে মাহমুদুল্লাহ ও লিটন মিলে হাল ধরার চেষ্টা করেন। কিন্তু বেশিক্ষণ টিকে থাকা যায়নি। ১৩৫ রানে যখন লিটন আউট হন এরপর ৩৭ রানেই আরও ৫ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ। লিটনের উইকেটসহ হিসেবে নিলে ৩৭ রানে ৬ উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। দক্ষিণ আফ্রিকা পেসারদের দাপটে এমনই দুর্দশায় পড়েছিলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। একটি দল যদি প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট তুলে নিতে না পারে তাহলে কী জেতা সম্ভব? কোনভাবেই না। পোচেফস্ট্রুম টেস্টেও পারেনি বাংলাদেশ। তাই হার হয়েছে ৩৩৩ রানে। তাও প্রথম টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়ানো গেছে। প্রথমবারের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ইনিংস ব্যবধানে হার এড়িয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাটিং করাতেই তা সম্ভব হয়েছে। কিন্তু ব্লুমফন্টেইন টেস্টে তো আগের দশাই হয়েছে। ২০০২ ও ২০০৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজ খেলতে গিয়ে চার টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছিল বাংলাদেশ। ব্লুমফন্টেইন টেস্টেও সেই বেহাল দশা হয়েছে। এবার তো সবচেয়ে বড় হারটিই হলো। এরআগে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ইনিংস ও ২০৫ রানে যে হেরেছিল বাংলাদেশ, সেটিই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বড় হার ছিল। ২০০২ সালে যে ইনিংস ও ১৬০ রানে হেরেছিল বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সেটি সবচেয়ে বড় হার ছিল। এবার সব হারকেই হার মানালো মুশফিকবাহিনী। দুই টেস্টে ২-০ ব্যবধানে হার হলো। বরাবরের মতো দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হোয়াইটওয়াশও হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এ নিয়ে ১২ টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। ৮টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারে। একটি ম্যাচে ৩৩৩ রানে ও আরেকটি ম্যাচে ৫ উইকেটে হারে। দুটি ম্যাচ হয় ড্র। দেশের মাটিতে হওয়া ৬ টেস্টের মধ্যে চারটিতে হারে বাংলাদেশ। তিনটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারে। দুটি ম্যাচ হয় ড্র। আর দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৬ টেস্টের মধ্যে পাঁচটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হারে বাংলাদেশ। একটি ম্যাচে ৩৩৩ রানে হারে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বাংলাদেশের অবস্থা খুবই বাজে। সেটি এবারও প্রমাণ হলো। বরাবরের মতো এবারও টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ।
×