ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বসানো হবে ৫০ হাজার সিসিটিভি, খরচ হবে ৫ হাজার কোটি টাকা

ডিজিটাল নিরাপত্তার আওতায় আসছে গোটা রাজধানী

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ৯ অক্টোবর ২০১৭

ডিজিটাল নিরাপত্তার আওতায় আসছে গোটা রাজধানী

আজাদ সুলায়মান ॥ গোটা রাজধানীকে আনা হচ্ছে ডিজিটাল নিরাপত্তার আওতায়। নিñিদ্র নিরাপত্তা ও উন্নত সেবা নিশ্চিত করতেই ৫ হাজার কোটি টাকার এই বিলাসবহুল প্রকল্প। ইতোমধ্যে অর্থ বরাদ্দের জন্য অনুমোদন দিয়েছে অর্থমন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর তা পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হবে। সেখান থেকে যাবে একনেকে। তারপরই শুরু হবে বহুল আলোচিত এই প্রকল্পের কাজ। ঢাকা সিটি ডিজিটাল মনিটরিং সিস্টেম নামে এই প্রকল্পের আগাগোড়া সবটাই বাস্তবায়ন করবে ঢাকা মহানগর পুলিশ। এর আওতায় গোটা রাজধানীতে বসানো হবে ৫০ হাজার ক্লোজড সার্কিট টেলিভিশন ক্যামেরা (সিসিটিভি) যা দিয়ে ২৪ ঘণ্টা মনিটর করা হবে। এতে রাজধানীতে ইচ্ছে করলেও কেউ কোন ধরনের অপরাধ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাকে ফাঁকি দিতে পারবে না। গোপনে রাস্তার কোণে একখ- সন্দেহজনক পলিথিনের ব্যাগ পড়ে থাকলেও সেটা ১০ মিনিটের মধ্যেই চলে যাবে সেন্ট্রাল কমান্ড সেন্টারে। মুহূর্তেই রেড সিগন্যাল চলে যাবে সংশ্লিষ্ট থানায়। তারপর ছুটবে টহল টিম। কোন কিছু ঘটার আগেই তা উদ্ধার করাও সম্ভব হবে। এভাবেই গোটা রাজধানীতে গড়ে উঠবে নিñিদ্র নিরাপদ বলয়। জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জমান খান কামাল জনকণ্ঠকে বলেন, এটি এখনও সূচনালগ্নে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এ প্রকল্পটি নিয়ে কাজ করছে। চূড়ান্ত অনুমোদনের পর তা প্ল্যানিং কমিশন হয়ে একনেকে যাবে। তবে এ ধরনের ডিজিটালাইজড সিস্টেমের আওতায় আনা দরকার রাজধানীকে। এটি আরও অনেক আগেই করা উচিত ছিল। গোটা রাজধানীতে একটি সিস্টেমে আনা গেলে এর সুফল পাবে নগরবাসী। কী থাকছে এই বিলাসবহুল প্রকল্পে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, নিউইয়র্ক কিংবা প্যারিসের মতোই চব্বিশ ঘণ্টাব্যাপী সিসিটিভির আওতায় রেকর্ড করা হবে গোটা রাজধানীর কর্মকা-। ৪৯ থানা এলাকায় স্থাপন করা হবে ৫ হাজার সিসিটিভি, যা চব্বিশ ঘণ্টা মনিটর করা হবে সেন্ট্রাল সার্ভারে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের সদর দফতরে থাকবে এর মনিটরিং সেল। এখানে পালাক্রমে ডিউটি করবেন আইটি এক্সপার্ট। গোটা রাজধানীর প্রতিটি এলাকার ভিডিও ফুটেজ জোন ভিত্তিক মনিটর করা হবে। প্রতিটি সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ ছাড়াও থাকবে অটো এলার্ট ও সিগন্যালিং সিস্টেম। এতে বিশেষ সফটওয়ারের মাধ্যমে প্রায় শতাধিক ইভেন্ট কোড থাকবে। যেমন রমনা থানার কোন একটা নির্দিষ্ট সড়কে কোন ধরনের সন্দেহজনক, আপত্তিকর কোন বস্তু, ব্যাগ, অস্ত্র গোলাবারুদ বা পরিত্যক্ত যানবাহন দীর্ঘক্ষণ ধরে পড়ে থাকলে তা কন্ট্রোলরুমে সিগন্যাল পাঠাবে। এ ফুটেজ রিভিউ করে টহল টিমে গাইড ম্যাপ দিয়ে সেখানে পাঠানো হবে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়ার জন্য। একইভাবে কোথাও হঠাৎ সন্ত্রাসী কর্মকা-ে কোন ধরনের জমায়েত দেখা দিলে তাৎক্ষণিক সিগন্যাল যাবে কন্ট্রোলরুমে। যা নিয়ন্ত্রণের পরবর্র্তী কার্যক্রম নেয়া হবে সফটওয়ারের নির্দেশিত পন্থায়। এ ধরনের প্রায় একশ কোড সফটওয়ারে থাকবে। জানা যায়, এ প্রকল্পের আওতায় ক্যামেরা ও সার্ভিলেন্স ডিভাইস চালু হলে কমপক্ষে ৫৫০ জন প্রশিক্ষিত ও দক্ষ জনবল এর সরাসরি দায়িত্বে থাকবে। তারাই পালাক্রমে সর্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখবেন গোটা রাজধানীতে স্থাপন করা ৬০ বিশাল মনিটর। এতে থাকবে ৫ ধরনের ক্যামেরা-বুলেট ক্যামেরা, ডোম ক্যামেরা, পিটিজেড ক্যামেরা, চেকপয়েন্ট ক্যামেরা এবং ট্রাফিক মনিটরিং ক্যামেরা। প্রথম দফায় ১৬ হাজার ক্যামেরা স্থাপন করা হবে, বাকিগুলো পর্যায়ক্রমে লাগানো হবে। এ প্রকল্পের আওতায় পুলিশ আলাদা ব্যান্ডউইথ পাবে, যা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দ্যে সার্ভিলেন্স ক্যামেরা ও ১২ হাজার ইমপ্রোভাইজড ওয়্যারলেস সেটে ভিডিওফুটেজ প্রেরণ করতে সহায়ক হবে। এ বিষয়ে ইতোমধ্যে পুলিশ সদর ও বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন্স রেগুলেটরি কমিশনের বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হয়েছে।
×