ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মামলা জট ৪

একুশ বছরেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসেননি

প্রকাশিত: ০৫:২১, ৯ অক্টোবর ২০১৭

একুশ বছরেও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসেননি

বিকাশ দত্ত ॥ একটি হত্যা মামলায় ১৯৯৬ সালে মোঃ শহিদুল্লাসহ ১৫ আসামির বিরুদ্ধে ঢাকা ২ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করা হয়। এই একুশ বছরে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আসেননি। এমনকি সাক্ষী হাজির করা হয়নি। ফলে তাদের মামলা শেষ হয়নি। মোঃ শহিদুল্লাহসহ ১৫ আসামির সবাই জামিনে রয়েছে। ১৯৯৪ সালে পুরান ঢাকার সূত্রাপুরে দুই মহল্লার মধ্যে মারামারিতে মাহতাব নামে এক ব্যক্তি খুন হন। এ খুনের ঘটনায় মোঃ জাবেদ বাদী হয়ে সূত্রাপুর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। ২০০০ সালের ৭ নবেম্বর শিপনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। অভিযোগপত্র দাখিলের ৫ বছর পর ২০০১ সালে মামলাটি বিচারের জন্য প্রস্তুত হয়। শিপন গ্রেফতারের পর থেকেই কাশিমপুর কারাগারে আটক ছিলেন। বর্তমানে ঢাকার অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালতে মামলাটি বিচারাধীন। দীর্ঘ ২২ বছর আগের ঘটনায় দায়ের করা হত্যা মামলায় ১৭ বছর ধরে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কারাগারে থাকা মোঃ শিপনকে সম্প্রতি মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত জামিন দিয়েছে হাইকোর্ট। ৪৬২ বন্দীর তালিকা থেকে ৫৮ জনের বিষয়ে উচ্চ আদালতের নজরে আনা হয়। আদালত এই ৫৮ জনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত প্রদান করেছে। এর মধ্যে শুধু শিপনই নয় জামিন পেয়েছেন সেন্টু, চানমিয়া, মকবুল হোসেন, বিল্লাল হোসেন, রাসেল, মোঃ পারভেজ, মাসুদ, লিটন, বাবুসহ ১৬ জন। অন্যদের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি ও কয়েকজনকে চিকিৎসা প্রদানের নির্দেশ প্রদান করা হযছে। শুধু এ সমস্ত ঘটনাই নয় শত বছরের পুরনো মামলা এখন পর্যন্ত নিষ্পত্তি হয়নি। শুধু বদল হয়েছে আইনজীবী। এ প্রসঙ্গে আইন কমিশনের চেযারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক জনকণ্ঠকে বলেন, দুর্বল এফআইআর ,সাক্ষীদের উপস্থিত না করা, দুর্বল চার্জশীট ও বিচারকের স্বল্পতার কারণেই মামলা নিষ্পতিতে সময় লাগছে।দেওয়ানি ও ফৌজদারীর প্রায় ৩২ লাখ মামলা বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে যুগ যুগ ধরে নিষ্পত্তি হচ্ছে না। কেন নিষ্পত্তি হচ্ছে না তা অনুসন্ধানে অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার আইনজীবীগণ তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন। মামলা নিষ্পত্তিতে আইন কমিশন অনেক আগেই আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে ২৭ দফা সুপারিশ দিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ড. শাহদিন মালিক বলেছেন, আমাদের মূল সমস্যা বের করে সমাধান করতে হবে। তা না হলে যেখানে আছি সেখানে থেকে যাব। নতুন নতুন বিচারক নিয়োগ করে কোনভাবেই সমস্যা সমাধান করা যাবে না। দেশের সাবেক প্রধান বিচারপতিসহ সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার ও আইনজীবীদের মতে দুর্বল এফআইআর, দুর্বল চার্জশীট, সাক্ষী উপস্থিত না করতে পুলিশ প্রশাসনের ব্যর্থতা, বিচারকের অপ্রতুলতা, কিছু আইনজীবীর সময়োপযোগী পদক্ষেপ গ্রহণ না নেয়া, হাইকোর্ট থেকে স্টে অর্ডার,রুল দেয়া, সাক্ষী হাজিরে পুলিশ ও এপিপিদের উৎসাহ না থাকা, পদ্ধতিগত এ সমস্ত কারণে দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলা নিষ্পত্তিতে যুগের পর যুগ পার হয়ে যাচ্ছে। এই জট দূর করতে বিচারক নিয়োগের পাশাপাশি সুপ্রীমকোর্টের সঙ্গে পরামর্শক্রমে সৎ ও কর্মঠ অবসরপ্রাপ্ত জজদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ ও পদায়ন করলে পুরাতন বিচারাধীন দেওয়ানি ও ফৌজদারী মামলার শুনানি,আপীল ও রিভিশন মামলাসমূহ দ্রুত নিষ্পত্তি করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে কিছু আইনজীবীর কর্মকা-কেও দায়ী করা হয়েছে। তাদের কারণে অনেক মামলা নিষ্পত্তিতে দীর্ঘ সময় লাগছে। কিন্ত আইনজীবীগণ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছেন, পদ্ধতিগত কারণে মামলা দীর্ঘ জটযুক্ত হচ্ছে। সনাতনি পদ্ধতিগত কারণে মামলা জট বেড়ে যাচ্ছে। অনেক মামলার সংশ্লিষ্ট পক্ষদের মতে নোটিস জারি হয় বছরের বছর বিলম্বে। অপরদিকে নোটিস জারি যথাযথ না হবার কারণে পুনরায় নোটিস জারি করতে হয়। সংশ্লিষ্ট সেকশনে নোটিস জারি হয়ে ফেরত আসায় পরে ভুল নথিতে এ বিষয় উল্লেখ করে নোট প্রদান করা হয় না। জারির তথ্য সেকশনেই পড়ে থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে হারিয়েও যায়। এ কারণে মামলা শুনানির জন্য প্রস্তত হতেই দীর্ঘবিলম্ব হয়। পুনরায় মামলা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে স্বয়ংক্রিয়ভাবে আদালতের শুনানির তালিকায় অন্তর্ভুক্ত অনিবার্য হলেও তা করা হয় না। আদালতের এখতিয়ার পরিবর্তন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুনরায় সেকশনে চলে যায়। নতুন করে তালিকা অন্তর্ভুক্ত করতে শুনানি শেষে দীর্ঘ সময় লেগে যায়। তাই শুধু আইনজীবীদের অভিযুক্ত করা যুক্তিযুক্ত নয়। উচ্চ আদালতসহ নিম্ন আদালতে প্রায় ৩২ লাখ মামলা জটে পড়েছে। এর মধ্যে নিম্ন আদালতে রয়েছে প্রায় ২৮ লাখ মামলা। উচ্চ আদালতে রয়েছে প্রায় ৪ লাখ মামলা। প্রতিবছর অন্তত চার শত বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন ॥ মামলা নিষ্পত্তিতে যুগের পর যুগ কেটে যাচ্ছে। এ বিষয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক তার দীর্ঘ সময়ের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, আমরা যদি বিদেশের দিকে তাকাই তা হলে কি দেখতে পাই। যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ১০ হাজারে ১জন বিচারক রয়েছেন। ভারতে ৬৭ হাজারের বিপরীতে ১ জন বিচারক। ওদের টার্গেট ২০ জনের জন্য একজন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া। আর আমাদের এখানে ১ লাখ ৪২ হাজারের বিপরীতে একজন বিচারক রয়েছেন। আমাদের বিচারকের সংখ্যা খুবই কম। প্রতিবছর অন্তত ৪ শ’ করে বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন। একটা জজের ডায়রিতে ৫০টি মামলা থাকে। ২টি করতে পারেন। আইনজীবী ওই ৪৮টি মামলার জন্য সময় চাইতেই পারেন। মামলা জট থেকে পরিত্রাণ পেতে হলে জজ নিয়োগ আর তার পাশাপাশি ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করা দরকার। বিচারক নিয়োগ দিলেই হবে না। এক থেকে দুই বছর তাদের ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। ট্রেনিংয়ের কোন বিকল্প নেই। ট্রেনিংয়ে পাস করতে হবে । তা না হলে আবার ট্রেনিং। নিম্ন আদালতে আমাদের জজদের সংখ্যা কম। সারা বিশ্বের তুলনায় আমাদের বিচারকরা বেশি মামলা নিষ্পত্তি করে থাকেন। কিছু লিমিটেশন আছে তার মধ্যে টাইপিস্ট ও কম্পিউটার অন্যতম। সহকারী জজসহ প্রত্যেক বিচারকের জন্য একজন করে দক্ষ স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ দিতে হবে। উচ্চ আদালতের বিচারপতি নিয়োগের বিষয়ে তিনি বলেন, উচ্চ আদালতে যথেষ্ট বিচারপতি আছে। যেখানে বিচারপতি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মামলার সংখ্যাও বাড়ছে। হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা বাড়ানোর বিষয়টা প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। তিনি বলেন, দেওয়ানি মামলা বছরের পর বছর পড়ে থাকে। জজ সাহেব রায় শেষ করতে পারেন না। অনেক সময় হাইকোর্ট থেকে স্টে হয়ে থাকে। মামলা ধীরগতি হওয়ার আরেকটা কারণ উচ্চ আদালত থেকে স্টে পাওয়া। এখন সবাই মনে করেন হাইকোর্টে গেলে স্টে হয়ে যাবে, রুল হয়ে যাবে। এমন অভিযোগও আছে ৬৪ জেলার অনেক জজ ঠিকমতো অফিস করেন না। বৃহস্পতিবার হলে তারা ঢাকায় চলে আসে। এটা বন্ধ করতে হবে। পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকতে হবে। সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (বিচার ও প্রশাসন ) মোঃ সাব্বির ফয়েজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, বর্তমানে প্রায় ৩২ লাখ মামলা রয়েছে। যার মধ্যে উচ্চ আদালতে প্রায় ৪ লাখ। মামলা নিষ্পত্তিতে বড় কারণ সাক্ষী না আসা। পুলিশ ঠিকমতো সাক্ষীদেরকে হাজির করতে পারেন না। অন্যদিকে দেওয়ানি মামলা নিষ্পত্তিতে বড় কারণ আইনজীবী। অনেক আইনজীবী মামলা জিইয়ে রাখে না। ফলে মামলা নিষ্পত্তি হতে যুগের পর যুগ পার হয়ে যায়। এই মুহূর্তে মামলা জট কমাতে নিম্ন আদালতে আরও বিচারক নিয়োগ করা প্রযোজন। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি ॥ সুপ্রীমকোর্টের লিগ্যাল এইড কমিটি গত বছরের ১৬ নবেম্বর বিচারের দীর্ঘ সূত্রতার কারণে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারে আটক বন্দীদের তালিকা চেয়ে দেশের সকল কারাগারে চিঠি পাঠায় । ঐ চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ ডিসেম্বর আইজি প্রিজন বিভিন্ন কারাগারে ৫ থেকে তদুর্ধ সময়ে বিচারাধীন আটক বন্দীদের তালিকা সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটিতে পাঠায়। ঐ তালিকায় মোট ৪৬২ বন্দী রয়েছেন। এ তালিকা থেকেই দীর্ঘদিন যাবত কারাগারে বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে যারা আটক আছেন তাদের বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আনছেন লিগ্যাল এইড কমিটির আইনজীবী। বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম ও জেবিএম হাসানের হাইকোর্ট বেঞ্চ শিপনকে জামিন দেন। তার মামলাটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির জন্য বিচারিক আদালতকে নির্দেশ প্রদান করেন। আদালত আদেশে বলেছে, সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রের দায়িত্ব দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি করা। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র এবং আদালত ব্যর্থ হয়েছে। এটা আমাদের সকলের জন্য লজ্জাকর। এই দায় রাষ্ট্রের এবং বিচারকের। হাইকোর্ট আদেশে বলেছে, এই মামলার পিপি মামলা নিষ্পত্তি করতে উদ্যোগ নেবেন। যদি নতুন করে কোন তথ্য-প্রমাণ না পাওয়া যায়, তাহলে যে তথ্য-প্রমাণ আছে তার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেছে হাইকোর্ট। ইতমধ্যে হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ বিচারের দীর্ঘসূত্রতার কারণে কারাগারে আটক ১৬ জনকে জামিন প্রদান করেছে। তারা হলেন ঢাকার শিপন, মতিঝিলের সেন্টু , মাদারীপুরের মকবুল, কুমিল্লার বিল্লাল, নারায়ণগঞ্জের সুমি আক্তার, কুষ্টিয়ার রাসেল শেখ, বাড্ডার সাইদুর রহমান, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোঃ পারভেজ, মতিঝিলের মাসুদ, নেত্রকোনার লিটন, গাজীপুরের বাবু,যশোরের অপুর্ব দাস, ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোঃ দানা মিয়া, সাতক্ষীরার আসাদুল ওরফে আছা, নারায়ণগঞ্জের সাজু মিয়া ,ঢাকার ইমরান ওরফে ইসমাইল ওরফে মুসা, চট্টগ্রামের সত্যাজিত পাল। দুই আসামির মামলা ৬০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দিয়েছে আদালত। এরা হলেন ঢাকার শিপন ও চান মিয়া। ১২ জনের মামলা ৯০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন,মতিঝিলের সেন্টু , মাদারীপুরের মকবুল হোসেন, কুমিল্লার বিল্লাল হোসেন , নারায়নগঞ্জের শাহনাজ বেগম,গাজীপুরের রজিয়া সুলতানা,ঢাকার সাইদুর রহমান ও রাজীব হোসেন,মৌলবীবাজারের ফারুক হোসেন,পাবনার কাইলা কালাম, নাটোরের মোঃ আবদুল খালেক,সাতক্ষীরার আসাদুল ওরফে আছা, নারায়ণগঞ্জের সাজু মিয়া । ৫ জনের মামলা ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তারা হলেন ব্রাক্ষণবাড়িয়ার মোঃ সেলিম মিয়া, হবিগঞ্জের রাজু জগনাথ, সুনামগঞ্জের বসির উদ্দিন, ঝিনাইদহের মোঃ হায়দার আলী, পিরোজপুরের মোঃ রফিকুল ইসলাম রাজা । হাইকোর্টে বিচারপতির পাশাপাশি মামলার পরিসংখ্যান ॥ উচ্চ আদালতে পাহাড়সম মামলা বিচারাধীন থাকলেও বর্তমান আপীল বিভাগ ও হাইকোর্টে প্রধান বিচারপতিসহ মোট ৮৯ বিচারপতি রয়েছেন। এর মধ্যে হাইকোর্টে ৮৩ এবং আপীল বিভাগে ৬ জন। এক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, হাইকোর্টে একজন বিচারপতির হাতে গড়ে ১৪০০ এবং নিম্ন আদালতে একজন বিচারকের হাতে গড়ে ৩১০০টি মামলা থাকে। কোনভাবেই একজন বিচারপতির পক্ষে নিষ্পত্তি করা সম্ভবপর নয়। ২০০১ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত হাইকোর্টের বিচারপতি ও মামলার পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০০১ সালে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত হাইকোর্টে বিচারপতির সংখ্যা ছিল ৫৬, ্তার বিপরীতে মামলা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ২৮০টি। ২০০২ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৫৫ আর মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৩৫ হাজার ৮৭৯টি, ২০০৩ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৫৭,মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৫৪ হাজার ১৬৮টি, ২০০৪ সালে বিচারপতির সংখ্যা ৭২ আর মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪৭টি, ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৭২ আর মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৮৪ হাজার ৮১১টি, ২০০৬ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৬৯ আর মামলার সংখ্যা ২লাখ ৮ হাজার ৩৮৯টি, ২০০৭ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৬৫ আর মামলার সংখ্যা ২লাখ ৪০ হাজার ৪৭৯টি, ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৬৭, মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৬২ হাজার ৩৪৫ টি, ২০০৯ সালে ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৭৮, মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৯৩ হাজার ৯০১টি, ২০১০ সালে ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯৪ আর মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৭১টি,২০১১ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯৫, মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭৩৫টি, ২০১২ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ১০১ আর মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৭৯হাজার ৪৩৬টি, ২০১৩ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯৫, মামলার সংখ্যা ২ লাখ ৯৭ হাজার ৭৩১টি, ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯০ আর মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ২৩ হাজার ৪৪৬টি এবং ২০১৫ সালের ১জানুয়ারি বিচারপতির সংখ্যা ৯৭ আর মামলার সংখ্যা ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮টি। এক নজরে উচ্চ আদালতের মামলা ॥ উল্লেখ্য, জনসংখ্যার পাশাপশি মামলাও দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। সে তুলনায় নিষ্পত্তি কম হচ্ছে। যার ফলে প্রতিদিন নতুন করে জটে যুক্ত হচ্ছে মামলা। এর সংখ্যা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। ২০১৭ সালের জানুয়ারি হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত উচ্চ আদালত ও নি¤œ আদালতে প্রায় ৩২ লাখ মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে আপীল বিভাগে বিচারাধীন ১৩ হাজার ৯২টি মামলা। হাইকোর্ট বিভাগে ৪ লাখ ৩১ হাজার ১৯৪টি। ২০১৫ সালের ১ জুলাই থেকে ৩০ সেপ্ট্ম্বের পর্যন্ত উচ্চ আদালতে (আপীল ও হাইকোর্ট বিভাগ) এখন বিচারাধাীন মামলার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ১৭ হাজার ৭২টি। এর মধ্যে আপীল বিভাগে (দেওয়ানি ও ফৌজদারি ) মোট ১২ হাজার ৪৬২টি। অন্যদিকে হাইকোর্ট বিভাগে তিন মাসে ৩ লাখ ৮৯ হাজার ৩১০টি মামলা বিচারাধীন। ২০১৪ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত আপীল বিভাগে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ছিল ১৫ হাজার ৩৪৬টি। আর হাইকোর্ট বিভাগে ছিল ৩ লাখ ৬১ হাজার ৩৮টি। সূত্র মতে, ২০০৭ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্র্যন্ত হাইকোর্টে বিচারাধীন ছিল ২লাখ ৬২ হাজার ৩৪৫টি। পরের বছর ২০০৮সালের ৩১ডিসেম্বর সে সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২লাখ ৯৩হাজার ৯০১টি। ২০০৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর মামলার সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ২৫ হাজার ৫৭১টিতে। এর মধ্যে ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ১লাখ ৯৯ হাজার, দেওয়ানি ৮০ হাজার ২৮৮টি। ২০০৮ সালে হাইকোর্টে দায়ের হয় ৫২ হাজার ৫৯০টি মামলা। এর মধ্যে দেওয়ানি মামলার সংখ্যা ৬ হাজার ৭২৮টি। এবং ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৮৬২টি। ২০০৯ সালে নতুন মামলা জমা হয় ৫২ হাজার ৪৮৮টি। এর মধ্যে দেওয়ানি ৭ হাজার ৩২টি। রিট ও ফৌজদারী মামলার সংখ্যা ৪৫ হাজার ৪৫৬টি। আইন কমিশনের সুপারিশ ॥ মামলা জট নিরসনে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান সাবেক প্রধান বিচারপতি এবিএম খায়রুল হক অনেক পূর্বেই আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক স্থায়ী কমিটিতে ২৭ দফা সুপারিশ পেশ করেছেন। গুরুত্বপূর্ণ সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে (১) জরুরীভিত্তিতে কয়েক ধাপে ৩ হাজার নতুন জজ নিয়োগ। প্রতি জেলা সদরে নতুন এজলাস কক্ষ নির্মাণসহ ভৌত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সমগ্র বিচার ব্যবস্থাকে ডিজিটালাইজ করা। সহকারী জজসহ প্রত্যেক বিচারকের জন্য একজন করে দক্ষ স্টেনোগ্রাফার নিয়োগ দিতে হবে। বিচারকদের নিজ হাতে সাক্ষীর জবানবন্দী রেকর্ড করার পরিবর্তে কম্পিউটার টাইপ চালু করা দরকার। (২) একাধিক তদন্ত প্রতিবেদনে দেখা গেছে, অধিকাংশ বিচারক সকাল সাড়ে নয়টায় এজলাসে ওঠেন না এবং অনেকে দ্বিতীয়ার্ধেও ওঠেন না। বিচারিক কাজের জন্য নির্ধারিত সময়টুকু যদি বিচারিক কাজে ব্যয় করা নিশ্চিত করা যায় তবে মামলার জট কিছুটা হলেও কমতে বাধ্য। সে ক্ষেত্রে প্রতিকূল পরিবেশে সান্ধ্যকালীন আদালত চালু করার আদৌ প্রয়োজন হবে না। (৩) দেওয়ানি রুলস ও অর্ডারসের ১২৫ নং রুল অনুযায়ী এবং ফৌজদারী রুলস ও অর্ডার্সের ৩৩নং রুল অনুসারে মামলার চূড়ান্ত শুনানির দিনে সাক্ষ্য গ্রহণ আরম্ভ হলে সকল সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ না হওয়া পর্যন্ত দিনের পর দিন সাক্ষ্য গ্রহণ চলতে থাকবে। শুধু জরুরী কারণে মামলাটি স্বল্প সময়ের জন্য মুলতবী করা যেতে পারে। অধিকাংশ বিচারকই উল্লেখিত রুলের বিধান অনুসরণ করেন না। (৪) দেওয়ানি রুলস ও অর্ডারস এর ৫০০ নং অনুয়ায়ী জেলা ও দায়রা জজ ও সমপর্যায়ের জেলা জজদের কর্মস্থল ত্যাগ করতে হলে তাদেরকে অবশ্যই হাইকোর্ট ডিভিশনের রেজিস্ট্রারের নিকট লিখিতভাবে জানাতে হবে। উল্লিখিত বিধানটি ব্যাপকভাবে লংঘিত হচ্ছে। লক্ষ্য করা যাচ্ছে জেলা জজ পর্যায়ের বেশ কিছু বিচারক প্রতি বৃহস্পতিবার কোর্ট আওয়ারে কর্র্তৃপক্ষের অগোচরে কর্মস্থল ত্যাগ করেন এবং পরের রবিবার দুপুর নাগাদ কর্মস্থলে হাজির হন। এর ফলে বিচার কাজে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার প্রতি সপ্তাহে জেলা জজদের নিকট থেকে কর্মস্থল ত্যাগের জন্য কদাচিত কোন দরখাস্ত পান। মাঝে মাঝে ছুটির দিনে জেলা জজদের বাসায় টেলিফোন করে খোঁজখবর নিয়ে দৃষ্টান্তমূলকভাবে তাদের শোকজ করলে এ ধরনের অবৈধ কর্মস্থল ত্যাগের ঘটনা কমে যাবে। অন্যদিকে সুপীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগে বর্তমানে প্রায় ৪লাখ মামলা বিচারাধীন। উক্ত নিষ্পত্তির জন্য বর্তমানে ৮৩ বিচারপতি কর্মরত। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় বিচারক বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মামলার সংখ্যাও সমানতালে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অস্বাভাবিক বলে প্রতীয়মান। উচ্চ আদালতে মামলা জট কমাতে আইন কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছে। (১) প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে একটি মনিটরিং সেল থাকবে যা প্রধানত মামলা দাখিল ও নিষ্পত্তির সংখ্যা কি কি কারণে বৃদ্ধি পাচ্ছে তা নিরূপণ করে পদক্ষেপ নেবে। (২)সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণে বিচারপ্রার্থীগণ যাতে কোন টাউট বা দুনীতিবাজ কর্মচারীর খপ্পরে না পড়েন তা নিয়ন্ত্রণের জন্য রেজিস্ট্রারকে সজাগ দৃষ্টি রাখতে হবে। (৩) কোন দেওয়ানি,ফৌজদারী মোশন দরখাস্ত বা সিআর পিসি এর ৫৬১ এ ধারামতে দরখাস্ত দাখিল করলে বিচারপতিগণ প্রথমেই তার মেরিট যাচাই করবেন। মেরিটবিহীন দরখাস্ত হলে অবশ্যই সরাসরি খারিজ করবেন। (৪) নিম্ন আদালতের কোন বিচারাধীন মামলার কার্যক্রম অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করলে অনিবার্যভাবে নিম্ন আদালত,উচ্চ আদালত ও উভয় আদালতেই মামলার জট সৃষ্টি হয। এ ব্যাপারে বিচারকগণকে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।
×