ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সাহিত্যে নোবেল

প্রকাশিত: ০৫:১০, ৯ অক্টোবর ২০১৭

সাহিত্যে নোবেল

আন্তর্জাতিক পুরস্কারগুলোর মধ্যে নোবেল শ্রেষ্ঠ পুরস্কার হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে প্রায় শুরু থেকেই। যারা এই পুরস্কার অর্জন করেন সমকালে তাদের স্ব স্ব ক্ষেত্রের অন্যতম সেরা ব্যক্তিত্ব হিসেবেই বিশ্ববাসী সম্মান ও মান্য করে, শ্রদ্ধার আসনে বসায়। বিজ্ঞানের কয়েকটি শাখার নোবেল পুরস্কার, এমনকি শান্তি পুরস্কারও অনেক সময় একই বছরে একাধিক ব্যক্তিকে প্রদান করা হয়ে থাকলেও সাহিত্য পুরস্কার সবসময়েই একজন সৃষ্টিশীল সাহিত্যিককেই দেয়া হয়। বিজ্ঞানের কোন উদ্ভাবনে একাধিক বিজ্ঞানীর অবদান থাকলেও থাকতে পারে। কিন্তু সাহিত্য একক ব্যক্তির সৃষ্টিকর্ম। তাছাড়া সাহিত্য হলো গোটা মানবজীবন এবং অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যত তথা বহমান মহাকালকে কেন্দ্র ও উপজীব্য করে রচিত এক অনবদ্য উপহার। যা অবধারিতভাবে দেশ-কালের সীমাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েই উপস্থাপিত হয়। এটাও অস্বীকার করা সম্ভব নয় যে সাহিত্যিক হলেন সেই ব্যক্তি যাকে মানুষ ভালবেসে তার হৃদয়ে চির আসন দেয়। তাছাড়া সৃজিত সাহিত্য একক ব্যক্তির একান্ত সৃষ্টি হলেও নোবেলবিজয়ী লেখকের জন্মভূমি কিংবা তার নাগরিকত্বের দিকটি মানুষের কাছে বিশেষ মূল্য পায়। আরও স্পষ্ট করে বললে বলতে হবে, লেখক যে ভাষায় সাহিত্য রচনা করেন, সেই ভাষাটিও যেন পুরস্কৃত হয় লেখকের সঙ্গে-সঙ্গে। সবদিক বিবেচনা করলে এটা বলতেই হবে, সাহিত্যে নোবেল কে পাবেনÑ এ নিয়ে বছরভর, কখনও বা বছরের পর বছর ধরে আলোচনা ও প্রতীক্ষা চলতে থাকে। এমনকি এ নিয়ে বাজিও ধরা হয়। সাহিত্যবোদ্ধারা নানা কৌণিক বিশ্লেষণ থেকে সম্ভাব্য বিজয়ীদের একটা সংক্ষিপ্ত তালিকা উপস্থাপন করে থাকেন পুরস্কার ঘোষণার আগে আগে। প্রায় সময়েই এই তালিকার বাইরের কেউ পুরস্কার লাভ করেন। বিশেষ করে গত কয়েক বছর ধরে লক্ষ্য করা যাচ্ছে নোবেল কমিটি সাহিত্যের শাখাকে বিস্তৃতভাবে দেখার একটি দৃষ্টিভঙ্গি পাঠকদের সামনে উপস্থিত করতে চাইছেন। এমন একটি বাস্তবতায়, যেখানে গীত-রচয়িতা কিংবা মানবিক প্রতিবেদনধর্মী লেখার প্রতিবেদকও পুরস্কৃত হচ্ছেন, সেসময়ে এই অমূল্য পুরস্কারের বিজয়মাল্য কার গলায় পরানো হবে এ নিয়ে আগাম ধারণা দেয়া কিছুটা কঠিন হয়ে উঠেছে বৈকি। গত বৃহস্পতিবার সাহিত্যে নোবেল ঘোষণার পর পর্যবেক্ষকরা এই ভেবে স্বস্তি পেলেন যে, নোবেল কমিটি বড় ধরনের কোন চমক দেননি। পুরস্কার দেয়া হয়েছে একজন উপন্যাস লেখককে। অর্থাৎ মূল ধারাতেই ফিরে এলো এই অসামান্য সাহিত্য পুরস্কারটি। তবে উপন্যাসের আঙ্গিক অধুনা বদলে যাচ্ছে। এবারের নোবেলজয়ী জাপানী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেখক কাজুও ইশিগুরোর লেখা উপন্যাস সেই আঙ্গিকগত পরিবর্তনেরই প্রয়াসী। উপন্যাস সম্পর্কে তার অভিমত : ‘আমরা এই মুহূর্তে পাঠের পৃথিবীতে একটা আকর্ষণীয় এবং উত্তেজনাকর সময়ে এসে পৌঁছেছি। সাহিত্যের নানা ধারার ভেতরকার দেয়াল এখন ধীরে ধীরে উঠে যাচ্ছে। আমি মনে করি পপুলার সাহিত্য, সিরিয়াস সাহিত্য, সায়েন্স ফিকশন, ফ্যান্টাসি, ডিকেটটিভ, লিটেরেরি সাহিত্য এসব নানা ধারার ভেতরকার তথাকথিত দেয়ালগুলো ভেঙ্গে একটা আরেকটার ভেতর ঢুকছে। বিশেষ করে তরুণ লেখক-পাঠকরা এসব মিশিয়ে ফেলবার ক্ষেত্রে এখন একেবারেই সংস্কারমুক্ত ।’ এবার একেবারে ভিন্ন ধরনের ঔপন্যাসিক নোবেল পেলেন, যিনি লেখায় অস্তিত্ববাদ নিয়ে সঙ্কট আর কল্পবিজ্ঞানের সংশয়বাদের সম্মিলন ঘটিয়েছেন। সঙ্গত কারণেই নেবেলজয়ী লেখকের রচনার দ্রুত অনুবাদ হয় ব্যাপকভাবে। কাজুও ইশিগুরো আগে ম্যানবুকার পুরস্কার জিতলেও বাংলাদেশের বৃহত্তর পাঠক সমাজে তিনি প্রায় অপরিচিত একজন লেখক। ফলে পাঠকরা এবার তার সম্পর্কে আগ্রহী হবেন এবং বাংলা ভাষায় বিশ্ব কথাসাহিত্যের এক নবতর ধারার সংযুক্তি ঘটবে। এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশ ও বাংলা ভাষার জন্য সুসংবাদ। নোবেলবিজয়ী লেখক কাজুও ইশিগুরোকে আমাদের অভিনন্দন।
×