ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দ্বিতীয় টেস্টে আড়াই দিনেই ইনিংস ও ২৫৪ রানে হার মুশফিকবাহিনীর

দ. আফ্রিকায় সেই পুরনো চেহরায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ৯ অক্টোবর ২০১৭

দ. আফ্রিকায় সেই পুরনো চেহরায় বাংলাদেশ

মিথুন আশরাফ ॥ দুইবছর ধরে বাংলাদেশ দল ক্রিকেটে যে সাফল্য পাচ্ছিল তাতে ইনিংস ব্যবধানে হারতো কল্পনাই করা যায় না। সেই কাজটিই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে হয়ে গেল। ব্লুমফন্টেইন টেস্টে ইনিংস ও ২৫৪ রানে হারল বাংলাদেশ। তিনদিন পুরো খেলতে পারল না। আড়াইদিনেই খেলা শেষ হয়ে গেল। তাতে করে দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজে হোয়াইটওয়াশও হলো বাংলাদেশ। পোচেফস্ট্রুম (প্রথম টেস্টে) টেস্টে ৩৩৩ রানের বড় ব্যবধানে হারের পর ব্লুমফন্টেইন (দ্বিতীয় টেস্টে) টেস্টেও ধরাশায়ী হলো মুশফিকবাহিনী। ইনিংস ব্যবধানে হার যেন ভুলেই গিয়েছিল বাংলাদেশ। সাড়ে তিনবছর ধরে সেই হারের খপ্পরে পড়েনি বাংলাদেশ। উল্টো জয়ও মিলছিল। গতবছর ইংল্যান্ডকে হারানোর পর এ বছর শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কিন্তু ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ইনিংস ও ২৪৮ রানে যে হেরেছিল বাংলাদেশ, আবার সেই হারের গোলকধাঁধায় আটকা পড়লো। প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকা যখন ৪ উইকেট হারিয়ে ৫৭৩ রান করে ইনিংস ঘোষণা করে তখনই ইনিংস হারের সম্ভাবনা জেগে ওঠে। তারপরও প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে যে বাংলাদেশ ভাল ব্যাটিং করেছিল, সেই ইনিংস চিন্তা করে ইনিংস হার এড়ানোর আশাও করা হচ্ছিল। কিন্তু এবার আর সেই আশা পূরণ হয়নি। প্রথম ইনিংসেই বাংলাদেশ ১৪৭ রান করে অলআউট হয়ে যায়। ফলোঅনে পড়ে। ৪২৬ রানে পিছিয়ে থাকে। তখনই সবার ভেতর শঙ্কা জেগে যায়, এবার আর ইনিংস হার থেকে রক্ষা পাচ্ছে না বাংলাদেশ। তাই হলো। দ্বিতীয়দিন ফলোঅনে পড়ে আবার ব্যাট হাতে নামে বাংলাদেশের দুই ওপেনার ইমরুল কায়েস ও সৌম্য সরকার। ৭ রানে দিন শেষ করেন দুইজনই। বাংলাদেশের হাতে ১০ উইকেট থাকে। তবে সেটি প্রথম ইনিংসের নয়, দ্বিতীয় ইনিংসের। আর তাই এ ১০ উইকেট নিয়েই বাংলাদেশকে ইনিংস হার এড়াতে হবে। কিন্তু তা যে কতটা কঠিন তা সবাই বুঝে যায়। তৃতীয়দিন মধ্যাহ্ন বিরতির আগেই যখন ৪ উইকেট হারিয়ে বসে বাংলাদেশ, যেন অলআউট হওয়ার অপেক্ষা থাকে। সেই অপেক্ষা শেষ হয় ১৭২ রানে গিয়ে। দ্বিতীয় সেশন শেষ হওয়ার আগেই বাংলাদেশের ইনিংসের অপমৃত্যু ঘটে যায়। দক্ষিণ আফ্রিকার চার ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেন। মার্করাম ১৪৩, প্লেসিস ১৩৫*, আমলা ১৩২ ও এলগার ১১৩ রান করেন। তাতেই রানের পাহাড় গড়ে দক্ষিণ আফ্রিকা। সেই রানে চাপা পড়ে বাংলাদেশ। এমন বিশাল রানকে অতিক্রম করতে হলে দরকার অন্তত দুই ব্যাটসম্যানের বড় ইনিংস। দরকার বড় জুটির। কিন্তু কোনটিরই দেখা মিলেনি। প্রথম ইনিংসে লিটন কুমার দাশ (৭০) শুধু হাফসেঞ্চুরির দেখা পান। দ্বিতীয় ইনিংসে তো তাও মিলেনি। দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ৪৩ রান করা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু তাতে কোন কাজ হয়নি। প্রোটিয়া পেসাররা এমনই গতি আর বাউন্সের খেলায় মেতে ওঠেন যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা কোনকিছুই বুঝে উঠতে পারেননি। ৫ উইকেট নেয়া রাবাদা, ৩ উইকেট নেয়া পেহলুকওয়ায়ো, ১ উইকেট নেয়া পারনেলের গতি আর বাউন্সের সামনেই যেন কাত হয়ে যান বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। কখনও গতির কাছে হার মেনেছেন। কখনও বাউন্সের কাছে। কখনও আবার বাউন্স মনে করে ধোঁকাও খেয়েছেন। মুশফিকই যেমন শর্ট বাউন্সেই কাত হয়েছেন। ওলিভিয়ারের একটি বল তার মাথাতেও আঘাত হানে। ব্যথাও পান। মধ্যাহ্ন বিরতিতে যাওয়ার আগে আউট হতেই হাসপাতালেও যেতে হয় মুশফিককে। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে যেন দলের অবস্থা করুণ হয়ে ওঠে। দুর্দশার চিত্রই ফুটে ওঠে। দক্ষিণ আফ্রিকার উইকেটই যেন ডুবিয়ে দিচ্ছে বাংলাদেশকে। দক্ষিণ আফ্রিকায় খেলা কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকায় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলা আরও কঠিন। তা জানাই ছিল। তাই বলে এমন অবস্থা হবে। বাংলাদেশ দল এখন অনেক সাফল্য পাচ্ছে। দেশের মাটিতে পেয়েছে। বিদেশের মাটিতেও তো পেয়েছে। শ্রীলঙ্কার মাটিতে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েছে। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ভাল ক্রিকেট খেলেছে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে যেন এলোমেলো হয়ে গেছে দল। এমনই পরিস্থিতি, যেন মনের বাঘেই ক্রিকেটারদের খাচ্ছে। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের বলগুলোকে ফেস করা কঠিন। এমন ভীতি যেন ব্যাটসম্যানদের ভেতর ঢুকে গেছে। তা না হলে কি আর এমন দশা হয়। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে এরআগেও ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। এবারের প্রথম টেস্টের আগে যে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে চার টেস্টে খেলেছে বাংলাদেশ, চারটিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে। এবার পোচেফস্ট্রুম টেস্টে সেই ইনিংস ব্যবধানে হার এড়িয়েছে বাংলাদেশ। তবে ব্লুমফন্টেইনে আবারও ইনিংস ব্যবধানে হারই হলো। সেই হারটি আবার দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সবচেয়ে বাজে হার হয়েছে। সবচেয়ে বড় হার হয়েছে। এমন দুর্দশায় এর আগে কখনই পড়েনি বাংলাদেশ। এবার পড়েছে। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ৬ টেস্ট খেলে সবকটিতে হার হলো বাংলাদেশের। এরমধ্যে ৫টি টেস্টেই ইনিংস ব্যবধানে হার হয়েছে। ২০০৮ সালে সর্বশেষ দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছিল বাংলাদেশ। প্রায় ৯ বছর পর আবার খেলতে নামল। এবারও একই দশা হলো। দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনবার দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে সবকটিতে হোয়াইটওয়াশও হলো বাংলাদেশ। এবার তো সবচেয়ে বড় হারটিই হয়ে গেল। আবার সেই পুরনো দুর্দশাগ্রস্ত বাংলাদেশকেই যেন দেখা মিলল।
×